বিএনএ, ঢাকা : আজ (১৩) জুন ’নারী উত্যক্তকরণ প্রতিরোধ দিবস বা ইভটিজিং প্রতিরোধ দিবস’। এই দিবস পালনের উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে আছে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে নারীর স্বাভাবিক চলাচল, জীবনযাপন অবাধ, সমুন্নত করা ও তাদের অধিকার এবং সন্মান বজায় রাখা।
আমাদের দেশে ইভটিজিং বা যৌন হয়রানির মাত্রা ভয়াবহভাবে বেড়ে যাওয়ায় তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে স্বতন্ত্র আইন প্রণয়ন ও তা প্রয়োগের জন্য সচেষ্ট হয়ে ব্যাপক কর্মসূচি নিয়ে থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রণয়ন করা আইনটি একটি আলাদা আইন হিসেবে দেখানো হলেও পরবর্তীকালে সেটা নারী নির্যাতন আইনের আওতায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
প্রথমবারের মতো ১৩ জুনকে ঘিরে ব্যাপকভাবে ’ নারী উত্যক্তকরণ প্রতিরোধ দিবস’ পালন করা হয় ২০১০ সালে। সে বছর দিবসটি জাতীয়ভাবে পালন করা হয়েছিল। বিশেষ করে স্কুল ছাত্রীদের প্রতি বখাটেদের উত্যক্তকরণে নেয়া হয়েছিল তাগিদ ও কর্মসূচি। এর পরের বছরও দিবসটি সবার মাঝে আলোড়ন তোলে। বর্তমান সমাজে মারাত্মক এক ব্যাধির নাম ইভটিজিং। এই ব্যাধি প্রতিরোধে প্রতিবছর ১৩ জুন ইভ টিজিং প্রতিরোধ দিবস পালন করা হয়।ইভটিজিংয়ের শিকার মূলত নারীরাই।
নারীদের প্রতিনিয়ত রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রেও ইভটিজিংয়ের শিকার হতে হয়। ইভটিজিংয়ের শিকার হওয়া এসব নারীরা অনেকে ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে, মানসিক অবসাদে ভোগে। আবার কেউ কেউ বেছে নেয় আত্মহননের পথ।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন,সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা, রাজনৈতিকভাবে সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষকতা, অশিক্ষা, কুশিক্ষা, পারিবারিক নেতিবাচক পরিবেশ, বেকারত্বের হার বৃদ্ধি, আইনের যথেচ্ছ ব্যবহার ও সুষ্ঠু প্রয়োগ না করার বিষয়টিকে ইভটিজিংয়ের কারণ বলে চিহ্নিত করেন। ইভটিজাররা অপরাধ করেও বারবার পার পেয়ে যাওয়ার কারণে আবারও ইভটিজিংয়ে জড়িয়ে পড়ে। এ জন্য আমাদের সামাজিক অ-ব্যবস্থাও অনেকাংশে দায়ী।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতে, এই ব্যাধিকে সমাজ থেকে প্রতিহত করতে সুশীল পারিবারিক শিক্ষার ওপরই বেশি গুরুত্ব ও শিক্ষার প্রসারের পাশাপাশি নৈতিকতা বোধের চর্চাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া আইনের কঠোর প্রয়োগ ও সর্বস্তরে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিই এই ব্যাধি থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে ।
উল্লেখ্য, দেশে বিভিন্ন সময় নারী ও কিশোরীরা রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রেও উত্ত্যক্তের শিকার হচ্ছেন। ইভটিজিং প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে ইভটিজিং বা উত্যক্তকরণকে ‘যৌন হয়রানি’ স্বীকৃতি দিয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় প্রক্রিয়াধীন আইনটি দ্রুত প্রণয়ন করার দাবি জানানো হয়েছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী গত বছর যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্তের শিকার হয়েছেন অন্তত ১৪২ নারী। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন ১২২ পুরুষ। বছরটিতে উত্ত্যক্তের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ১২ নারী। এ ছাড়া যৌন হয়রানির প্রতিবাদ ও উত্যাক্ত্যের প্রতিবাদ করতে গিয়ে চার নারী ও চার পুরুষ খুন হয়েছেন।
বিএনএ,নিউজ /রেহানা/এইচ.এম/ হাসনা