বিএনএ, চট্টগ্রাম : তাপস কুমার দাস। চট্টগ্রামের রেলওয়ে পাহাড়তলী ক্যারেজ এবং ওয়াগন মেরামত কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (কারখানা-ডিএস)। তিনি মানছেন না কোন সরকারি বিধি-বিধান। নিজের ইচ্ছানুয়ায়ি সব কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। তার স্বেচ্ছারিতায় অতিষ্ট হয়ে ওঠেছে কারখানার শত শত শ্রমিক কর্মচারি। তাদের মধ্যে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সূত্র জানায়, তাপস কুমার দাস বেতনের সঙ্গে ঘর ভাড়া নিলেও তিনি থাকেন রেলওয়ের গেস্ট হাউজে। নিজের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন রেলওয়ের অস্থায়ী কর্মচারিদের। তার কথা মত কাজ না করায় ৪ জন অস্থায়ী কর্মচারি (টিএলআর)কে চাকুরিচ্যূত করেন। অন্যদিকে সুপ্তি দে নামে এক মহিলাকে নিয়োগ দেন। তাকেও ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন। এ নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে। এছাড়া তার সেবা করার জন্য কারখানার প্রোগ্রেস শপ থেকে সুকুমার নামে এক অস্থায়ী কর্মচারী (টিএলআর)কে বদলি করে আনা হয়েছে। এর আগে তিনি প্রোগ্রেস শপে কাজ করতেন।
জানতে চাইলে টিএলআর সুকুমার জানান, তিনি গত দেড়মাস ধরে রেস্ট হাউজে ডিএস’র ব্যক্তিগত কাজ করছেন। প্রতিদিন সকাল ৮টায় তিনি রেস্ট হাউজে যান। বেলা ১১টার পর্যন্ত থাকেন। আবার বিকাল ৩টার দিকে রেস্ট হাউজে যান। রাত ৯/১০টা পর্যন্ত তাপস দাসের ব্যক্তিগত কাজ করেন।
সূত্রে জানা যায়, কারখানায় সকাল ৭ টায় কাজ শুরু হলেও কারখানা-ডিএস তাপস কুমার অফিসে যান বেলা ১১টায়। কখনো কখনো দুপুর ১২টায়। বিকাল ৫টার মধ্যে কারখানা থেকে বের হওয়ার নিয়ম থাকলেও তিনি বের হন রাত ৯-১০টায়। বিকাল সাড়ে ৪টায় কারখানার সব গেট বন্ধ করে নিরাপত্তা বিভাগকে দায়িত্ব বুঝে দেয়া হয়। কারখানার ভিতরে রাতে ৫/৬ ঘন্টা পর্যন্ত অবস্থান করেন। সেখানে তার মনোনিত ঠিকাদার ও সরবরাহকারীরা ঢুকে আর বের হয়। কারখানার প্রধান গেট খোলা রাখতে হয় তিনি বের না হওয়া পর্যন্ত। এতে কারখানার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে সূত্রে প্রকাশ। অফিস সময় শেষ হওয়ার পর কাজ করতে হলে নিরাপত্তা বিভাগকে নিয়ম অনুযায়ী চিঠি দিয়ে অবহিত করার কথা থাকলেও তিনি তা করেন না।
সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায় প্রতিদিন বিকাল ৫টার পরে তিনি কারখানায় ব্যায়াম ও দৌড়াদৌড়ি করেন। তার গাম মুছতে পেছনে পেছনে টিস্যু নিয়ে দৌড়াতে থাকেন টিএলআর রাকিব। সকাল ৭টা থেকে রাত ১০-১১টা পর্যন্ত কাজ করতে হয় তাকে। ডিএস তাপস কুমার দাস কারখানা ত্যাগ করলে ছুটি পান ওই টিএলআর।
রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) চীফ কমান্ডেন্ট মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, সরকারি বন্ধের দিন বা অন্য কোনো দিন অফিস সময়ের পর অফিসে অবস্থান করতে হলে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীকে (আরএনবি) জানানোর বিধান থাকলে তাপস কুমার এ নিয়ম মানে না। একজন সিনিয়র অফিসার হয়ে নিয়ম না মানলে কি করার আছে ?
কারখানার প্রোগ্রেস শপের ইনচার্জ মো. জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, তিনি একটু দেরিতে যান এটা ঠিক। তিনি বড় কর্তা, আমার বস। তার সর্ম্পকে তেমন কিছু বলা যাবে না। কারখানার গেইটে দায়িত্বরত রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) হাবিলদার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, স্যার একটু দেরিতে বের হন। বিকাল সাড়ে ৪টার মধ্যে সব গেইট বন্ধ করা হয়। তিনি চলে যাওয়ার পর প্রধান গেইট বন্ধ করা হয়।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে কাজ থাকলে মাঝে-মধ্যে তিনি সেখানে অবস্থান করতে পারেন। কিন্তু কাজ ছাড়া তিনি সেখানে অবস্থান করে ব্যায়াম করবেন এটা ঠিক না। একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসাবে তাকে প্রতিষ্ঠানে নিয়ম মেনে কাজ করতে হবে।
একজন টিএলআরকে প্রোগ্রেস শপ থেকে তার সেবা করার জন্য রেস্ট হাউজে নেয়া হয়েছে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা কিছুতেই সম্ভব না। সরকারি টাকায় নিয়োগে কর্মচারি নিয়ে ব্যক্তিগত কাজ করানোর সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে রেলওয়ে মহাপরিচলক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার বলেন, যে কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে সরকারি নিয়মনীতি মেনে কাজ করতে হবে। কারখানার দায়িত্বরত বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক তাপস কুমার দাস সরকারি নিয়ম বহির্ভূতভাবে কোনো কাজ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য কারখানায় ডিএস তাপস কুমার দাস’র কাছে গেলে তিনি ব্যস্ত রয়েছেন বলে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
বিএনএনিউজ/আমিন/ওয়াইএইচ