বিএনএ,চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চট্টগ্রামের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এস এম এ আজিম (৫৬)। চট্টগ্রামে পিডিবিতে চাকরি করার সময় প্রায় চার কোটি টাকার জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেন তিনি। নিজেকে আড়ালে রাখতে সেই সম্পদ রেখেছেন স্ত্রী মোছাম্মদ নবতারা নুপুরের (৪৭) নামে। চট্টগ্রাম শহরে স্ত্রীর নামে গড়েছেন ছয়তলা বাড়িসহ স্থাবর-অস্থাবর বিভিন্ন সম্পদ। তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জালে ফেঁসেছেন প্রকৌশলী স্বামী আজিম ও স্ত্রী নবতারা নূপুর।
রোববার (১৩ জুন) চার কোটি টাকার জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের ঢাকা-১ এর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক মো. হাফিজুল ইসলাম। সম্পদ বিবরণী দাখিলের পর ঢাকা ও চট্টগ্রামের যৌথ দুদকের টিম অনুসন্ধানে দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জনের তথ্য-প্রমাণ পেয়ে মামলাটি দায়ের করেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের পরিচালক মাহমুদুল হাসান ঢাকায় পিডিবির এক কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অভিযুক্ত এস এম এ আজিম বর্তমানে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক (পুর্তকর্ম) পদে আছেন। এর আগে তিনি চট্টগ্রামে পিডিবির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারা চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানার উত্তর মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডের মুনির নগরে রশিদা ম্যানশনের বাসিন্দা।
দুদক চট্টগ্রামের এক কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রামে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী থাকার সময় জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে নিজেকে আড়াল করার জন্য স্ত্রীর নামে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ গড়েছেন এবং ছদ্মবেশে স্ত্রীর নামে বিনিয়োগ করেছেন এস এম এ আজিম। তাদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, দখল ও গোপন করার অপরাধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২) ধারা ও দ.বি:১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, মামলার প্রধান আসামি পিডিবির প্রকৌশলী এস এম এ আজিমের স্ত্রী নবতারা নুপুর ৬৫ লাখ ৬৬ হাজার ৭৪৩ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ ও ২৮ লাখ ৬১ হাজার ৪২৯ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদসহ মোট ৯৪ লাখ ২৮ হাজার ১৭২ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ গোপন করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এছাড়া অপর আসামি এস এম এ আজিম চট্টগ্রামে চাকরিকালীন সময়ে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে উপার্জিত সম্পদ আড়াল করার জন্য স্ত্রী নবতারা নুপুরের নামে ৩ কোটি ৮৪ লাখ ৭৪ হাজার ৬০৭ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনে সহায়তা করা এবং স্ত্রীর নামীয় বিভিন্ন স্থাবর সম্পদ ও অস্থাবর সম্পদে ছদ্মবেশে বিনিযোগের মাধ্যমে রুপান্তর বা হস্তান্তর করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারায় এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২০১২ এর ৪ (২) ও দ.বি. ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
দুদক সূত্রে আরও জানা যায়, নবতারা নুপুরের নামে ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৩৯ হাজার ৭৪৩ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ ও ৭৫ লাখ ৭৪ হাজার ১০৮ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ অর্জনের সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায় । নবতারা নুপুর উত্তর-মধ্য হালিশহরে ক্রয়কৃত জমির উপর নির্মিত ৬ তলা ভবন সংক্রান্তে ৬৫ লাখ ৬৬ হাজার ৭৪৩ মূল্যের স্থাবর সম্পদ গোপন করার এবং আসবাবপত্র বাবদ ৫০ হাজার ১৫০ টাকা, ইলেকট্রনিক্স বাবদ ১২ লাখ ৩১ হাজার ৬২৭ টাকা। ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড হালিশহর শাখার হিসাব নং ১৬৫.১৫১.৫৭৬৮৩ সংক্রান্তে ১৫ লাখ ৭৯ হাজার ৩০৭ টাকা এবং আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেডের হিসাব নং ২০৩০৫০৫৩৮৮০৩৫ সংক্রান্তে ৩৪৫ টাকাসহ মোট ২৮ লাখ ৬১ হাজার ৪২৯ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ গোপন করার তথ্য পাওয়া যায়। আসামি নবতারা নুপুর ৬৫ লাখ ৬৬ হাজার ৭৪৩ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ ও ২৮ লাখ ৬১ হাজার ৪২৯ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদসহ মোট ৯৪ লাখ ২৮ হাজার ১৭২ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পাদন গোপন করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। নবতারা নুপুরের নামে মোট ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৩৯ হাজার ৭৪৩ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ ও ৭৫ লাখ ৭৪ হাজার ১০৮ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদসহ মোট ৪ কোটি ৭৫ লাখ ১৩ হাজার ৮৫১ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ এর সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়।
বিএনএনিউজ/মনির