বিএনএ,ঢাকা: মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হওয়ার আগে আসামিকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না।রাখতে হবে সাধারণ সেলে।
সোমবার (১৩ মে) হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো.বজলুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলের শুনানি শেষে এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত তিন কারাবন্দির রিটের শুনানি নিয়ে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জেল কোডের ৯৮০ বিধি কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না তাও জানতে চেয়েছিলেন উচ্চ আদালত।
এর আগে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর ওই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয়। এরপর রায় ঘোষণার জন্য (সিএভি) অপেক্ষমান রাখা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় আজ রায় ঘোষণা করা হলো।
রুল শুনানিতে আদালত এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী ও এস এম শাহজাহান মত নেন। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন শুনানি করেন। আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন মোহাম্মদ শিশির মনির।
আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক সাজা কার্যকর করার আইনগত কোনো বিধান নেই। মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করতে কয়েকটি আবশ্যকীয় আইনগত ধাপ অতিক্রম করতে হয়।
প্রথমত, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা মতে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে। একই সঙ্গে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১০ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে আপিল দায়েরের বিধান রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, হাইকোর্ট বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি সাংবিধানিক অধিকার বলে আপিল বিভাগে সরাসরি আপিল করতে পারেন।
তৃতীয়ত, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৫ অনুযায়ী আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের আইনগত সুযোগ রয়েছে। সর্বোপরি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৯ এর অধীন রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। রাষ্ট্রপতি উক্ত ক্ষমার আবেদন না মঞ্জুর করলে তখন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আইনগত বৈধতা লাভ করে।
কিন্তু বাংলাদেশে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পরই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নির্জন কনডেম সেলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে রাখা এসব প্রক্রিয়া শেষ করতে ১০ থেকে ১২ বছর পার হয়ে অথচ অনেকের পরবর্তীতে সাজা কমে। অনেকে খালাসও পান।
শিশির মনির আরও বলেন, জেল কোডের ৯৮০ বিধি চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। সেখানে বলা আছে, মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের পৃথকভাবে কনডেম সেলে রাখা হবে।
তিন আবেদনকারী হলেন, চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির ও কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এসব আসামির আপিল হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন।
২০২১ সালের ১৮ জুন একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন যুক্ত করে গত ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ রিট আবেদনটি করা হয়।
বিএনএনিউজ/রেহানা,ওজি/ হাসনা