।। সানভীর ইসলাম।।
বিএনএ, জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কোল ঘেঁষে চলে গেছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক। প্রতিদিন হাজারও মানুষের চলাচল দেশের অন্যতম এ মহাসড়কে। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে কাজের তাগিদে এ রাস্তায় দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু এ কর্মব্যস্ত মানুষগুলোর জন্য মাঝে মাঝে এসড়ক হয়ে উঠে বিভীষিকাময়। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে রাত নামলেই কান পাতলে প্রায়ই শোনা যায় নিরিহ মানুষের সর্বশান্ত হওয়ার আর্তনাদ। ছিনতাইকারী কবলে পড়ে হারাতে হয় সবকিছু। আর এই ছিনতাইকারীরা তাদের অপকর্মের জন্য বেঁচে নিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশারফ হোসেন হল গেইট থেকে শুরু করে জয় বাংলা গেইট পর্যন্ত জায়গাটুকু ছিনতাইকারীদের পছন্দের স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনমানবহীন জায়গা দিয়ে স্বল্পগতির পরিবহনগুলো থামিয়ে ছিনতাই করে থাকে তারা। এছাড়া মীর মোশারফ হোসেন হল গেইট সংলগ্ন সিএন্ডবি এলাকাতে দিনের বেলায়ও ছিনতাই ও পকেট মারের ঘটনা ঘটে। এ এলাকায় বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের হাত থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে বিশ্বিবদ্যালয়ের এলাকায় দেয়াল টপকে জঙ্গলে পালিয়ে যায় তারা। যার কারণে তাদের নাগাল পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়েছে।
জানা যায়, গত ১ মাসে ২০টিরও বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে গত সোমবার (৬ জুন) এক রাতে চারটা ভিন্ন ভিন্ন ছিনতাইয়ের খবর পাওয়া যায়।
ঐ রাতে ছিনতাইয়ের শিকার একজন আরিফুল ইসলাম বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ)কে বলেন, ‘গত ৬ তারিখ সন্ধ্যায় কাজ শেষ করে কোম্পানির নগদ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে আমি ও আমার বন্ধু সুমন রিক্সায় বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেই। আমরা যখন মীর মোশারফ হোসেন হলের কাছ পৌঁছাই তখন তিন জন লোক আমাদের আটকায়। এসময় তাদের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিলো। জীবনের মায়ায় যা কিছু ছিলো সব দিয়ে দিতে হয়েছে। এ সময় ছিনতাইকারীরা নগদ টাকা সহ তাদের সাথে থাকা দুটো ফোনও নিয়ে যায় ‘
নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল প্রান্তিক আর ডেইরির মাঝের রাস্তায় রাত সোয়া ৮ টার সময় এক মহিলা ডাকাতের কবলে পড়েন। মহিলা রিকশা করে নবিনগরের দিকে যাচ্ছিলেন। মহিলার ও তার বাচ্চার গলায় রামদা ধরেছিলেন। এক ট্রাক হেলপার প্রান্তিকে এসে আমাদের বলে পিছনে ডাকাতি করছে। আমরা একটু আগাতে যেতেই দেখি মহিলা রিকশায় কান্না করতে করতে আসছে।তার অলঙ্কার, টাকা সব নিয়ে চলে গেছে।’
ছিনতাইয়ের শিকার এক ব্যাক্তি তার ফেসবুক পোস্টে শেয়ার করেন, ‘আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর রাস্তা হয়ে অফিস থেকে আসার সময় অন্য যানবাহনগুলো যানজটের কারণে বিশমাইল এলাকায় থেমে থাকায় আমি একা হয়ে পড়ি। জাহাঙ্গীরনগরের মেইন গেট পার হয়ে কিছুটা যেতেই আচমকাই ঝোপের আড়াল থেকে ছুরি হাতে একজন বেরিয়ে আসে এবং আমার সাইকেল বরাবর ছুরি নিয়ে দাঁড়ায় , গামছা দিয়ে মুখ এবং মাথা বাধা ছিল তার। আমি গলা ফাটিয়ে চিৎকার করি কিন্তু আমার চিৎকারে কেউ এগিয়ে আসলো না।
আমি যথাসম্ভব দ্রুত সাইকেল টান দেই , তখন সে দুই পা সরে দাঁড়ালে কোনোমতে চিপা দিয়ে কেটে পড়ি। ছিনতাইকারী অপ্রস্তুত হয়ে তখন ছুরির গোড়ার দিক দিয়ে আমার পেশিতে সজোরে আঘাত করে ঝোপের ভিতর ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে। সাইকেল স্লিপ করে কোনোমতে দ্রুত কেটে পড়ি আমি। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানি ছাড়া আমি সেদিন হয়তো প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারতাম না। আগের দিনের মতো অনুরূপভাবে আজকে অফিস থেকে আসার সময় গাড়ির আড়াল থেকে খেয়াল করলাম একই জায়গায় আজকে ৭/৮ জন এর ছিনতাইকারী একদল দাঁড়িয়ে আছে গাছের আড়ালে । তাদেরকে আবছা আলোয় ভালো করে না তাকালে দেখা যায় না কিন্তু তাদের হাতে থাকা ধারালো অস্ত্রগুলো গাড়ির লাইটের আলোতে চিকচিক করছে তা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।’
জয় বাংলা গেইটের পাশের অস্থায়ী চায়ের দোকানী রফিকুল ইসলাম বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ)কে বলেন, ‘আমি এখানে দীর্ঘদিন যাবত দোকান করি। আমি প্রায় সময় এখানে কিছু মানুষদের দেখি যারা কিছুক্ষণ আগে ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে এসেছে। মাঝেমধ্যে এদের কারো কারো শরীরের ক্ষত থাকে। ছিনতাইকারীরা তাদের কুপিয়ে জখম করতো। এছাড়া ব্যাক্তিগত গাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে ছিনতাই ও গাড়ির ব্যাটারি খুলো নেওয়ার ঘটনা ঘটে সবসময়ই।’
তবে সিএন্ডবি এলাকার দোকানিরা এ বিষয়ে কোনো মুখ খুলতে চায়নি। ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো নিয়ে সাধারণ পথচারী সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
জাবির দর্শন ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী এ টি এম নুরে নেওয়াজ বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ)কে বলেন, ‘নানা কারণে আমাদের রাতে ক্যাম্পাসে ফিরতে হয়। কিংবা ক্যাম্পাস থেকে বাইরে যেতে। প্রতিনিয়ত এ সকল ছিনতাইয়ের ঘটনা আমাদের ভীষণ ভাবে উদ্বীগ্ন করে তুলেছে। প্রান্তীক (জয় বাংলা) গেইটের সামনে ডিভাইডার দেওয়া ওপাশে কী হচ্ছে কিছুই দেখা যায় না। এ বিষয়ে আমরা অবশ্যই প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলায় নিয়োজিত কর্মকর্তাদের দৃষ্টি চাই।’
এ বিষয়ে জানতে আশুলিয়া থানার ওসি এস. এম. নুরুজ্জামানের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
বিএনএ/এমএফ