দেশের নাগরিকদের পেশা ভিত্তিক নিবন্ধন নিশ্চিত হলে দরিদ্র,বেকার, কাজ করতে অক্ষম জনগণকে সহায়তা করতে সরকারের কাজ যেমনি সহজ হবে তেমনি সরকারের সমস্ত ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া যাবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) (২৭ জুলাই ২০২২) তথ্যানুযায়ী, দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৫১৬ জন।
করোনা, ঘূর্ণিঝড়ের মত দুর্যোগকালীন সময়, সহায়সম্বলহীন(নি:স্ব), অতিদরিদ্র, দরিদ্র, চলনসই, মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত ও বিত্তশালী কারা তার সঠিক ডাটা কেউ দিতে পারে নি। করোনাকালীন সময়ে ৩৮ লাখ হতদরিদ্র পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছিল। তাতেও অনেক দিনমজুর, গাড়ি চালক, শ্রমিক,ভিক্ষুক, বেকার, কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষ সে সময় বাদ পড়েছিল। পরে এককোটি মানুষকে টিসিবি ফ্যামিলি কার্ডে স্বল্প মূল্যে পণ্য কেনার সুযোগ দেয়া হয়।
নগদ আর্থিক সুবিধা ও টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড কারা পেয়েছেন?
এ তালিকা করেছে ওয়ার্ড কাউন্সিলর, কমিশনার ও সাবেক সরকারের দলীয় লোকজন। যদিও জেলা প্রশাসন তত্ত্বাবধানে ছিল। দেখা গেছে, ৪/৫তলা ভবনের মালিকরাও এই কার্ড ২/৩টি করে পেয়েছেন। অনেক এতিম পরিবার যাদের কোন নির্দিষ্ট আয় নেই তারা পায় নি। অথচ তারা এর হকদার।
সরকার সমাজ কল্যাণ মন্ত্রাণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রাণালয়, জলবায়ু ফান্ড হতে মানুষকে নানাভাবে আর্থিক সহায়তা ও ভাতা দিয়ে থাকে। জেলেরাও সাগরে মাছ ধরা বন্ধের সময় রেশন পায়।
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি গড়ে তুলতে পেশা ও আয় ভিত্তিক নিবন্ধন জরুরি।
উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর মনে করেন, সাধারণ মানুষকে এই অবস্থা থেকে বের করে আনতে হলে সত্যিকার অর্থে প্রতিযোগিতামূলক বাজার এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি গড়ে তুলতে হবে৷ এখন যে বেষ্টনি আছে তা সব মানুষের জন্য না৷ এটা দলীয় রাজনীতি প্রভাবিত বলেও অভিযোগ আছে৷ তিনি বলেন, ‘‘মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির বিশ্বব্যাংক প্রভাবিত হিসেব দিয়ে মানুষের প্রকৃত অবস্থা বুঝা যাবে না৷ প্রকৃত অর্থেই সবার আয় বাড়তে হবে৷ কর্মসংস্থানের উদ্যোগ দরকার৷’’
তাই সকল নাগরিকের অধিকার নিশ্চিতে রাষ্ট্রের নাগরিকদের পেশা ভিত্তিক নিবন্ধন নিশ্চিত করতে হবে।
পেশা ভিত্তিক নিবন্ধনে কে কোন পেশায় জড়িত, আয়, আয়কর তথ্য, চাকরি হলে প্রতিষ্ঠানের নাম,ঠিকানা থাকবে।
ব্যবসায়ী হলে ধরণ, প্রতিষ্ঠানের নাম, সম্ভাব্য আয়, কর্মচারীর সংখ্যা, মাসিক বেতন ব্যয়,
বেকার হলে শিক্ষাগত যোগ্যতা,দক্ষতা,অভিজ্ঞতা
অবসর হলে অবসর ভাতার বিবরণী সংক্ষিপ্ত উল্লেখ থাকবে।
মুক্তিযোদ্ধা হলে ভাতা প্রাপ্তির বিবরণী সংক্ষিপ্ত উল্লেখ থাকবে।
পেশা ভিত্তিক নিবন্ধন হলে দেশে কত মানুষ অতিদরিদ্র,দরিদ্র, দুর্যোগ এলাকায় কতজন দরিদ্র আক্রান্ত হল, এসব ডাটা খুব সহজে বেরিয়ে আসবে।
তাছাড়া সরকার কাদের কাছে ইনকাম ট্যাক্স পেতে পারে, কারা দিতে সক্ষম, অক্ষম, এ সব তথ্যও বেরিয়ে আসবে।
সর্বোপরি দেশে কোন পেশার কতজন রয়েছে, কত ধরনের ব্যবসায়ী রয়েছেন, বেকার, ছদ্মবেকার, কর্মক্ষমহীন, কতজন রাজনীতিক তা জানা যাবে। এ দেশে রাজনীতিও অনেকের একমাত্র পেশা।
নাগরিকদের পেশা ভিত্তিক নিবন্ধন হলে সরকার ও রাষ্ট্র বিভিন্নভাবে উপকৃত হতে পারে।
কিছু মূল উপকারিতা হলো:
১. পরিকল্পনা ও নীতি নির্ধারণে সহায়তা: পেশা ভিত্তিক নিবন্ধন সরকারকে সঠিক পরিসংখ্যান ও ডেটা প্রদান করে, যা নীতি নির্ধারণ ও পরিকল্পনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন সেক্টরের চাহিদা ও প্রবণতা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়।
২. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম উন্নয়ন: পেশা ভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে সরকার প্রয়োজনীয় শিক্ষামূলক ও প্রশিক্ষণমূলক প্রোগ্রাম ডিজাইন করতে পারে। এটি দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ উন্নত করতে সহায়ক।
৩.বেকারত্ব মোকাবেলা : পেশার ভিত্তিতে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করে সরকার বেকারত্ব মোকাবেলার জন্য কার্যকরী নীতি তৈরি করতে পারে। নির্দিষ্ট পেশার অভাব ও বৃদ্ধির দিকে লক্ষ্য রেখে কর্মসংস্থান পরিকল্পনা করা সম্ভব হয়।
৪. অর্থনৈতিক উন্নয়ন: পেশা ভিত্তিক তথ্য দেশের অর্থনৈতিক খাতগুলির প্রয়োজনীয়তা বুঝতে সহায়ক, যা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিনিয়োগ নীতির জন্য ভিত্তি প্রদান করে।
৫. জনসেবা প্রদান: সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে সরকার উন্নত সেবা প্রদান করতে পারে, যেমন স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক নিরাপত্তা, ও অন্যান্য সুবিধা।
৬. নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা: পেশা ভিত্তিক নিবন্ধন নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সহায়ক হতে পারে। এটি আইনি প্রক্রিয়া সহজ করতে এবং সম্ভাব্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করতে সাহায্য করতে পারে।
৭. কর ব্যবস্থাপনা: নাগরিকদের পেশার ভিত্তিতে তাদের আয়ের শ্রেণীবিভাগ করে সরকার কর ব্যবস্থাপনা সহজতর করতে পারে। এর ফলে কর আদায়ের প্রক্রিয়া আরও কার্যকরী হয়।
এইভাবে, নাগরিকদের পেশা ভিত্তিক নিবন্ধন সরকারের বিভিন্ন দিক থেকে কার্যকরী হতে পারে এবং রাষ্ট্রের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
বিএন এ,লেখক : সৈয়দ গোলাম নবী, সাংবাদিক/এইচমুন্নী