।। সৈয়দ সাকিব।।
বিএনএ, রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগের ২৬তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৮ সেপ্টেম্বর। সম্মেলন শেষ হওয়ার ২৬ দিন পেরিয়ে গেলেও কমিটি দিতে পারেনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
শাখা ছাত্রলীগের ২৬তম সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে আগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই নেতৃত্ব বিহীন ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ এই সাংগঠনিক ইউনিট।
প্রায় ৭ বছর আগে রাবি ছাত্রলীগের ২৫তম বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর। সম্মেলন শেষ হওয়ার দুই দিন পরই ১১ ডিসেম্বর গোলাম কিবরিয়াকে সভাপতি এবং ফয়সাল আহমেদ রুনুকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
জানা গেছে, এর আগের কমিটিগুলো ঘোষণার ক্ষেত্রে সম্মেলনের পরদিন কিংবা রাতেই শীর্ষ নেতৃত্বদের নাম জানিয়ে দেওয়া হতো।
গত কমিটির দপ্তর সম্পাদক আবুল বাশার আহমেদ বলেন, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের মত এত বড় একটা সাংগঠনিক ইউনিটের গত ২৬ দিন ধরে কমিটি বিহীন থাকাটা, যেকোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বা যেকোন দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাকে প্রবল করছে।”
রাবি ছাত্রলীগ খারাপ একটা সময় পার করছে উল্লেখ করে আবুল বাশার জানান, “রাবি ছাত্রলীগের ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা। একজন সাবেক দপ্তর সম্পাদক হিসেবে যতটুকু জানি, ইতিপূর্বে সম্মেলনের পর কমিটি দেওয়ার ক্ষেত্রে এত সময় নেওয়া হয়নি। শীর্ষ নেতৃত্বের নাম প্রকাশ করতে এত সময় লাগারও কোনো যৌক্তিকতা নেই।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি হলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি থাকলেও, সম্মেলনের দিন নেতা-কর্মীদের তেমন একটা উপস্থিতি চোখে পড়েনি। শাখা ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে রাবি ছাত্রলীগ।
কমিটি না থাকায় ভেঙ্গে পড়েছে চেইন অব কমান্ড। সম্প্রতি মন্নুজান হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারজানা শশী ফেসবুকে লাইভে এসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সাংবাদিকদের নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করেন—যা দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। তোপের মুখে পড়ে, এক পোস্টে লাইভে দেয়া বক্তব্য প্রত্যাহার করেন ছাত্রলীগের এই নেত্রী।
এর আগে, রহমতুন্নেসা হল ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না তন্নীকে ছাত্রত্ব শেষ হওয়ায় হল ছাড়ার নির্দেশ দেন প্রভোস্ট। আগেরদিনে দেওয়া নির্দেশনা না মেনে, হল ছাত্রলীগের কয়েকজন নেত্রীকে নিয়ে গেটে তালা দেন তন্নী।
শাখা ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো নেতা না থাকায় এসব ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন নেতা-কর্মীরা। ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অভিভাবক ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার ৭৭ তম জন্মদিনেও হল ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ছিল না কোনো প্রোগ্রাম বা মিছিল।
এ বিষয়ে রহমতুন্নেসা হল ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না তন্নি বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে ছোট পরিসরে আয়োজন করেছি। তবে ১৭টি হলেই যেহেতু পূর্ণাঙ্গ কমিটি আছে, আমরা সবাই একত্রিত হয়ে একটি আনন্দ মিছিল এবং সংক্ষিপ্ত সমাবেশের আয়োজন করতে পারতাম। এটি না হওয়াটা সত্যিই দুঃখজনক।”
এদিকে, সম্মেলন শেষ হওয়ার প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও শাখা ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় অনেকটাই হতাশ পদপ্রত্যাশী নেতারা; কর্মীদের মধ্যেও আছে চাপা ক্ষোভ।
পদপ্রত্যাশী নেতাদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “এত সময় যে কি কারণে লাগছে আমরা জানিনা। সাংগঠনিক স্থবিরতা কাটানোর জন্য দ্রুত কমিটি ঘোষণা করা উচিত।”
গুঞ্জন আছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মধ্যে মতপার্থক্য থাকায় কমিটি ঘোষণা করতে দেরি হচ্ছে। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে; রাবি ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের নাম ঘোষণা করার ক্ষেত্রে আর কোনো বাঁধা নেই।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, “যেকোনা সময় রাবি ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হবে, আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। যেহেতু রাবি শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ছিলনা, তাই সাংগঠনিকভাবে হয়তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে বিশেষ কোনো প্রোগ্রাম বা মিছিল হয়নি। তবে, পদপ্রত্যাশী নেতারা ব্যক্তিগতভাবে কিছু আয়োজন করেছে।”
বিএনএ নিউজ /এমএফ