21 C
আবহাওয়া
৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ১৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসিয়ে রাঙামাটিতে বৈসাবি শুরু

কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসিয়ে রাঙামাটিতে বৈসাবি শুরু

কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসিয়ে রাঙামাটিতে বৈসাবি শুরু

বিএনএ, রাঙামাটি : পাহাড়ের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের সবচেয়ে বড় সামাজিক অনুষ্ঠান বৈসাবি কাপ্তাই হ্রদের জলে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে। হ্রদের জলে বাহারি ফুল জানান দিচ্ছে পাহাড়ের সর্ববৃহৎ সামাজিক উৎসব বৈসাবি। এই সামাজিক আয়োজনে ব্যস্ত এখন শহর-পাহাড়ি গ্রামগুলো।

১২ এপ্রিল (বুধবার) সকালে কাপ্তাই হ্রদের জলে ফুল ভাসিয়ে নতুন বছরের জন্য শুভকামনা জানিয়ে গঙ্গা দেবীর নিকট প্রার্থনা করা হয়।

উৎসবটি চাকমা জনগোষ্ঠীর ‘ফুল বিজু’, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ‘হাঁড়িবসু’ আর মারমা সম্প্রদায়ে সূচিকাজ। ঠিক ফুলবিজু নামে অভিহিত না হলেও এইদিন প্রায় সকল পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীই পানিতে ফুল ভাসানোর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা পালন করে।

ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ফুলবিজু উপলক্ষে শহরের রাজবন বিহার ঘাট, পলওয়েল পার্ক, কেরাণী পাহাড়সহ বিভিন্ন স্থানে জেলা প্রশাসন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট, বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু-২০২৩ উদযাপন কমিটি ও ব্যাক্তিগত উদ্যোগে পানিতে ফুল ভাসানো হয়।

উৎসব প্রিয় পাহাড়িরা সারা বছর মেতে থাকেন নানান অনুষ্ঠানে। উৎসবের প্রথম দিনে চাকমা, ত্রিপুরা ও মারমারা বন থেকে ফুল আর নিমপাতা সংগ্রহ করে এবং কলাপাতা করে পবিত্র এই ফুল ভাসিয়ে দেয় পানিতে, তাই একে বলা হয় ফুল বিজু। পানিতে ফুল ভাসিয়ে নিজ পরিবার এবং দেশ তথা সমগ্র জীবের মুক্তির জন্য গঙ্গা দেবীর নিকট প্রার্থনা করা হয়। পানিতে ফুল ভাসিয়ে পুরনো বছরের দুঃখ বেদনাই যেনো ভাসিয়ে দিয়ে নতুন দিনের সম্ভাবনার আলো জ্বালান পাহাড়ের বাসিন্দারা। পানিতে ফুল ভাসিয়ে পুরনো দিনের বেদনা ভুলে নতুন দিনের প্রত্যয়ের কথা জানায় ফুল ভাসাতে আসা পাহাড়ি তরুণ-তরুণীরা।

কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসিয়ে রাঙামাটিতে বৈসাবি শুরু
হ্রদে ফুল ভাসাচ্ছেন শিশু-কিশোরীরা

শহেরর রাজবন বিহার ঘাটে হ্রদের পানিতে ফুল ভাসিয়ে দেবাশিষ চাকমা বলেন, ফুল বিজু হলো আমাদের বিজু উৎসবের সূচনার দিন। এই দিন আমরা গঙ্গা দেবীকে ফুল নিবেদন করি। যাতে করে আমাদের সমগ্র দুঃখ কষ্ট মুছে যায় এবং নতুন বছরকে যাতে আমরা আনন্দ উৎসবের মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারি।

ফুল ভাসিয়ে সুদর্শন চাকমা বলেন, আমরা এই দিনে পুরাতন বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর জন্য প্রস্তুত হই। হ্রদের পানিতে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে ফুল নিবেদনের মাধ্যমে আমরা আমাদের নতুন বছরের জন্য শুভকামনা আর প্রার্থনা জানাই। পাশাপাশি পানি যেহেতু আমাদের মানব জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই জলের দেবীকে গঙ্গার উদ্দেশ্যে আমরা ফুল নিবেদন করি।

এনসি চাকমা বলেন, এটা আমাদের একটি চাকমা ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। মূলত আমরা ফুলটা গঙ্গা দেবীকে দান করি সকল জীবের মঙ্গল কামনায়। অনেকে বিহারে দান করলেও সবাই একসাথে ফুল ভাসানোটাই এখন মূল আনন্দে রুপ নিয়েছে।

শহরের কেরাণী পাহাড় এলাকায় রাঙামাটি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সাংষ্কৃতিক ইন্সটিটিউট কর্তৃক আয়োজিত ফুল ভাসানো অনুষ্ঠানে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান নিজের আনন্দের কথা জানিয়ে বলেন, আজ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সর্ববৃহৎ সামাজিক উৎসব বৈসাবির তিনদিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলো। চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ পাহাড়ের বসবাসরত সমগ্র ক্ষু-নৃগোষ্ঠীদের আমি আমার রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বৈসাবির শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। আমি আশা করি এই উৎসব আমাদের মধ্যে সম্প্রীতি র বন্ধনকে আরো দৃঢ় করবে।

কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসিয়ে রাঙামাটিতে বৈসাবি শুরু
বৈসাবি উৎসবে মাতোয়ারা

বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, সাংক্রান, বিহু-২০২৩ উদযাপন কমিটি সদস্য সচিব ইন্টু মনি তালুকদার বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের সবচেয়ে বড় এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে আমরা কিছুদিন আগ থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠান মালার আয়োজন করেছি। আজ ফুল ভাসানেরা মধ্য দিয়ে আগামী তিনদিনের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলো। সবাই যাতে নতুন বছর ভালোভাবে কাটাতে পারে সেই কামনা করি।

পার্বত্য চট্টগ্রামের ১২টি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাংলা বর্ষকে বিদায় জানানোর এ অনুষ্ঠান তাদের প্রধান সামাজিক উৎসব হিসেবে বিবেচিত। এই উৎসব চাকমা জনগোষ্ঠী বিজু নামে, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী মানুষ সাংগ্রাই, মারমা জনগোষ্ঠী মানুষ বৈসুক, কোনো কোনো জনগোষ্ঠী বিহু নামে পালন করে থাকে। বৈসুকের ‘বৈ’ সাংগ্রাইয়ের ‘সা’ ও বিজু, বিষু ও বিহুর ‘বি’ নিয়ে উৎসবটিকে সংক্ষেপে ‘বৈসাবি’ নামে পালন করা হয়। পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদনের পর থেকে পাহাড়ের সকল জনগোষ্ঠীকে সম্মিলিতভাবে উৎসবে একত্রিভূত করার জন্য এই সংক্ষেপে নামটি প্রচলন করা হয়।

বিএনএনিউজ/কাইমুল ইসলাম ছোটন,বিএম

Loading


শিরোনাম বিএনএ