বিএনএ, রাঙামাটি : আজ পার্বত্য রাঙামাটির ইতিহাসে অন্যতম বিভীষিকাময় একটি দিন। ২০১৭ সালের এই দিনে পাহাড় ধ্বসে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষের জনজীবন। এখনো ভারী বৃষ্টি হলে দুঃস্বপ্নের মতো তাড়িয়ে বেড়ায় রাঙামাটিবাসীকে।
সেদিন রাঙামাটিতে ১২ জুন সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি হলেও গভীর রাতে ভারি বৃষ্টিপাতে শুরু হয় পাহাড় ধ্বস। ১৩ জুন ভোরে আসতে থাকে পাহাড় ধ্বসের সংবাদের সাথে সাথে মৃত্যুর খবর। জেলা জুড়ে ১৪৫ স্থানে পাহাড় ধ্বসে বন্ধ হয়ে যায় সড়ক যোগাযোগ, বিছিন্ন হয়ে পড়ে বিদ্যুৎ। হাসপাতালে বাড়তে থাকে মরদেহের সংখ্যা। এতে মৃত্যু হয় সেনাসদস্য সহ ১২০ জন নারী-পুরুষ ও শিশুর।
স্থানীয়রা এই বিভীষিকাময় দিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, সন্ধ্যায় বৃষ্টি শুরু হলেও অনেকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। ফলে গভীর রাতে শহরের ভেদভেদী, মুসলিম পাড়া, শিমুলতলী, রাঙাপানি, লোকনাথ মন্দির এলাকাসহ সদর উপজেলার মগবান-সাপছড়ি ইউনিয়ন এবং পাঁচটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধ্বসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা আরও জানান, পাহাড় ধ্বসে শুরু হয় নানাবিধ সমস্যা। প্রায় ৮ দিন পর সবগুলো স্বাভাবিক হয়। ঘরবাড়ি, স্বজন হারানো হাজার হাজার মানুষ ঠাঁই নেয় আশ্রয়কেন্দ্রে। যা মনে পড়লে এখনো রাঙামাটিবাসীর চোখ ভিজে ওঠে।
সচেতন মহল বলেন, ঝুঁকি নিয়ে এখনো মানুষ পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছেন। না কমে বরং বাড়ছে বসতির সংখ্যা। রাঙামাটি পৌরসভার নয় ওয়ার্ডের ২৯ টি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্ষা এলে আবারো ঘটতে পারে এমন ঘটনা। তাই যেন এমন ঘটনার মুখোমুখি হতে না হয় তার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।
ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারী অনেকে জানান, আমরা এখানে জায়গা কিনে বসবাস করছি। এটা ছাড়া অন্য কোথাও আমাদের থাকার জায়গা নেই, আমরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোথায় যাবো?
৪ নং কাপ্তাই ইউপি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ জানান, প্রতিবছর বর্ষা আসলে আমরা আতঙ্কে থাকি। এখনো ঝুঁকি নিয়ে অনেকে বসবাস করেছেন। যদিও বৃষ্টি হলে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়। তবে এটি স্থায়ী সমাধান না বলে তিনি পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের পুনর্বাসনের জন্য দাবি জানান।
এ বিষয়ে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আমরা দুর্যোগের সময় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাস করা মানুষদের যখন বলি, সেখান থেকে সরে আসতে, তখন তারা সরেন না। অথচ তাদের অনেকেরই পরিবার ২০১৭ সালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসতি স্থাপন বন্ধে তিনি সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন।
বিএনএ/ কাইমুল ইসলাম ছোটন, ওজি