17 C
আবহাওয়া
৭:৩৯ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » মিতু হত্যা মামলা : সাইদুল গ্রেপ্তার

মিতু হত্যা মামলা : সাইদুল গ্রেপ্তার


বিএনএ,চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার এজহার নামীয় আসামি সাইদুল ইসলাম সিকদার ওরফে শাকুকে (৪৫) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন-৭ (র‌্যাব)। সে মামলার ৭ নম্বর আসামি।

বুধবার (১২ মে) রাত ৮টার দিকে রাঙ্গুনিয়ার রানীরহাট বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র‌্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নুরুল আবছার।

গ্রেপ্তার সাইদুল ইসলাম সিকদার মিতু হত্যা মামলার অন্যতম আসামি মো. কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুসার (৪০) ভাই। মুসা এ মামলার ২ নম্বর আসামি।

এর আগে ২০১৬ সালের ১ জুলাই সাইদুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে সময় তার বিরুদ্ধে মিতু হত্যায় মোটরসাইকেল সরবরাহ করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। পরে সাইদুল জামিনে মুক্তি পান।

অন্যদিকে সাইদুলের ভাই মুসা এখনও নিখোঁজ। এর আগে ২০১৬ সালের ৪ জুলাই মুসার স্ত্রী পান্না আক্তার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মুসাকে আদালতে হাজির করার দাবি করেন। ২২ জুন বন্দর থানা এলাকায় তাদের এক পরিচিত জনের বাসা থেকে মুছাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

এরআগে বুধবার (১৩ মে) বিকেল সোয়া ৩টায় আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় তার স্বামী পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম সরোয়ার জাহানের আদালতে তোলা হলে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। এছাড়া দুপুর ১টার পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দুই সদস্য আদালতের পাঁচলাইশ থানার প্রসিকিউশন শাখায় মিতু হত্যার ডকেটসহ ফাইনাল রির্পোট জমা দেয়। এতে মামলাটি নিষ্পত্তি করে মামলায় বাদী বাবুল আক্তারের সম্পৃক্তার কথা উল্লেখ করা হয়।

আর দুপুর পৌনে ১টার দিকে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পাঁচলাইশ থানার মামলা নম্বর ৫। মামলাটি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কবিরুল ইসলামকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

বাকি আসামিরা হলেন- মো. কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুসা (৪০), এহতেশামুল হক ওরফে হানিফুল হক ওরফে ভোলাইয়া (৪১), মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম (২৭), মো. আনোয়ার হোসেন (২৮), মো. খায়রুল ইসলম ওরফে কালু (২৮), সাইদুল ইসলাম সিকদার (৪৫) ও শাহজাহান মিয়া (২৮)।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মিতু হত্যার পর সিসিটিভি ফুটেজের ছবি বাবুল আক্তারকে দেখানো হয়। তখন তিনি হত্যায় নেতৃত্ব দেয়া কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুসাকে তার দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত ও পারিবারিকভাবে পরিচিত সোর্স হওয়া সত্ত্বেও কৌশলে তাকে শনাক্ত না করে জঙ্গীদের দ্বারা হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে দাবি করে ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা করেন। ওই মামলাটি তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার বাদী বাবুল আক্তারসহ তদন্তে প্রাপ্ত ৮ আসামির সবাইকে মিতু হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে প্রমাণ পান।

এজাহারে বাদী আরও উল্লেখ করেন, বাবুল আক্তার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কক্সবাজার জেলায় চাকরি করাকালীন ইউএনএইচসিআরের ফিল্ড অফিসার (প্রোটেকশন) গায়ত্রী অমর শিং এর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এতে আমার মেয়ের পরিবারে চরম অশান্তি দেখা দেয়। বাবুল আক্তার পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ায় প্রতিবাদ করলে আমার মেয়ে মিতুকে বিভিন্ন সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে।

‘২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত বাবুল আক্তার সুদানে মিশনে কর্মরত থাকাকালীন তার ব্যবহার করা মোবাইল নম্বর চট্টগ্রামের বাসায় রেখে গেলে গায়ত্রী ওই নাম্বারে বিভিন্ন সময় ২৯ বার বিভিন্ন ম্যাসেজ দেন। এই ম্যাসেজগুলো আমার মেয়ে মিতু তার একটি খাতায় নিজ হাতে লিখে রাখে।’

মিতুর বাবা এজাহারে আরও উল্লেখ করেন, সর্বশেষ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার কয়েকমাস আগে বাবুল আক্তার চীনে ট্রেনিংয়ে গেলে গায়ত্রী অমর শিং এর উপহার দেয়া ‘তালেবান’ ও ‘বেস্ট কিপ্ট সিক্রেট’ নামক দুটি বই খুঁজে পায় আমার মেয়ে। তালেবান নামক বইয়ের তৃতীয় পাতায় গায়ত্রীর নিজ হাতে ইংরেজিতে লেখা আছে, “05/10/13, Coxs Bazar, Bangladesh.” hope the memory of m offering you this personal gift, shall eterrnalizeour wonderful bond, love you, Gaitree.”

একই বইয়ের শেষ পৃষ্টা ২৭৬ এর পরের পাতায় বাবুল আক্তারের নিজের হাতে ইংরেজিতে গায়ত্রীর সাথে সাক্ষাতের কথা লেখা আছে। তিনি লিখেছেন, “First meet: 11 sept, 2013, First PR in Cox. 07 oct 2013. G Birth Day, 10 Octobar, First kissed 05, Oct 2013; First beach walk: 8th Oct 2013, 11 Oct 2013, Marmaid with family, 12 oct 2013, Temple Ramu prayed togather, 13 oct 2013; Ramu Rubber Garden Chakaria night beach walk.

এছাড়া বেস্ট কিপ্ট সিক্রেট নামক বইয়ের প্রথম দিকের দ্বিতীয় পাতায় গায়ত্রীর নিজ হাতে ইংরেজিতে লেখা আছে, “5/10/2013 with my sincere Love” Yours Gaitree.

এজাহারের আরও লেখা হয়, ‘উল্লেখিত ঘটনার প্রেক্ষিতে উভয়ের মধ্যে পারিবারিক অশান্তি চরমে পৌঁছে। বাবুল আক্তারের এ ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ডে আমার মেয়ে মিতু প্রতিবাদ করলে তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চলে। এই নির্যাতনের বিষয়টি আমার মেয়ে মিতু আমাদেরকে জানায়। বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারি, আমার মেয়ের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলার বাদী বাবুল আক্তারসহ ৮ আসামি জড়িত আছে বলে তদন্তকারী কর্মকর্তা তার তদন্তে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়ায় উক্ত মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এমতাবস্থায় আমার মেয়ে মিতু হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচারের নিমিত্তে ৮ বিবাদীর বিরুদ্ধে আমি নিজে এজাহার দায়ের করলাম।’

হত্যাকাণ্ডের পাঁচ বছর পর গত মঙ্গলবার (১১ মে) সকালে বাবুল আক্তার চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী এলাকায় পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ে যান। সেখানে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক (মেট্রো) সন্তোষ কুমার চাকমাসহ ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের একটি টিম বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। গত সোমবার (১০ মে) পিবিআইয়ের ঢাকা অফিসে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনকে ডেকে নিয়ে কথা বলেন কর্মকর্তারা। মোশাররফ হোসেন মেয়ে হত্যার জন্য বাবুল আক্তারকে দায়ী করে আসছিলেন।

২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। ওই সময় পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। চট্টগ্রামে ফিরে তিনি পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।

মামলায় তিনি বলেন, তার জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রী আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে থাকতে পারেন। তবে সপ্তাহ দুয়েকের মাথায় মিতু হত্যার তদন্ত নতুন মোড় নেয়।

বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন ও শাশুড়ি সাহেদা মোশাররফ অব্যাহতভাবে হত্যাকাণ্ডের জন্য বাবুল আক্তারকে দায়ী করে থাকেন। তবে পুলিশের তরফ থেকে কখনোই এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি।

শুরু থেকে চট্টগ্রামের ডিবি পুলিশ মামলাটির তদন্ত করে। তারা প্রায় তিন বছর তদন্ত করেও অভিযোগপত্র দিতে ব্যর্থ হয়। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালত মামলাটির তদন্তের ভার পিবিআইকে দেয়।

মিতু হত্যার পর বাবুল আক্তার প্রথমে ঢাকার মেরাদিয়ায় শ্বশুরবাড়িতে উঠেছিলেন। কিছুদিনের মাথায় ২০১৬ সালের ২৪ জুন বাবুল আক্তারকে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে এনে প্রায় ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর ওই বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়।

পরে পুলিশ জানায়, বাবুল চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। পরে বাবুল আক্তার দাবি করেন, তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেননি। পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের জন্য ৯ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের কাছে তিনি আবার আবেদন করেন। ৬ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বাবুলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে চাকরিচ্যুত করা হলো।’

বাবুল আক্তার পুলিশের চাকরি ছেড়ে প্রথমে আদ–দ্বীন হাসপাতালে যোগ দেন। সম্প্রতি তিনি চীন থেকে পানি পরিশোধনকারী যন্ত্র এনে বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন বলে জানা গেছে।

বিএনএনিউজ/মনির

Loading


শিরোনাম বিএনএ