বিএনএ, চট্টগ্রাম : ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ পুরো চট্টগ্রামে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বন্দরের মেরিন, নিরাপত্তা, ট্রাফিক ও সচিব বিভাগের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
শুক্রবার (১২ মে) সন্ধ্যা ও রাতে দফায় দফায় বৈঠক করে করণীয় ও অ্যাকশন প্ল্যান নির্ধারণ করেছেন বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংকেতের ওপর নির্ভর করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অ্যালার্ট জারি করে থাকে। ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলায় বন্দরের নিজস্ব অ্যালার্ট-৪ জারি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সাইক্লোন স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা হয়েছে। একই সঙ্গে লাইটার জাহাজগুলোকে বন্দরের উজানে সদরঘাট থেকে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু এলাকার দিকে নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জেটি ও বহির্নোঙরে থাকা জাহাজগুলোকে ইঞ্জিন চালু রাখতে বলা হয়েছে যাতে তাৎক্ষণিক মুভমেন্ট করতে পারে। বন্দরের নিজস্ব জাহাজগুলোকে নিরাপদে থেকে ডাবল মুরিং করতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট বাতিল করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
এ ব্যাপারে শনিবার সকালে বেবিচক জানিয়েছে, আজ শনিবার (১৩ মে) ও আগামীকাল রোববার (১৪ মে) চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশাল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে রোববারের এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও রোববারের সব পরীক্ষা স্থগিত করেছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মিজানুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় ধারাবাহিক সভার অংশ হিসাবে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ উপকূলীয় অন্তত ২০ জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট ইউএনওকে ভার্চুয়াল বৈঠকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়।
তিনি বলেন, আমাদের এখন মূল ফোকাল পয়েন্ট হল কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম। এর মধ্যে কক্সবাজারকে প্রায়োরিটি দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সেন্টমার্টিন হচ্ছে ফোকাল এরিয়া।
তিনি আরও বলেন, “উপকূলীয় এলাকায় ইতোমধ্যে ধান কাটা শেষ হওয়ায় এখন বড় ধরনের স্বস্তি। কিন্তু আশ্রয় কেন্দ্রে পর্যাপ্ত খাবার, অবস্থানের সুব্যবস্থা, নারীর, শিশু ও বয়োঃবৃদ্ধদের বিশেষ নজর রাখাসহ যাবতীয় কাজগুলোর বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে।”
এ দিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় চট্টগ্রামে ২৮৪টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। শনিবার (১৩ মে) গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী।
এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি খোলা হয়েছে জরুরি কন্ট্রোল রুম।
ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় মোট ২৮৪টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার ১৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীন ৫টি করে মোট ৭০টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রয়েছে।
এছাড়া জেলার ২০০ ইউনিয়নে জন্য একটি করে মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন ৯টি আরবান ডিসপেনসারিতে ৯টি ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৫টি মেডিক্যাল টিম রাখা হয়েছে।
বিএনএ/ ওজি