বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র একটি প্রামাণিক গ্রন্থ যা ১৯৭১ সালে এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সংগঠিত বিভিন্ন ঘটনার বিস্তারিত তথ্যভান্ডার হিসাবে স্বীকৃত। ১৫ খণ্ডে প্রকাশিত এ তথ্য ভাণ্ডারে এমন কিছু তথ্য রয়েছে যা সাধারণ মানুষের অজানা। বিশেষ করে এ প্রজন্ম জানেই না কত রক্ত, কত কষ্ট, নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেয়েছে।
গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অর্জন ও উন্নয়নে বিশ্বের বিস্ময়। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে বাঙ্গালি জাতি বিলীন হয়ে যেত! এমনটাই মনে করেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস জানাতে বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ) ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছে।
আজ প্রকাশিত হলো
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৬২
৯ই জুলাই, ১৯৭১
মাঠে মারা গিয়েছে ইয়াহিয়া খানের লম্বা-চওড়া রেডিও গলাবাজি। শাহী কায়দায় ফরমান জারির ভঙ্গিতে কাকাতুয়া ইংরেজিতে আওড়ানো প্রায় একঘন্টার নরম গরম চরম বিলাপ আর প্রলাপ কি করে দাগ রাখবে দুনিয়ার মানুষের মনে? তবু, যাদের মাথায় দুর্বুদ্ধি ভর করেছে, যাদের মধ্যমণি হিসেবে ইয়াহিয়া খান ধরাকে সরা জ্ঞান করেছে, তারা এই রেডিও গলাবাজির আগে একটা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বাজনা তো কম বাজায়নি, কাটখড় তো কম পোড়ায়নি, গৌড়ীসেনের টাকা তো কম খরচ করেনি, বেইমানী ঢাকবার জন্যে দেশ-দেশান্তরে মিষ্টি কথা তো কম পরিবেশন করেনি। পাকিস্তানী শাসকচক্রের ঝানু ঝানু উপদেষ্টারা ইতিমধ্যে তদ্বির-তদারকের কিছু বাকী রাখেনি। কিন্তু কোনো ফল হলো না। ইয়াহিয়া খানের ২৮শে জুনের রেডিও ভাষণ একটা জঘন্য অপভাষণ হিসেবেই বরং চিহ্নিত হয়ে গেল।
উলঙ্গ হয়ে ধরা পড়ে গেলো রাওয়ালপিন্ডি সামরিকচক্রের সেই মুনাফালোভী দুর্বুদ্ধিতা, যা এই চক্রকে বাংলাদেশ দমনে প্রবৃত্ত করেছে। ইয়াহিয়া খান তার প্রলাপে বলেছে যে রাওয়ালপিন্ডি সামরিকচক্র নিজেরাই শাসনতন্ত্র রচনা করবে। তারা পশ্চিম পাকিস্তানের নির্বাচিত প্রতিনিধিদেরও শাসনতন্ত্র রচনার এখতিয়ার নাকচ করে দিয়েছে। বাংলাদেশকে তো তারা ধ্বংস করতেই চেয়েছে। এটা ইয়াহিয়ার কারণে দুনিয়ার কাছে জাহির হয়ে গিয়েছে।
২৮শে জুনের আগে দুনিয়ার যেসব রাষ্ট্রের কর্মকর্তারা চিন্তা করছিলেন যে, দানবীয় অপকর্ম করে ফেলে হাতেনাতে ধরা পড়ে ইয়াহিয়া খানেরা হয়তো তওবা করে পশ্চিম পাকিস্তানে বহাল থাকার জন্যেও দুনিয়ার কাছে একটা সম্মানজনক মীমাংসাসুত্র রাখতে পারবে, তারাও খুঁজে পেতে কিছু পায়নি ইয়াহিয়া খানের বাচনে।
(তথ্যসুত্র:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র -৫ম খন্ড। পৃষ্ঠা নং ৯২) চলবে।
আগের পর্ব সমূহ :
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৬১
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৬০
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৯
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৮
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৭
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৬
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৫
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৪
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৩
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫২
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫১
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫০
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৪৯
সম্পাদনা: এইচ চৌধুরী, গ্রন্থনায়: ইয়াসীন হীরা