19 C
আবহাওয়া
১০:৪৬ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ২১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল:সংসদীয় আসন-৬০(নাটোর-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল:সংসদীয় আসন-৬০(নাটোর-৩)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে নাটোর-৩ আসনের হালচাল। নাটোর-৩ সংসদীয় আসনটি সিংড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত।

নাটোর-৩ আসন 

এটি জাতীয় সংসদের ৬০ নাম্বার আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: জামায়াতে ইসলামীর আবু বক্কর বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৫২ হাজার ৪ শত ৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫ হাজার ৯ শত ৪২ জন। নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর আবু বক্কর বিজয়ী হন। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৩৮ হাজার ১ শত ৩৮ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের শাহজাহান আলী। নৌকা প্রতীকে তিনি পান  ৩৬  হাজার ২ শত ৮৭ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আবুল কালাম আজাদকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির শাসনামলে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এতে বিএনপির আবুল কালাম আজাদকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে। এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন:বিএনপির কাজী গোলাম মোর্শেদ বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ই জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৫০ হাজার ৩ শত ৩৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২১ হাজার ৫৯ জন। নির্বাচনে বিএনপির কাজী গোলাম মোর্শেদ বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৩ হাজার ১ শত ৬২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের শাহজাহান আলী। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪১ হাজার ৭ শত  ১৮ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির কাজী গোলাম মোর্শেদ নির্বাচিত

২০০১ সালের ১ অক্টোবর  অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯৫ হাজার ৬ শত ৭০ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ  ৭০ হাজার ৯ শত ৭০ জন। নির্বাচনে বিএনপির কাজী গোলাম মোর্শেদ বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৮ হাজার ৭১ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের শাহজাহান আলী। নৌকা  প্রতীকে তিনি পান ৭৮ হাজার ৮ শত ৪৮ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের জুনাইদ আহমদ পলক বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২৪ হাজার ৬৭ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ১০ হাজার ৩ শত ৭২ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জুনাইদ আহমদ পলক বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২৭ হাজার ৯ শত ৮৭ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির কাজী গোলাম মোশের্দ। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭৮ হাজার  ৪৩ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের জুনাইদ আহমদ পলক বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জুনাইদ আহমদ পলক বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮০ হাজার ৬ শত ৮৮ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ওয়ার্কাস পার্টির মিজানুর রহমান। হাতুড়ি প্রতীকে তিনি পান ১৩ হজার ২৭ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের জুনাইদ আহমদ পলক

২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭৬ হাজার ১ শত ৭০ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৪২ হাজার ৯ শত ৪ জন। নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৫ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের জুনাইদ আহমদ পলক , ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির  দাউদার মাহমুদ, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির আনিছুর রহমান, হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শাহ্ মো. মোস্তাফা ওয়ালীউল্লাহ, কুলা প্রতীকে বিকল্পধারা বাংলাদেশের মনজুর আলম হাসু প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জুনাইদ আহমদ পলক বিজয়ী হন। নৌকা  প্রতীকে  তিনি পান ২ লাখ ৩০ হাজার ৩ শত ২৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির দাউদার মাহমুদ। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮ হাজার ৮ শত ৪১ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

নাটোর-৩ (সিংড়া) আসনটিতে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগের জুনাইদ আহমেদ পলক প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০১৮ সাল পর্যন্ত টানা এই আসনে তিনি নির্বাচিত হয়ে আসছেন। তিনি ডাক এবং টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জুনাইদ আহমেদ পলক জাতীয় সংসদের কনিষ্ঠ সংসদ সদস্য। ২০১৬ সালের মার্চে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম জুনাইদ আহ্‌মেদ‍ পলককে ইয়াং গ্লোবাল লিডার ২০১৬’ হিসেবে মনোনীত করে। ২০১৮ তে বৈশ্বিক নীতিনির্ধারনী সংস্থা আ্যাপলিটাকল এ  প্রকাশিত বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের তালিকায় স্থান পেয়েছেন তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবারও দলীয় মনোয়ন চাইবেন জুনাইদ আহমেদ পলক।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ, একাদশ জাতীয় সংসদের প্রার্থী সিংড়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব দাউদার মাহমুদ।

বিএনপি থেকে আরও মনোনয়ন চাইবেন সিংড়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ারুল ইসলাম আনু, নাটোর জেলা বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহীন, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম দলের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম ইউসুফ আলী, সিংড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ডা. নজরুল ইসলাম।

এ ছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন সিংড়া পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফিক ।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি প্রকৌশলী আনিসুর রহমান। ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজানও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সিংড়া  উপজেলা নিয়ে গঠিত নাটোর-৩ আসনে  পঞ্চম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীরা বিজয়ী হন।

YouTube player

 

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর নাটোর-৩ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৯.৫১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৪.২৫%, বিএনপি ১৩.২৬%, জাতীয় পার্টি ১৩.৭০%, জামায়াতে ইসলামী ৩৬.০০%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.৭৯% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮০.৫৩%। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৪.৪৬%, বিএনপি ৩৫.৬৫%, জামায়াতে ইসলামী ৫.২২%, জাতীয় পাটি ১২.৭৪%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১১.৯৩% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৭.৩৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৬.১২%, ৪দলীয় জোট ৫১.৫১%, জাতীয় পার্টি ০.৮৪%,স্বতন্ত্র ও  অন্যান্য ১.৫৩% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯৩.৮৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬০.৮৫%, ৪ দলীয় জোট ৩৭.১১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ২.০৪% ভোট পায়।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, সাংগঠনিক দিক থেকে এই আসনে বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান তুলনামুলকভাবে শক্তিশালী। তারপরও  বিএনপি হারানো আসনটির দখল ফিরে পেতে চায়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দখল বজায় রাখতে চায়। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৬০ নম্বর নাটোর-৩ আসনটিতে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মন্তব্য করেন বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর পরিচালিত দৈবচয়ন পদ্ধতির জরিপে অংশ নেয়া এলাকার বেশিরভাগ ভোটার।

বিএনএ/ শিরীন সুলতানা, রেহেনা ইয়াসমিন, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ