28 C
আবহাওয়া
৭:৩৭ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কেন গোপন করা হয়েছিল শেখ হাসিনার ফ্লাইট পথ ও অবস্থান?

কেন গোপন করা হয়েছিল শেখ হাসিনার ফ্লাইট পথ ও অবস্থান?


শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজটি গত ৫ আগস্ট ঢাকা ছাড়ার সময় একটি প্রশিক্ষণ ফ্লাইট হিসেবে উড্ডয়ন করে এবং এর ফ্লাইটপথ ও অবস্থান অন্যদের না জানাতে ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে দেয়।
১৪ সেপ্টেম্বর ডেইলী ষ্টার ‘শেখ হাসিনাকে বহনকারী ফ্লাইট যেভাবে যে রুটে ভারতে গিয়েছিল’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

YouTube player

প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি উড়োজাহাজের অবস্থান, নাম, উচ্চতা, গতি এবং স্বয়ংক্রিয় জিওলোকেটার সিস্টেম জানাতে থাকে ট্রান্সপন্ডার। হাসিনাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় আকাশসীমার কাছাকাছি পৌঁছানোর আগে এর ট্রান্সপন্ডার চালু করা হয়নি ।

ডেইলী ষ্টার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে ফ্লাইট এজেএএক্স১৪৩১ এর প্রোগ্রেস স্ট্রিপের একটি অনুলিপি পেয়েছে। একটি ফ্লাইটের প্রোগ্রেস স্ট্রিপ হলো এমন একটি ছোট কার্ড, যার মাধ্যমে এটিসি আকাশে উড়তে থাকা নির্দিষ্ট উড়োজাহাজ ট্র্যাক করে, যাতে অন্য কোনো উড়োজাহাজের সঙ্গে সেটির সংঘর্ষ না হয়।

এতে লকহিড সি-১৩০ হারকিউলিস উড়োজাহাজের ককপিট ও ঢাকার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের মধ্যে রেডিও যোগাযোগের একটি রেকর্ডিংও রয়েছে।

ফ্লাইট প্রোগ্রেস স্ট্রিপ অনুযায়ী, হাসিনাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি ৫ আগস্ট বিকেল ৩টা ০৯ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পশ্চিমে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এয়ারবেস থেকে উড্ডয়ন করে। এর মাত্র ৩০ মিনিট আগে লাখো বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা হাসিনার তৎকালীন সরকারি বাসভবন গণভবনে ঢুকে পড়ে।

হাসিনার পদত্যাগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে প্রথমে দুপুর ২টায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামানের। এটি পিছিয়ে দুপুর ৩টায় করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত তিনি বিকেল ৪টার দিকে ভাষণ দেন।
হাসিনাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি ঢাকা-কলকাতা রুটের ওয়েপয়েন্ট ‘বিইএমএকে’ পৌঁছানোর পর ট্রান্সপন্ডার ও স্বয়ংক্রিয় জিওলোকেটার সিস্টেম চালু করে। এরপর থেকেই এটি রাডারে দেখা যায়।

ঢাকা বিমানবন্দরে রাডার স্ক্রিনের স্ক্রিন গ্র্যাব অনুসারে, এটি প্রথমে কলকাতার দিকে যাত্রা করে। পরবর্তীতে সেটি ভারতের রাজধানী থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমান ঘাঁটির দিকে যায়।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সম্ভবত উড়োজাহাজটি সরাসরি দিল্লি না গিয়ে প্রথমে কলকাতার দিকে যাত্রা করার কারণ হচ্ছে, এটি বাংলাদেশের আকাশসীমায় যতটা সম্ভব কম সময় থাকতে চেয়েছিল।

ঢাকা থেকে দিল্লি যেতে উড়োজাহাজগুলো রাজশাহীর ওপর দিয়ে উড়ে যায় এবং এই রুটে ঢাকা থেকে কলকাতা রুটের চেয়ে বাংলাদেশের আকাশসীমায় কয়েক মিনিট বেশি থাকতে হয়।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ৬ আগস্ট দেশটির রাজ্যসভায় বলেন, হাসিনা ‘সংক্ষিপ্ত নোটিশে’ ভারতে আসার অনুমতি চেয়েছিলেন।

ফ্লাইট প্রোগ্রেস স্ট্রিপ অনুসারে, উড়োজাহাজটি ভারতীয় আকাশসীমায় প্রবেশ করছে এটা দেশটির কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছিল।

হাসিনাকে বহনকারী ফ্লাইটটিকে স্কোয়াক কোড ৪১৩১ দেওয়া হয়েছিল। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল তার আকাশসীমায় উড়তে থাকা প্রতিটি উড়োজাহাজকে চার সংখ্যার একটি কোড দিয়ে চিহ্নিত করে। উড্ডয়নের আগে ক্রু ম্যানুয়ালি এই কোডটি দিয়ে উড়োজাহাজের ট্রান্সপন্ডারে প্রবেশ করে।

ঢাকা এটিসির রাডার মনিটরের একটি স্ক্রিন গ্র্যাব দেখায়, ফ্লাইট এজেএএক্স১৪৩১ ভারতীয় আকাশসীমায় প্রবেশের কিছুক্ষণ আগে তার ট্রান্সপন্ডার চালু করে।
যখন একটি ফ্লাইট পরিকল্পনা অনুমোদন দেওয়া হয়, তখন এর স্কোয়াক কোড গন্তব্যের এটিসিকে পাঠানো হয়। হাসিনাকে বহনকারী উড়োজাহাজের ক্ষেত্রে কলকাতায় এই কোড পাঠানো হয়।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, উড়োজাহাজ কাছাকাছি আসার বিষয়ে একে অপরকে অবহিত করতে ঢাকা ও কলকাতার এটিসির মধ্যে সরাসরি হটলাইন রয়েছে।

উড়োজাহাজটি সেকেন্ডারি রাডারে দেখা না গেলেও ককপিট ক্রুরা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ট্রাফিক কন্ট্রোলার এবং সম্ভবত কলকাতার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের সঙ্গে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ রেখেছিল।

সি-১৩০ এবং ঢাকার গ্রাউন্ড কন্ট্রোলারের মধ্যে রেডিও যোগাযোগের রেকর্ডিং থেকে জানা যায়, ফ্লাইট এজেএএক্স১৪৩১ বঙ্গবন্ধু এয়ারবেস থেকে রানওয়ে ৩২-এ যাওয়ার জন্য ট্যাক্সিওয়ে সাউথ আলফা বেছে নেয়।
গ্রাউন্ড কন্ট্রোলার উড়োজাহাজটিকে সতর্ক করতে দুটি আন্তোনভ এএন-৩২ সেখানে ছিল ।

উড়োজাহাজটিকে ২০ হাজার ফুটের প্রাথমিক উচ্চতায় উড়ে চলার জন্য বলে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল। ৫ আগস্ট এজেএএক্স ১৪৩১ এর ফ্লাইটপথ দেখা যায় ফ্লাইটরাডার ২৪ ডটকমে। এজেএএক্স ১৪৩১ চার হাজার ফুট অতিক্রম করার পর পাইলট ঢাকা এরিয়া কন্ট্রোল সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ককপিট ক্রুদের ট্র্যাফিক সম্পর্কে সতর্ক করে জানায়, একটি এয়ারবাস এ ৩২০ ঢাকার দিকে যাচ্ছে। এতে বলা হয়, এয়ারবাসটি তাদের উপরে ছিল এবং ২৬ হাজার ফুট নিচে নামছিল।

এরপরেই ঢাকা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল বলেছিল, ‘এজেএক্স ১৪৩১ কলকাতা কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’। যার অর্থ, এরপর থেকে ক্রুদের কলকাতা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে এবং তাদের আগমন সম্পর্কে ঘোষণা দিতে হবে। সাধারণত ফ্লাইট সীমান্তের কাছাকাছি পৌঁছালে এই ঘোষণা দিতে হয়।

হাসিনাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি যখন উড্ডয়ন করে তখন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারে ছিলেন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সদস্য এয়ার কমোডর এএফএম আতিকুজ্জামান। তিনি উড়োজাহাজটি উড়তে দেখেছেন।

ডেইলি স্টারের ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনার উড়োজাহাজটি সীমান্ত অতিক্রম করার পর পশ্চিমবঙ্গের হাশিমারা বিমানঘাঁটিতে ১০১ স্কোয়াড্রনের দুটি ডাসাল্ট রাফালে যুদ্ধবিমান এটিকে এসকর্ট করে। যুদ্ধবিমান দুটি সি-১৩০ এর জন্য অপেক্ষা করছিল। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সীমান্ত থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে থাকতেই ফ্লাইটটির ওপর নজরদারি শুরু করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, ফ্লাইট ক্রু ও সিকিউরিটি সার্ভিসেস ফোর্স (এসএসএফ) সদস্যরা কেউই ঢাকা ছাড়ার আগে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেননি।

হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট ছিল এবং রেহানার ছিল ব্রিটিশ পাসপোর্ট। উড়োজাহাজটি ঢাকা সময় সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে হিন্দন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে। এরপর হাসিনাকে উত্তর প্রদেশের নয়ডায় ভারত সরকারের দেওয়া একটি নিরাপদ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এসএসএফ সদস্য ও ক্রুরা একদিন পরে বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

বিএনএ,শামীমা চৌধুরী শাম্মী/এইচমুন্নী

Loading


শিরোনাম বিএনএ