বিএনএ, ঢাকা: যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে লন্ডনে বিনামূল্যে একটি ফ্ল্যাট দিয়েছিলেন আবাসন ব্যবসায়ী আবদুল মোতালিব। গত ৩ জানুয়ারি এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বৃটিশ সংবাদপত্র ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। এই ঘটনা নিয়ে টিউলিপের মন্ত্রীত্ব যায় যায় অবস্থা। টিউলিপের দূর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে এবার সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমানের দূর্নীতির চিত্র সামনে এনেছে বৃটিশ সংবাদমাধ্যম সানডে টাইমস ও ডেইলি মেইল।
গত শনিবার ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের ছেলে শায়ান ব্রিটিশ রাজার পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত দাতব্য সংস্থা ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্টে ২ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড অনুদান দিয়েছেন। শায়ান রহমান ওই প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্টের ওয়েবসাইটে এখনও তার পরিচয় বেক্সিমকো গ্রুপের সিইও হিসেবে উল্লেখ রয়েছে।
দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করার লক্ষ্যে ২০০৭ সালে ‘ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্ট’ নামের এই দাতব্য সংস্থা গড়ে তুলেছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ রাজপুত্র তৃতীয় চার্লস। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য সানডে টাইমস জানিয়েছে, ২০১৮ সালে এই সংস্থা বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। সে বছর লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসে এক নৈশভোজের অনুষ্ঠানে সবার সামনে সায়ান রহমানের প্রশংসা করেছিলেন চার্লস। বলেছিলেন, ‘আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি যে সায়ান রহমান যে সহায়তা দিচ্ছেন, তার জন্য আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ।’
এদিকে ৯ জানুয়ারি সানডে টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শায়ান এফ রহমান একটি অফশোর ট্রাস্টের মাধ্যমে উত্তর লন্ডনের গোল্ডার্স গ্রিন এলাকায় ১৩ লাখ পাউন্ড দিয়ে একটি বাড়ি কিনেছিলেন। যার আনুমানিক মূল্য ২০ কোটি টাকা। ওই বাড়িতে বিনা ভাড়ায় থাকতেন টিউলিপের মা ও শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা। এ ছাড়া লন্ডনের গ্রসভেনর স্কয়ারে সায়ান রহমানের ৪ কোটি ২০ লাখ পাউন্ড দামের একাধিক সম্পদ রয়েছে।
সানডে টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, টিউলিপ সিদ্দিকের মতো একজন দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী নিজেই যখন অভিযোগের মুখে থাকেন, তা আসলে ‘নির্মম রসিকতা’ হয়ে যায়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী টিউলিপের উচিত জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া ও পদত্যাগ করা। তা না করে তিনি উল্টো নিজের পক্ষে সাফাই গাইছেন।’
এছাড়া ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সালমান এফ রহমানের ছেলে শায়ান এফ রহমানের শেখ রেহানাকে বাড়ি উপহার এবং ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্টে অনুদান প্রসঙ্গে কৌতুক করে বলেন, ‘উদার মানুষ, দেখুন? কেমন উদার… আমরা এখন শায়ানের নাম বলছি। কিন্তু অনেক শায়ান আছে যারা ককটেল পার্টিতে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে তাদের নাম আসছে না।’
শায়ান এক সময় আইএফআইসি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠনে তিনি পরিচালক পদও হারান।
সালমান এফ রহমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট গত আগস্ট মাসেই সালমান, তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং পুত্রবধূ শাজরেহ রহমানের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করেছে।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রথম গ্রেপ্তার হন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তার ৪২ বছর বয়সী ছেলে সায়ান রহমান এখন লন্ডনে আছেন নাকি বাংলাদেশে আছেন তা স্পষ্ট নয়।
বিএনএনিউজ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী/ বিএম