বিএনএ,চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, অর্থ বিত্ত নয়, আমার কাছে মুখ্য বিষয় হলো জনগণ ও নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা। জীবনে কখনো আদর্শচ্যুত হয়ে অনৈতিক পথে পা বাড়ায়নি। মেয়রের চেয়ারে বসেও কোন দুর্নীতি ও অসততার আশ্রয় নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব হবে না।
সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামের ইনিঞ্জনিয়ার্স ইনস্টিটিউাশন হলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ উপলক্ষে সুধী সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামকে নিয়ে আমার স্বপ্নের কথা আমি নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করেছি। সেই অনুসারে সবার বুদ্ধি পরামর্শকে বিবেচনায় নিয়ে নগরীর সব সেবাসংস্থার মধ্যে সমন্বয় করে নগারিকসেবা কার্যক্রম চলমান রাখবো। আমি চেষ্টা করবো চট্টগ্রামকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রত্যাশা পূরণের।
তিনি বলেন, মেয়র নির্বাচিত হয়েছি মানে চট্টগ্রাম শুধু মেয়রের নয়। প্রিয় এই চট্টগ্রাম নগরী সকল চট্টগ্রামবাসীর। নগরবাসীর প্রত্যাশা ও প্রধানমন্ত্রীর আস্থা বিশ্বাসের সেই মূল্য আমি নাগরিকসেবা দিয়ে পূরণ করতে চাই।
অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, নগরকে সুন্দর করতে নাগরিকদেরও দায়িত্ব নিতে হবে। নয়তো নবনির্বাচিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সফল হতে পারবেন না। নবনির্বাচিত মেয়র প্রিয় এই নগরকে সন্ত্রাস, জলাবদ্ধতামুক্ত পরিচ্ছন্ন রূপে সাজাবেন এটাই প্রত্যাশা করি।
সংসদ সদ্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, নতুন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ত্যাগী রাজনীতিক। আমার প্রত্যাশা চট্টগ্রামের স্বার্থে ও উন্নয়নের তাগিদে তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্যদের মাঝে মাঝে ডেকে আলাপ-পরামর্শ করবেন।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃদপিণ্ড। তাই চট্টগ্রামকে নিয়ে ভাবতে হবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য মেয়রের ভূমিকা আছে। তাই নতুন মেয়রকে চট্টগ্রাম নগরীর স্বার্থে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। মেয়রকে তাঁর সমস্যাগুলো সবার সাথে শেয়ার করতে হবে। মেয়র ডাকলে সব সেবাসংস্থা যাতে আসেন এর নিশ্চয়তা চাই।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম হচ্ছে দুধেল গাভী। চট্টগ্রাম দুধ দেয়, বাংলাদেশ তা খায়।আজকে অনুষ্ঠানের আলোচকরা এখানে নগর সরকারের কথা বলেছেন। এই প্রস্তাব আমি ৩০ বছর পূর্বে দিয়েছিলাম। তখন কর্পোরেশনে কাউন্সিলর ছিলো তিন ধরনের। নির্বাচিত, অফিসিয়াল ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর। তখন অফিসিয়াল কাউন্সিলররা অর্থ্যাৎ নগরীর সেবাসংস্থার প্রধানদের চসিকের সাধারণ সভায় আসা লাগতো। এখন কেন আসেন না! তাদের আসাটা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ কেন করা হবে? এর সুরাহা হওয়া চাই। ঢাকায় পৌর করের হার ১৪% হলে চট্টগ্রামের পৌরকর ১৭% আদায় কেন হবে এর মিমাংসা হওয়া উচিত। তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের সম্মান মানে চট্টগ্রামের সম্মান উল্লেখ করে নগরীর স্বার্থে নবনির্বাচিত মেয়রের পদ মর্যাদা পূর্নমন্ত্রীর সম ও কাউন্সিলরদের পদমর্যাদা উপ-সচিবের সম করা উচিত বলে উল্লেখ করেন। যে আইন পাশ হয়েছে তিনি মেয়র থাকাকালে বলেন, নবনির্বাচিত মেয়র ও তাঁর নির্বাচিত পর্ষদকে স্মরণ করিয়ে দেন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সদ্য বিদায়ী প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, আমি দায়িত্ব পেয়ে ৬ মাস চেষ্টা করেছি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে ঢেলে সাজাতে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনুধাবন করলাম চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাছে খালি প্রত্যাশা করলে হবে না। কর্পোরেশনকে সক্রিয় করতে গেলে সরকারিভাবে চসিকের কর্তৃত্ব আইন করে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তিনি বলেন, রেজাউল করিম ভাই পরিক্ষীত। আমার প্রত্যাশা তিনি পৌরকর বাড়িয়ে কর্পোরেশনের আয় বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন না। নগরীর অধিবাসীদের মধ্যে মাত্র ২০ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষ এই শহরের উপকারভোগী। বাকি ৮০ থেকে ৭০ শতাংশ সুবিধা নিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর, রেলওয়ে, কাস্টমস, ওয়াসাসহ অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক বীমা স্টীল রিরোলিং মিলসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন নগরে ৩০ হাজার ভারি যানবাহন চলে। এ শহরে ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা হয় মূলত বন্দর কাস্টমস কেন্দ্রিক। অথচ শহরের সড়কগুলো ভারি যানবাহন লরি চলাচলের উপযোগী করে তৈরি করা যাচ্ছে না। কারণ অর্থের অভাব। তাই নগরবাসীর উপর পৌরকরের বোঝা চাপিয়ে নয়, নগরীর অবকাঠামোগত উন্নয়নে সরকারি বড় বড় প্রতিষ্ঠান ও বেসরাকরি প্রতিষ্ঠান থেকে ১ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। এই টাকাতেই চট্টগ্রাম অপরূপ সুন্দর নগরে পরিণত হবে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী নতুন মেয়রকে তাঁর ঘরের দুয়ার সর্ব সাধারনের জন্য উম্মুক্ত রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন আপনি জনগণের ও নগবাসীর মেয়র।
সুধী সমাবেশের পরপরই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নব নির্বাচিত মেয়র মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী বিকেল ৩টায় টাইগারপাসে চসিকের অস্থায়ী অফিসে গিয়ে কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হকের কাছ থেকে কর্পোরেশনের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দায়িত্বভার গ্রহণের পরই কনফারেন্স রুমে চসিকের বিভাগীয় প্রধানদের সাথে সভায় বসেন নতুন মেয়র । সভায় কর্পোরেশনের সকল বিভাগীয় প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন। এসময় মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীলতার সাথে তাদের দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনার আহ্বান জানান। যাতে নাগরিকসেবা কার্যক্রম নগরবাসীর দোরগোড়ায় দ্রুত পৌঁছানো সম্ভব হয়।
বিএনএনিউজ/মনির