২ মার্চ ১৯৪৮ তারিখে ২য় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করলে তৎকালীন মুসলিম ছাত্রলীগের পাবনা শাখার নেতা হিসেবে আবদুল মতিন ভাষা-আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং ওই সময় পাবনার আঞ্চলিক আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠনের (১১ মার্চ ১৯৫০) পর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে চাঙ্গা করার জন্য তিনি নানাভাবে তৎপর হন। তাঁরই উদ্যোগে ১৯৫১ সালের ৫ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রভাষা পতাকা দিবস পালিত হয়। ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দীন কর্তৃক ঢাকার পল্টনে এক জনসভায় উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা দেয়া হলে প্রতিবাদকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আবদুল মতিন। ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত আন্দোলনকে চাঙ্গা রাখতে আবদুল মতিন অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেন।
১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দীন কর্তৃক ঢাকার পল্টনে এক জনসভায় উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা দেয়া হলে এজন্যে প্রতিবাদকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আবদুল মতিন।
নাজিমুদ্দীনের একতরফা ঘোষণার প্রতিবাদে ৩০ জানুয়ারি ১৯৫২ তারিখে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের এক সভায় ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ তারিখে সমগ্র তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল, সভা ও বিক্ষোভ মিছিলের সিদ্ধান্ত হয়। আবদুল মতিন উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন। পরবর্তী দিন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে ৩১ জানুয়ারি ১৯৫২ তারিখে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠনের সময় ২১ ফেব্রুয়ারির উক্ত কর্মসূচিকে সমর্থন করা হয় এবং আবদুল মতিনকে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা পরিষদের সদস্যরূপে গ্রহণ করা হয়।
জনাব আবদুল মতিন বলেন, ‘যতদিন না বাংলা ভাষার ন্যায়সঙ্গত দাবিকে প্রদেশ ও কেন্দ্রে পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে, ততদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তথা সমগ্র ছাত্র সমাজ ক্ষান্ত হচ্ছেন না।’
১৯৫২ সালের ২৭ মার্চ পল্টনে খাজা নাজিমুদ্দীনের বক্তৃতায় উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা করা হয়। এরই প্রতিবাদে ২১ ফেব্রুয়ারির হরতাল কর্মসূচির ডাক তিনিই দিয়েছিলেন এবং সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ তা সমর্থন করেছিল। বস্তুত অমর ‘একুশ’ সৃষ্টির পথ এভাবেই অগ্রসর হয়েছিল। মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আমতলার সভায় মতিনের ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার দূরদর্শী ও ঐতিহাসিক ভাষণ ছাত্রদের উদ্ধুদ্ধ করেছিল। একুশের হত্যাকাণ্ডের পর ডা. গোলাম মাওলার কক্ষে যে সভা আহ্বান করা হয় সেখানে তিনি উপস্থিত ছিলেন। ছাত্র হত্যার পর তার স্বাক্ষরে লিফলেট ছাপা হয় এবং তা ছাত্র জনতার মাঝে বিলি করা হয়। পরের দিন গায়েবানা জানাজা ও শোক মিছিলে তিনি শরিক হন। অমর একুশের আন্দোলনে আবদুল মতিনের অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।
সূত্র: যারা অমর ভাষা সংগ্রামে, লেখক: এমআর মাহবুব
সম্পাদনায়: মনির ফয়সাল
পড়ুন আগের পর্ব: ভাষা সৈনিক(৯) আবদুল মতিন