বিএনএ,চট্টগ্রাম: সিরিয়া ফেরত আনসার আল ইসলামের ‘আইটি বিশেষজ্ঞ’সাখাওয়াত আলী ওরফে লালুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। শনিবার (১২ জুন) বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হোসেন মোহাম্মদ রেজার আদালতে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। বিষয়টি জানিয়েছেন সিএমপির সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী শাহাবুদ্দিন আহমেদ।
এরআগে শনিবার বিকেলে সিএমপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, গতকাল শুক্রবার বিকেলে দক্ষিণ খুলশী আবাসিক এলাকাস্থ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় আহলে হাদীস জামে মসজিদের সামনে থেকে সিরিয়া ফেরত জঙ্গি নেতা আনসার আল ইসলামের আইটি বিশেষজ্ঞ শাখাওয়াত আলী ওরফে লালুকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম।
সিএমপির কাউন্টার টেররিজম বিভাগের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাছিব খান বলেন, সিরিয়ায় অবস্থানের পর ইন্দোনোশিয়া হয়ে গত ২২ মার্চ সাখাওয়াত বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা তাকে নজরদারি শুরু করি। চট্টগ্রামে নিজের বাড়িতে অবস্থান করে তিনি আনসার আল ইসলামের পক্ষে অনলাইনে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উগ্র মতাদর্শ প্রচার শুরু করেন। গতকাল (শুক্রবার) তিনি উগ্র মতাদর্শের জিহাদি বইপত্র নিয়ে দক্ষিণ খুলশীতে যান। আমরা তথ্য পাই, জিহাদি কার্যক্রম সংগঠনের উদ্দেশ্যে বৈঠক করতে তিনি সেখানে গেছেন। তখন আমরা তাকে গ্রেপ্তার করি।
সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, সাখাওয়াত চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়ায় পুলিশ লাইন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর ভারতে চলে যান। সেখান থেকে এইচএসসি পাস করেন। সেখানে বসবাসরত আরিফ নামে এক বাংলাদেশির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ভারতে থাকা অবস্থায় আরিফের শ্যালিকাকে বিয়ে করেন। পরবর্তীতে তিনি স্ত্রীসহ চলে যান লন্ডনে। ২০০৯ সালে গ্রিনিজ ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সাইয়েন্সে এমএসসি সম্পন্ন করেন। ২০১০ সালে তিনি বাংলাদেশে ফেরেন।
কয়েক বছর বেকার থাকার পর ২০১৪ সালে ‘কম্পিউটার অনলাইন ওয়েব ফার্ম’ নামে একটি অনলাইন ব্যবসা শুরু করলেও মাত্র ছয় মাসের মধ্যে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৫ সালে তিনি কিছুদিন চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লায় ‘তাজ সায়েন্টিফিক’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ২০১৬ সালে তাদের পারিবারিক ব্যবসা ‘ওয়াশো ড্রাই ক্লিনার্স’এ বসতে থাকেন। ২০১৭ সালে তুরস্কে চলে যাবার আগপর্যন্ত তিনি সেখানেই বসতেন।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট জানায়, মূলত লন্ডন থেকে ফেরার পর ২০১২ সালের দিকে সাখাওয়াতের মধ্যে পরিবর্তন আসতে থাকে। এসময় সে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তার স্ত্রীর দুই ভগ্নিপতি আরিফ ও মামুনই মূলত তাকে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের যুক্ত করে।
২০১৩ সালে আনসার আল ইসলামের সামরিক কমান্ডার বরখাস্ত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়ার সঙ্গে আরিফ ও মামুনের মাধ্যমে বৈঠক করেন সাখাওয়াত। তখন বরখাস্ত মেজর জিয়াকে মোয়াজ নামে তাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। এরপর সে জিয়ার ভাবশিষ্যে পরিণত হয় এবং পুরোপুরি সশস্ত্র জিহাদি কর্মকাণ্ডে মনোনিবেশ করেন। এছাড়া আনসার আল ইসলামের পক্ষ থেকে দায়িত্ব পেলে সংগঠনটির তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডও পরিচালনা করতে থাকেন সাখাওয়াত। অর্থাৎ অনলাইনের মাধ্যমে জিহাদের প্রচার করতে থাকেন। এছাড়া নগরীর মনসুরাবাদ এলাকার হুজুর শফিক, লালখান বাজার এলাকার একটি এসি’র দোকানে কর্মচারি ওমর ফারুককে নিয়ে দেশজুড়ে আনসার আল ইসলামের সদস্যদের সংগঠিত করার কাজ শুরু করেন।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সরকার উৎখাতে ধর্মান্ধ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার একটি অভ্যুত্থান পরিকল্পনা নস্যাৎ করা হয়েছে। অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টাকারীদের নেতা হিসেবে তখন জানানো হয় মেজর জিয়ার নাম। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া জিয়া পালিয়ে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামে যুক্ত হন এবং পরবর্তীতে সামরিক কমান্ডারের দায়িত্ব পান। গুলশানের হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর জিয়াকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল সরকার।
বিএনএনিউজ/মনির