24 C
আবহাওয়া
৯:৩১ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৩০ (গাইবান্ধা-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৩০ (গাইবান্ধা-২)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে গাইবান্ধা-২ আসনের হালচাল।

গাইবান্ধা -২ আস

গাইবান্ধা-২ সংসদীয় আসনটি গাইবান্ধা সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৩০ নাম্বার আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির আব্দুর রশীদ সরকার বিজয়ী

১৯৯১ সালের ২৭ই ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে গাইবান্ধা-২ আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪ হাজার ৯ শত ৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৬ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আব্দুর রশীদ সরকার বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৪৯ হাজার ৯ শত ৩০ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের লৎফুর রহমান । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২৫ হাজার ৩ শত ২৪ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন:বিএনপি প্রার্থী সাইফুল আলম সাজাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় 

১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির শাসনামলে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি প্রতিরোধও করে। বিএনপি প্রার্থী সাইফুল আলম সাজাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় ।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির আব্দুর রশীদ সরকার বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ই জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯৫ হাজার ৩ শত ১৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪১ হাজার ২ শত ৭১ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আব্দুর রশীদ সরকার বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৬৯ হাজার ৩ শত ৭০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের লুৎফর রহমান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৯ হাজার ৮ শত ৬০ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের লুৎফর রহমান বিজয়ী

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৫ হাজার ৫ শত ৯৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮৩ হাজার ৮ শত ৯৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের লুৎফর রহমান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৮ হাজার ৫ শত ৯৮ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির আব্দুর রশীদ সরকার। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৬৭ হাজার ৫শত ১৯ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মাহাবুব আরা বেগম গিনি বিজয়ী হন
২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬৪ হাজার ৩ শত ৩ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ২২ হাজার ১ শত ৪৩ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মাহাবুব আরা বেগম গিনি বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৬৬ হাজার ৭শত ২৬ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শফিক-উর রহমান ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৮ হাজার ৬ শত ৮২ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মাহাবুব আরা বেগম গিনি
২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৯৬ হাজার ১ জন। ভোট প্রদান করেন ৬৩ হাজার ৬১ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মাহাবুব আরা বেগম গিনি বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫১ হাজার ৭ শত ১৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মকদুবর রহমান সরকার । আনারস প্রতীকে তিনি পান ১৩ হাজার ৪৪ ভোট।

YouTube player

একাদশ সংসদ নির্বাচন:বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের মাহবুব আরা বেগম গিনি বিজয়ী
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৮৬ হাজার ২ শত ৮৯ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ২০ হাজার ৯ শত ৪৪ জন।
নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৬ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মাহবুব আরা বেগম গিনি, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির আবদুর রশিদ সরকার, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আল আমিন, কাস্তে প্রতীকে সিপিবি মিহির কুমার ঘোষ, মিনার প্রতীকে ইসলামী ঐক্যজোটের যুবায়ের আহমেদ। আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির জিয়া জামান খান প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। জাতীয় পার্টি এ আসনে প্রার্থী দেয়নি, সমর্থন দেয় আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মাহবুব আরা বেগম গিনি বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬ শত ১৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টি থেকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়া সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রশীদ সরকার । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৮ হাজার ৬ শত ৭০ ভোট।
কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনে টানা তিনবারের সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ আওয়ামী লীগের মাহাবুব আরা বেগম গিনি আবারও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। আওয়ামী লীগ থেকে আরও যারা মনোনয়ন চাইবেন তাদের মধ্যে রয়েছে গাইবান্ধা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান বাংলাদেশ গণপরিষদের প্রথম স্পিকার শাহ্ আবদুল হামিদের নাতি শাহ্ সারোয়ার কবীর, আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য সৈয়দ শামস উল আলম হিরু, সাবেক জেলা সহ-সভাপতি ফরহাদ আবদুল্লাহ হারুন বাবলু, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক পিয়ারুল ইসলাম, সদর উপজেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুর জামান রিংকু।
বিএনপি থেকে আবারও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন একাদশ সংসদের প্রার্থী আব্দুর রশীদ সরকার। গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির গ্রাম সরকার বিষয়ক সম্পাদক আনিসুজ্জামান খান বাবু, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন নবী টুটুল, জেলা কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ সামাদ আজাদ, জেলা সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের সদস্য কাজী আমিরুল ইসলাম ফকু, জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মঞ্জুর মোর্শেদ বাবু এবং পৌর বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল আরজু।

জাতীয় পার্টির মনোনয়ন চাইবেন জেলা সদস্যসচিব সারোয়ার হোসেন শাহীন এবং যুগ্ম আহ্বায়ক শাহজাহান খান আবু। কমিউনিস্ট পার্টি থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, ইসলামী ঐক্য জোট থেকে যুবায়ের আহমেদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে আল আমিন দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, গাইবান্ধা-২ আসনে জাতীয় পার্টি পঞ্চম, সপ্তম সংসদে এবং অষ্টম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হন।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর গাইবান্ধা-২ আসনে ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান প্রদানের চেষ্টা করেছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৮.১০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২১.২৭%, বিএনপি ৪.৩৯ %, জাতীয় পার্টি ৪১.৯৪%, জামায়াত ইসলামী ১৬.০৭%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১৬.৩৩% ভোট পায়।
১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭২.৩৩% ভোটার । প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৮.২২ %, বিএনপি ৯.৩ %, জাতীয় পার্টি ৪৯.১০%, জামায়াত ইসলামী ১০.৮৩%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.৫৫% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৪.৮৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৭.৩০%, ৪ দলীয় জোট ১৬.১০ %, জাতীয় পার্টি ৩৬.৭২%,স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৯.৮৮% ভোট পায়।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৪.০৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় মহাজোট ৭৫.০৫%, ৪ দলীয় জোট ২১.৯১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ৩.০৪% ভোট পায়।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, গাইবান্ধা-২ আসনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত। বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত নয়। জামায়াত ইসলামী ও ইসলামী ঐক্যজোট সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় সংসদের ৩০ নম্বর আসন, গাইবান্ধা-২ আসনে ,আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে সরাসরি লড়াই হবে।

বিএনএ/ শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ