বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র একটি প্রামাণিক গ্রন্থ যা ১৯৭১ সালে এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সংগঠিত বিভিন্ন ঘটনার বিস্তারিত তথ্যভান্ডার হিসাবে স্বীকৃত। ১৫ খণ্ডে প্রকাশিত এ তথ্য ভাণ্ডারে এমন কিছু তথ্য রয়েছে যা সাধারণ মানুষের অজানা। বিশেষ করে এ প্রজন্ম জানেই না কত রক্ত, কত কষ্ট, নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেয়েছে।
গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অর্জন ও উন্নয়নে বিশ্বের বিস্ময়। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে বাঙ্গালি জাতি বিলীন হয়ে যেত! এমনটাই মনে করেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস জানাতে বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ) ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছে।
আজ প্রকাশিত হলো
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৭
১৬ জুন, ১৯৭১(২য় কিস্তি)
ঋণ সালিসী বোর্ড স্থাপন করে একদিন যে ফজলুল হক বাঙালীর অস্তিত্ব রক্ষা করেছিলেন, বাঙালীর সামান্য বিপদে যিনি বাঘের মত গর্জে উঠতেন, দু:খী মানুষের জন্য যিনি সর্বস্ব ত্যাগ করতেন, বাংলার গ্রামে, বন্দরে, শহরে অসংখ্যা স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষার পথ সুগম করেন এবং সর্বোপরি লাহোর বৈঠকে যিনি সারা বিশ্বের সামনে পাকিস্তান প্রস্তাব তুলে ধরেন সেই ফজলুল হক, সেই শেরে বাংলা ফজলুল হক সেদিন প্রবীণ ও বৃদ্ধ বয়সে নিজের ঘরে বন্দী হয়ে রইলেন।
যেদিন জীবনের সমস্ত বিশ্বাস ও আরাম আয়েশ পরিত্যাগ করে দেশের স্বাধীনতার জন্য শেরে বাংলা ফজলুল হক ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সেদিন কোথায় ছিল ইস্কান্দর মির্জা, গোলাম মোহাম্মদ? বৃটিশের তাঁবেদার ও গোলাম সেজে তারা তখন চাকরি করতো ও নিজেদের সমস্ত বিপদ থেকে নিরাপদ দূরত্বে বাঁচিয়ে রেখে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ওপর রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করতো এই দুই পরাশ্রিত বশংবদ জানোয়ার। আর পাকিস্তান প্রস্তাবের যিনি উদ্যোক্তা, যার হাতে পাকিস্তান প্রস্তাবের জন্য, সেই মনীষী ফজলুল হককে বিশ্বাসঘাতক বলতে এদের এতটুকু বাধলো না।……
উনিশ’শ সত্তরের নির্বাচনের পর এসেছে অভিশপ্ত একাত্তর সাল। এবারেও সেই একই খেলার ভয়াবহ পরিণাম আমাদের চোখের সামনে প্রত্যক্ষ হয়ে উঠেছে। চুয়ান্নর নির্বাচনের পর শিকার ছিলেন শেরে বাংলা ফজলুল হক, প্রবীণ গণনেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও অসংখ্য দেশপ্রেমিক। শিকার ছিলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং সেদিনের তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। আর আজকের নির্বাচনের পর শিকার হয়েছেন বাংলার অবিসংবাদিত প্রাণের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর অনুসারীবৃন্দ এবং বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষ আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা। যে ইয়াহিয়া, টিক্কা এবং এম. এম. আহমেদ একদিন ছিল বৃটিশের পদলেহী চাকর, যারা স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় ছিল এক-একটি অখ্যাত-কুখ্যাত সাধারণ গোলাম, আজ তারাই হয়েছে দেশের হর্তাকর্তা-বিধাতা। আর ফজলুল হকের ভাগ্যে যেমন জুটেছিল বিশ্বাসঘাতকতার গ্লানি, তেমনি বাংলার প্রাণের নেতার সমগ্র পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের একমাত্র গণনেতা আজ হলেন দেশদ্রোহী। ভাগ্যের এ এক নির্মম পরিহাস বটে- রবীন্দ্রনাথের উপেনের ভাষায় “তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ আর আমি চোর বটে।”
কিন্তু দিন আর বেশী দূরে নয় যখন এই ষড়যন্ত্রের জাল আমরা ছিন্নবিচ্ছিন্ন করবোই এবং বাংলাদেশকে এই দানবদের নির্যাতন থেকে উদ্ধার করবোই। আসুন আপনি কৃষক-মজুর, আসুন আপনি চাকরীজীবী-বুদ্ধিজীবী, সবার ওপরে এসো তোমরা ছাত্র-ছাত্রী, যুবক-তরুণের দল এবার আমরা দানব হত্যায় ও দানব বিতাড়নের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ি। আল্লাহ্ আমাদের সহায় হবেন। জয় বাংলা। (‘চেনাকন্ঠ’ ছদ্মনামে ড. মযহারুল ইসলাম রচিত)
(তথ্যসুত্র:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র -৫ম খন্ড। পৃষ্ঠা নং ৮৮) চলবে।
আগের পর্ব সমূহ :
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৬
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৫
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৪
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৩
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫২
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫১
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫০
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৪৯
সম্পাদনা: এইচ চৌধুরী, গ্রন্থনায়: ইয়াসীন হীরা