বিএনএ, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম): সাতকানিয়া উপজেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এনে সরেজমিনে দেখানোর কথা বলেছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম। একইসঙ্গে সরেজমিনে তাদের দেখা ক্ষতি এবং স্থানীয়দের থেকে পাওয়া নানা সমস্যা প্রয়োজনীয় কর্তৃপক্ষকে অবগত করে দ্রুততর সময়ের মধ্যে সমাধানের চেষ্টার কথা জানিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার। সোমবার (১৪ আগস্ট) সকালে সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন সংক্রান্ত বিষয়ে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, বাস্তব অবস্থা দেখা আর ঢাকা থেকে দেখার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সরেজমিনে এসে দেখে যদি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অনুধাবন করতে পারেন বা আমরা বুঝাতে সমর্থ হই, সাতকানিয়া উপজেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তাহলে সেই নিরিখে তারা ব্যবস্থা নেবেন।’ উপজেলা পরিষদের ফান্ড ব্যবহার করে জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন বিষয়ে ব্যবস্থা নিতেও বলেন তিনি।
বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম আরও বলেন, ঠিকমতো উদ্ধার কাজ, ত্রাণ বিতরণ করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিক সেনাবাহিনী নিয়োজিত করেছেন। আজও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা এসেছি। সরেজমিনে দেখেছি, আমরা আপনাদের ক্ষতির কথা প্রধানমন্ত্রীকে জানাব। এর আগে ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী তার টিম নিয়ে সরেজমিনে ঘুরে গেছেন। সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে ঘুরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, শোকের মাসে ভয়াবহ বন্যা আরেক শোক যোগ করেছে। দুই শোককে একসঙ্গে শক্তিতে পরিণত করে আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, দুর্যোগে কি পরিমাণ কি ক্ষতি হয়েছে তা আমরা দেখেছি। দ্রুততার সাথে রাস্তাঘাট, কৃষি, মৎস্যসহ সব খাতের সমস্যা নিরসনে পর্যায়ক্রমে কাজ করবো। ইতোমধ্যে আমরা সব দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। ক্ষতির ব্যাপারে তাৎক্ষণিক তাদের জানিয়েছি।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাত সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন বিশ্বাস, উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব সিআইপি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন হাসান চৌধুরী, আঞ্জুমান আরা বেগম, উপজেলা প্রকৌশলী পারভেজ সারোয়ার হোসেন, এমপি নদভীর একান্ত সচিব ও জেলা পরিষদ সদস্য এরফানুল করিম চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি রমিজউদ্দিন, খাগরিয়ার চেয়ারম্যান আকতার হোসেন, পশ্চিম ঢেমশা রিদুয়ানুল ইসলাম সুমন, সাতকানিয়া প্রেস ক্লাব সভাপতি সৈয়দ মাহফুজউন নবী খোকনসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ।
সভায় বক্তারা, রেললাইনে পানি নিষ্কাশনের অপর্যাপ্ততা, কালভার্ট, সাতকানিয়া পৌরসভায় জলবদ্ধতা, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই, ডলু নদীর সাতকানিয়া শহর রক্ষা বাঁধের ভাঙনে সাতকানিয়া উপজেলা ও পৌরসভা সদরে জলাবদ্ধতা, পর্যাপ্ত ব্রিজ কালভার্টের অবহলোয় মেরামত ও নতুন ব্রিজ কালর্ভাট না করা, পরিকল্পিতভাবে ডলু নদীর পুনঃখনন না হওয়াসহ নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন। একইসঙ্গে তারা সাতকানিয়াকে বন্যা দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে সরকারি সাহায্য সহযোগিতা, মৎস্য-কৃষি- পোল্ট্রি-এগ্রো খামারিদের বিশেষ প্রণোদনা ও ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি পরিদর্শন করে নগদ অর্থ কিংবা ঘরবাড়ি করে দেওয়ার দাবি জানান। জবাবে, বিভাগীয় কমিশনার দ্রুততার সাথে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান। পরে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বন্যা দুর্গত এলাকায় ঘুরে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন।
বিএনএনিউজ/ এসএমএনকে, বিএম