বিএনএ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে এক ফ্রিল্যান্সারকে মামলা ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে তিন কোটি টাকার ক্রিপ্টোকারেন্সি হাতিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের এক এসআইসহ ছয় পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন সিএমপি কমিশনার।
এছাড়া ডিবির ইন্সপেক্টর রুহুল আমিনের কাছে ঘটনার ব্যাখা তলব করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ( পিআর) স্পিনা রানী প্রামাণিক।
তিনি বলেন, এই ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি ঘটনা অনুসন্ধান করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে গত ১২ মার্চ পুলিশ কমিশনার ছয়জনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন ও একজন পরিদর্শকের কাছে ব্যাখা তলব করেছেন।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন- এসআই মো. আলমগীর হোসেন, এএসআই মো. বাবুল মিয়া, এএসআই মো. শাহ পরাণ জান্নাত, এএসআই মইনুল হোসেন, কনস্টেবল জাহিদুর রহমান ও মো. আব্দুর রহমান।
গত ১২ মার্চ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় সাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়েছে, ‘ফ্রিল্যান্সারকে মামলা ও ক্রসফায়ারের ভয়, চট্টগ্রাম সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেন ডিবি পরিদর্শক’ শীর্ষক সংবাদ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সিএমপির পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা। গঠিত কমিটি অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ছয় পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
আর ইন্সপেক্টর রুহুল আমিনের কাছে ব্যাখা তলব করা হয়।
উল্লেখ, এই ঘটনার ভুক্তভোগী আবু বক্কর সিদ্দিক সরকারি নিবন্ধিত ফ্রিল্যান্সার। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার গুলবাগ আবাসিক এলাকা থেকে তাকে ও বন্ধু ফয়জুল আমিনকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি উত্তর দক্ষিণের পরিদর্শক মো. রুহুল আমিনের নেতৃত্বে একটি দল। সেখান থেকে তাদের নগরীর গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
এরপর দিন দুইজনকে অনলাইনে জুয়া খেলার অভিযোগে নন-এফআইআর প্রসিকিউশনের মাধ্যমে আদালতে হাজির করা হয়।
জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ২৯ ফেব্রুয়ারি আবু বক্কর অভিযোগ করেন, ডিবির হাতে আটক থাকা অবস্থায় তার নিজের মোবাইল ফোনে তার হাতের ছাপ নিয়ে ডিবি পুলিশের সদস্যরা তার কাছে থাকা তিন কোটি টাকার বিট কয়েন সরিয়ে নিয়েছে অন্য কোনো অ্যাকাউন্টে। এই সময় তাকে মেরে ফেলার ও মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার দেখানোর হুমকিও দেন ডিবি পুলিশের সদস্যরা। এমন অভিযোগ করেছিলেন আবু বক্কর।
এরপর গত ২ মার্চ আবু বক্কর ও গোয়েন্দা পুলিশের দুই সোর্সসহ তিনজনকে আসামি করে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানায় ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের অভিযোগে মামলা করে ডিবি।
এদিকে, গত ৫ মার্চ আট পুলিশ সদস্যসহ অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন আবু বক্করের স্ত্রী হুসনুম মামুরাত লুবাবা। আবু বক্করকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তভার দিয়েছেন।
বিএনএনিউজ/ বিএম