24 C
আবহাওয়া
১০:৪০ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ‘থ্রি বিএইচএ’কে চীন- থাইল্যান্ড অস্ত্র দিচ্ছে?

‘থ্রি বিএইচএ’কে চীন- থাইল্যান্ড অস্ত্র দিচ্ছে?

‘থ্রি বিএইচএ’কে চীন- থাইল্যান্ড অস্ত্র দিচ্ছে

।। শামীমা চৌধুরী শাম্মী ।।

বিএনএ, ঢাকা: মিয়ানমার এখন জ্বলছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এবারই সবচেয়ে বেশি প্রতিরোধ আক্রমণের মুখে পড়েছে জান্তা সরকার। দেশটির সব বিদ্রোহী গোষ্ঠী একমঞ্চে এসেছে। লড়াই করছে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে।

ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে একটি জোট সামরিক বাহিনীকে কোণঠাসা করে ফেলেছে। এই জোট বলছে, তাদের এখন মূল লক্ষ্য হচ্ছে জান্তা সরকারের পতন। তবে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স ছাড়াও আরো বেশ কিছু জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী রয়েছে।

এমএনডিএএ- মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি, টিএনএলএ- তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি এবং এএ- আরাকান আর্মি, তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠী মিলে একটি জোট গঠন করেছে যাকে বলা হয় থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স। এটি ৩বিএইচএ নামেও পরিচিত।

২০১৯ সালে তিনটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী জোটবদ্ধ হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে তারা এমএনডিএএ এবং আরাকান আর্মির শক্ত ঘাঁটি শান ও রাখাইন রাজ্যে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা চালানোর উপর জোর দেয়। আরাকান আর্মি মূলত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বাসিন্দা। কিন্তু এরা ব্যাপক আকারে মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলে স্থানান্তরিত হয়েছে এবং এদের নিয়েই গঠিত হয়েছে আরাকান আর্মি। বর্তমানে মিয়ানমারে এরা সবচেয়ে বেশি অস্ত্রশস্ত্রের অধিকারী বিদ্রোহী গোষ্ঠী।

২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত আরাকান আর্মির ভাষ্য অনুযায়ী, তারা রাখাইন রাজ্যে একাধিক জাতিগোষ্ঠীর আরাকানিদের সার্বভৌমত্ব অর্জনের লক্ষ্যে লড়াই করে যাচ্ছে। আরাকান আর্মির মধ্যে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরাও অন্তর্ভুক্ত।

মিয়ানমারের পত্রিকা ইরাবতীর তথ্য অনুযায়ী, আরাকান আর্মির শক্তিশালী অনেকগুলো ব্যাটালিয়ন রয়েছে এবং তাদের অধীনে প্রায় ৩০ হাজার সেনা রয়েছে।

”শান রাজ্যের শান আর্মি, তাং এবং ওয়া আর্মিরাই প্রধান বিদ্রোহ গোষ্ঠী যারা দীর্ঘদিন ধরে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রেখেছে।” তবে এদের সাথে এখন যুক্ত হয়েছে ব্রাদারহুড। যেখানে একাধিক বিদ্রোহী গোষ্ঠী জোটবদ্ধ হয়েছে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাম্প্রতিক সংঘাত বুঝতে হলে আসলে সেখানকার ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট-এনইউজি কে বুঝতে হবে। এনইউজি বা ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট হচ্ছে একটি বেসরকারি প্রশাসন।

এনইউজি হচ্ছে মিয়ানমারের এক ধরনের ‘নির্বাসিত সরকার’। অর্থাৎ বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর সমন্বয়ে এমন একটি সরকার গঠন করা হয়েছে যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় না থাকলেও জান্তা সরকারের বিরোধীপক্ষ হিসেবে কাজ করছে। এই তিনটি সশস্ত্র গোষ্ঠী ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট-এনইউজি-কে সমর্থন দিচ্ছে।

এই থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স বা মিয়ানমারের সশস্ত্র এথনিক আর্মড গ্রুপগুলোর কোয়ালিশন তৈরি হয়েছে এনইউজি এর ছত্রছায়ায়। সেনা অভ্যুত্থানের বিরোধী অ্যাক্টিভিস্ট ও সাবেক কিছু সংসদ সদস্য মিলে ২০২১ সালে সেনা অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে তারা এই সরকার গঠন করে। এনইউজি’র পক্ষে মিয়ানমারে জনসমর্থন রয়েছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এদেরকে স্বীকৃতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতিনিধিত্বমূলক কার্যালয় রয়েছে এদের।

ইউনাইটেড ইন্সটিটিউট অব পিসের তথ্য অনুযায়ী, কারেন, কাচিন, কারেন্নি ও শিন-এরা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রশাসন ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট-এনইউজি এর সাথে সম্পৃক্ত।

এনইউজির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ইন্সটিটিউট অব পিস তাদের আর্টিকেলে জানায়, এনইউজি প্রায় ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিল সংগ্রহ করেছে এবং এর বেশিরভাগ অংশই সশস্ত্র প্রতিরক্ষা বাহিনীর অর্থায়নে ব্যয় করা হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের নৃগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়ায় তাদের বাদ দিয়ে মিয়ানমারে মোট ১৩৫টি নৃগোষ্ঠী রয়েছে। এদের মধ্যে তুলনামূলক শক্তিশালী গোষ্ঠীগুলোর সশস্ত্র বাহিনী রয়েছে। গোষ্ঠীগুলো স্বায়ত্বশাসনের দাবিতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সশ্রস্ত্র সংগ্রাম করছে। ১৯৪৮ সাল থেকে এই নৃগোষ্ঠীগুলো সশ্রস্ত্র সংগ্রাম করলেও কোন সশ্রস্ত্র সংগঠন সরকারকে এতটুকু নাড়া দিতে পারেনি। তবে ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবরের পর পরিস্থিতি পাল্টে গেছে।

বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো স্থানীয়ভাবেই নিজেরা নিজেরদের রসদ যোগাড় করে দেয়। তাদের অস্ত্র দেয় কারা? চীন থেকে অস্ত্রের সরবরাহ পায়। আর এটা আসে তান এবং ওয়া, কাচিন এবং আরাকান আর্মির মাধ্যমে। চীনের নামের সঙ্গে থাইল্যান্ডের নামও জড়িয়ে আছে। যদিও এই দুটি দেশ বিদ্রোহীদের অস্ত্র দেয়ার বিষয়টি শুরু থেকে অস্বীকার করে আসছে।

বিএনএনিউজ/ বিএম

Loading


শিরোনাম বিএনএ