বিএনএ, সাভার: ঢাকার সাভারে বকেয়া বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করতে না পারায় বাড়িওয়ালা কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়ায় বাইরে রাত্রিযাপন করতে হয়েছে সন্তানসম্ভবা এক নারী ও তার পরিবারকে। শুধু তাই নয়, বাসা ভাড়ার জন্য চরম অপদস্থ ও গালিগালাজের শিকার হতে হয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের। এমনকি জরুরি সেবা নম্বরে জানিয়েও তারা পুলিশের কোন সাহায্য পাননি বলে অভিযোগ পরিবারটির। সোমবার দিবাগত রাত দেড় টার দিকে আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের কান্দাইল মহল্লায় বসবাসরত ভুক্তভোগী নারী তাসলিমা আক্তার ও তার স্বামী মো. রানা এসব জানান। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত তারা অভুক্ত অবস্থায় প্রতিবেশীর বাড়িতে থেকেই কর্মস্থলে গিয়েছেন। অভিযুক্ত কান্দাইল এলাকার বাড়ির মালিক কুলসুম বেগমের স্বামী প্রবাসী মো. ইউসুফ।
সন্তানসম্ভবা তাসলিমা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী কন্ট্যাক্টে কাজ করে। আমিও গার্মেন্টসে কাজ করি। এতে সংসার খরচ মোটামুটি চলে। আমার একটা বড় ছেলে আছে। এখন পাঁচ মাসের বাচ্চা পেটে আমার। আমার স্বামীও টাকা না পাওয়ায় ভাড়া দেয়া সম্ভব হইতেছিলো না। আর আমিও ঠিকমত অফিস করতে পারি নাই। আবার ওভারটাইমও করতে পারি নাই এই কারণে বেতন কম পাইছি। এই জন্যে ৩ হাজার ৫০০ টাকা কইরা আড়াই মাসের ভাড়া বাঁধছে। আইজ সন্ধ্যায় গার্মেন্টস থাইকা দেখি বাড়িওয়ালী আমাগো ঘরে তালা দিয়া দিছে। অন্য ভাড়াটিয়াসহ আশপাশে মানুষ আইসা রিকোয়েস্ট করলো কিন্তু মালিক কুলসুম বেগম শোনে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতদের কাছ থাইকা অনেক কষ্ট কইরা ৫ হাজার ট্যাকা ধার আইনা দিছি। সেটাও নিবো না বাড়িওয়ালী। উল্টা আমাগো অনেক গালিগালাজ করছে। আমরা যেন ঘরে ঢুকতে না পারি এই জন্যে রাত ১২টা পর্যন্ত চেয়ার নিয়া ঘরের সামনে বইসা আছিলো। এর আগেও একদিন ঘরে তালা দিয়া রাখছিলো। তখন সারাদিন না খাইয়া ছোট বাচ্চাটারে নিয়া আছিলাম। আইজ আবারও পোলাপান নিয়া না খাইয়া বৃষ্টির মইদ্দে বাইরে খাড়ায় আছি। মূলত আমাগো তাড়ায় দিয়া ঘরে এক লাখ ট্যাকার জিনিসপত্র আছে সেগুলা নিয়া বিক্রি করতে চায় বাড়িওয়ালী।’
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী মো. রাব্বী বলেন, বাসা ভাড়ার জন্য বাড়ির মালিক ওই ভাড়াটিয়াদের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। বৃষ্টির মধ্যে অনেক রাত পর্যন্ত সন্তান সম্ভবা ওই নারী তার ছোট একটি ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাড়ির মালিক কুলসুম বেগমকে অনেক রিকোয়েস্ট করলেও তিনি তালা খুলে দেননি। পরে আমি তাকে পাশে আরেকটা বাড়িতে আপাতত রেখেছি। এটা চরম অমানবিক। একজন প্রেগন্যান্ট নারী তার পরিবার নিয়ে অভুক্ত বাইরে রাত কাটাচ্ছে। এমন বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া দরকার।’
স্বামী মো. রানা বলেন, আমি আইজকাই হামিম গ্রুমে আমার ওয়াইফের অফিসে চাকরি পাইছি। আগে কন্ট্যাক্টে কাজ করছি। কিন্তু কন্ট্রাক্টর কাম শেষে পালায় গেলে আমি ট্যাকা পাই নাই। আইজকা বাড়িওয়ালা ভাড়া না পাইয়া আমাগো বাইর কইরা ঘরে তালা দিছে। ‘৯৯৯ এ ফোন দিছিলাম। ওখান থাইকা আশুলিয়া থানায় ধরায় দিছে। কিন্তু থানার অফিসার আমারে বলছে, আপনারাতো ভাড়া দেন নাই। এইটা বাড়িওয়ালার সাথে বইসা চেয়ারম্যান, মেম্বার নিয়া মিমাংসা করেন। ওইখানে আমাদের কিছু করার নাই।’
তবে এ ঘটনায় বাড়ির মালিক কুলসুম বেগমকে ফোন করা হলে তিনি এই প্রতিবেদকের সাথে অসদাচরণ করেন। তিনি বলেন, ‘১৮ হাজার ট্যাকা ভাড়া ভাই। তালা দিমু নাতো কি করমু? আপনিতো সবি জানেন। ফোন দিছেন ক্যা?’
মঙ্গলবার সকালে আশুলিয়া থানার ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল আউয়ালের সাথে কথা হলে তিনি এলোমেলো কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘৯৯৯ এ তো অনেক ফোন আসছে। তবে বাসা ভাড়ার ঘটনায় ৯৯৯ না, এমিন কল আসছিলো। হ্যা, হ্যা ৯৯৯ এ কল আসছিলো। এসআই মিলন ফকিরকে পাঠানো হয়েছিলো।’
সকাল পর্যন্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়নি এমন বিষয়ে এসআই বলেন, ‘সর্যি, এটাতো ৯৯৯ এর কল আসার সাথে সাথেই আমরা মিলন ফকিরকে দিয়েছি। সাথেই সাথেই মেসেজ দেয়া হয়েছে। না যাওয়ার বিষয়টি এখন আমিতো বলতে পারব না।’
সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিলন ফকিরের সাথে কথা হয়। তবে ওই সময়েও সে এমন কোন ঘটনা তাকে জানানো হয়নি বলে জানান। তবে মঙ্গলবার সকালে তাকে ফোন করেও আর পাওয়া যায়নি। রাতে একই সময় দুই দফা কথা হয় আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলামের সাথে। তিনি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানোর কথা জানালেও বাস্তবে তা হয়নি।
তিনি বলেছিলেন, ‘আচ্ছা আমি বিষয়টা দেখেতেছি। ওখানে লোক পাঠাচ্ছি।’
বিএনএ/ ইমরান খান, ওজি