বিএনএ ডেস্ক: রমনায় বোমা হামলার পর ২২ বছর কেটে গেছে। বছর ঘুরে ফিরে এসেছে বাংলা নববর্ষ। কিন্তু সে দিনের বোমা হামলায় যারা মারা গিয়েছিলেন তাদের স্বজনদের ২২ বছরের যন্ত্রণা কবে ফুরাবে তা কেউ বলতে পারে না। দেশের অনেক সংবেদনশীল নাগরিকও এ প্রশ্নের জবাব খুঁজে ফিরেন। এমন একটি বোমা হামলার ঘটনা যা পুরো জাতিকে আতঙ্কিত করে তুলেছিল তার বিচারকাজ ২২ বছরেও সম্পন্ন করা যায়নি।
বাংলা নববর্ষে ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখের উৎসবে হঠাৎই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। এমন শব্দে ছুটতে থাকে মানুষ। বোমা হামলায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ৯ জন। আর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আরও একজনের।
ওই ঘটনায় আদালতে দুটি মামলা হয়। একটি হত্যা মামলা, অন্যটি বিস্ফোরক আইনে করা মামলা। মামলা দুটির মধ্যে বিস্ফোরক আইনের মামলাটির বিচার এখনও নিম্ন আদালতেই সম্পন্ন হয়নি। আর হত্যা মামলার বিচার নিম্ন আদালতে সম্পন্ন হলেও উচ্চ আদালতে এর ডেথ রেফারেন্স শুনানির অপেক্ষায় আছে। নিম্ন ও উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকা মামলা দুটি কবে নিষ্পত্তি হবে তার ধারণাও দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্টদের কেউ।
বিচারিক আদালতে হত্যা মামলাটির রায় হয় ঘটনার ১৩ বছর পর ২০১৪ সালে। রায়ে ৮ জনের ফাঁসি ও ৬ জনের যাবজ্জীবনের আদেশ দেন নিম্ন আদালত। তবে এরপর ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও হাইকোর্টে আসামি পক্ষের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি হয়নি।
উচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায় থাকা মামলাটির বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন বলেন, মামলাটি শুনানির অপেক্ষায় আছে। ডেথ রেফারেন্স মামলা ধারাবাহিকভাবে হাইকোর্টে শুনানির জন্য উঠছে। এটি যখন শুনানির জন্য উঠবে, তখন রাষ্ট্র পক্ষে আমরা শুনানি করব।
গুরুত্বপূর্ণ মামলাটির শুনানি এগিয়ে আনার জন্য রাষ্ট্র পক্ষে আবেদন করা হবে কি না জানতে চাইলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যখন মামলাটি শুনানির জন্য আসবে, তখনই শুনানি করা হবে।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. আবদুল্লাহ (আবু) সময়ের আলোকে বলেন, মামলাটি যুক্তিতর্কের জন্য অপেক্ষমাণ আছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই মামলায় বারবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন, সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল, বারবার তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও তদন্ত কর্মকর্তাদের আদালতে সাক্ষ্য দিতে না আসার কারণে বিচার শুরু হতেই দেরি হয়েছে। বিস্ফোরক আইনে করা মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হলেও যুক্তি উপস্থাপনের অপেক্ষায় আছে।
২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিন রমনার বটমূলে বোমা হামলার ঘটনায় করা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় আরও ৬ জনকে।
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র ওই দিনই রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা দুটি করেন। মামলার প্রায় ৮ বছর পর ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছিলেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক আবু হেনা মো. ইউসুফ। যিনি ছিলেন মামলার অষ্টম তদন্ত কর্মকর্তা।
এরপর ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি বিচারের জন্য মামলা দুটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে যায়। ওই বছরের ১৬ এপ্রিল পৃথক মামলা দুটিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩ এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ বিচারের জন্য পাঠানো হয়। বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে নিম্ন আদালত হত্যা মামলার রায় দিলেও বিস্ফোরক আইনের মামলাটি এখনও নিম্ন আদালতেই আছে।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ