বিএনএ,ডেস্ক : রাজনীতি হচ্ছে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা, এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার কৌশলী খেলা। অনেকটা দাবা খেলার মতো এই খেলা কখনো দৃশ্যমান কখনো পর্দার অন্তরালে। চিন্তা-ভাবনা করে দিতে হয় চাল। প্রচুর জনসমর্থন থাকার পরও ভূ-রাজনীতির একটি মাত্র ভুল চালে বিএনপি ১৭ বছর ক্ষমতা বলয়ের বাহিরে। তার ধারাবাহিকতায় আরও ৫ বছর যুক্ত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করার মাধ্যমে। গত ৬ মাসের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নানা ভাবে আওয়ামী লীগকে প্রচন্ড চাপ দিয়ে আসছিল। এমন কী ভিসা নীতিও আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ হত্যা ও সহিংস ঘটনায় প্রকারান্তরে বিএনপির পক্ষ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার অনুসারি দেশগুলো। এতে বিএনপির নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে হরতাল অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে ।
কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে। শুক্রবার ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদেশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের ‘টু-প্লাস-টু’ বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতের বিদেশ সচিব ভিনয় কোয়াত্রা।
তিনি বলেছেন যে, একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশকে সেদেশের মানুষ যেভাবে দেখতে চায়, সেই ‘ভিশন’কে ভারত কঠোরভাবে সমর্থন করে। তিনি এটাও বলেছেন, “বাংলাদেশের নির্বাচন সেদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং সেদেশের মানুষই তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের এমন কড়া বার্তা বিএনপির পাতের ভাতে ছাই দেয়ার মতো ঘটনা। ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনের আগে ভারতের কাছে গ্যাস রপ্তানীর জন্য চাপ দিয়েছিলেন খোদ তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। আওয়ামী লীগ রাজি না হওয়ায় বিএনপিকে ছায়া দিয়ে ক্ষমতাসীন হতে সহায়তা করেছিলো ভারত। সেই বিএনপির প্রতি কেন বারবার মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ভারত? এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর।
২০০৪ সালের পহেলা এপ্রিল রাত পৌনে ১১টা। চট্টগ্রামের সিইউএফএল সার কারখানার জেটিতে মাছ ধরার দুটি ট্রলার থেকে খালাস করা হয় ১০ ট্রাক অস্ত্র। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ রাষ্ট্রের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা এই অস্ত্রের চালান খালাসের মনিটরিং করে। এই অস্ত্রের চালান বুঝে নিতে সেই সময় সিইউএফএল সার কারখানার কাছে অবস্থান করছিনেন ভারতের বিচ্ছন্নতাবাদী উলফা নেতারা ও বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। বিষয়টি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ জেনে যায়। ভারতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে বিএনপি এবং জামায়াত জোটের সহায়তায় ওই অস্ত্র আনা হয়।সবকিছু জেনেও নীরব ছিলেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
তৎকালীন ভারতের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিআইএ’র সাবেক উপপ্রধান মেজর জেনারেল গগনজিৎ সিং বলেন ১০ ট্রাক অস্ত্র চালানের কেন্দ্র বিন্দুতে ছিলেন বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপাসন তারেক রহমান তার সহযোগীরা। এর ৪ মাস আগে চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে একটি হোটেলে বৈঠক হয় উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়া ও পাকিস্থানের জঙ্গী নেতা সালাউদ্দীনের সঙ্গে।
গগনজিৎ সিং এর বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করেছেন খোদ উলফার সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়া। সিলেটের হালুয়াঘাটসহ বিভিন্ন সীমান্তে উলফার ঘাটি ছিল। অস্ত্র আনার বিষয়টি তৎকালীন সরকার জানাতো।ভারতের সঙ্গে বিরোধ আছে এমন দুইটি দেশের ফাঁদে পা দিয়ে তৎকালীন বিএনপি সরকার ভারত সরকারকে অস্থিশীল করতে ১০ ট্রাক অস্ত্র চালানের তত্ত্বাবধান করেছিল। কিছু অস্ত্র জামায়াত ইসলামীর ক্যাডারদের কাছে পৌছানোর কথা ছিল।
মূলত: ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাত থেকে ভারতের সঙ্গে বিএনপির সর্ম্পকের টানাপোড়েন শুরু হয়। ভারতে এর মধ্যে ক্ষমতার পালা বদল হলেও রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে বিএনপিকে একচুলও ছাড় দিতে রাজি নয় ভারত। বিএনপিকে সেই ১০ ট্রাক অস্ত্র চালান ও জামায়াতের সঙ্গে সখ্যতার খেসারত দিতে হচ্ছে । ভারত মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান দেশগুলোর নগ্ন সমর্থন পাওয়ার পরও বিএনপির লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথটা বড়ই বন্ধুর হয়ে ওঠেছে। সেই বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছানোর সামর্থ্য বিএনপির আছে কি না, সেটা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছু দিন।
বিএনএ/ শাম্মী, ওজি,ওয়াইএইচ