আপডেট : ইউক্রেন কর্তৃক শনিবার(১২মার্চ) সন্ধ্যায় এক ঘোষণায় বলা হয়, সুলতান সুলেমান এবং রোকসোলানার মসজিদে ঘটনার সময় নারী শিশুসহ ৮০জন মানুষ আশ্রয়ে ছিলেন। তবে তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে সে সম্পর্কে কিছু বলা হয় নি।
বিএনএ,বিশ্ব ডেস্ক : ইউক্রেনের বন্দর শহর মারিওপোলের একটি বহুল পরিচিতি মসজিদ সুলতান সুলেইমান শুক্রবার(১১মার্চ) রুশ বাহিনীর হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে। খবর আজারবাইজানটাইমস।
পত্রিকাটির খবরে বলা হয়, ভারী কামান হামলায় সুলতান সুলেমান এবং রোকসোলানার নামে স্থাপিত একটি মসজিদ ও ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র ক্ষেপনাস্ত্র হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। সে সময় ওই এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দা আজারবাইজানীয়দের সাথে, ৮৫জন তুরস্কের নাগরিক আটকা পড়েছিল। ইউনাইটেড ইউক্রেনীয় আজারবাইজানীয় কংগ্রেসের চেয়ারপারসন আফাগ হামিডোভাও ওই এলাকায়(মারিওপোলে) অবরুদ্ধ হয়ে রয়েছেন।
মসজিদ কমপ্লেক্সটি বিধ্বস্ত হলেও সেখানে কেউ হতাহত হয়েছেন কি না খবরে সে সম্পর্কে কিছুই বলা হয় নি।
২০০৭সালের ১৫ অক্টোবর উচ্চ-পদস্থ তুর্কি কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে সুলতান সুলেমান এবং তার স্ত্রী রোকসোলানার সম্মানে মারিউপোলে সুলতান সুলেমান এবং রোকসোলানার নামের মারিওপোল মসজিদ এবং ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র চালু করা হয়েছিল। মারিওপোল সেন্ট্রাল মার্কেটের পরিচালক সালেহ সিহান এবং শহরের আজারবাইজানি সম্প্রদায়ের অন্যান্য সদস্যদের আর্থিক সহায়তায় মসজিদ কমপ্লেক্সটি নির্মিত হয়।
রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর হতে মারিওপোল শহরের সার্বিক পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটে। মারিওপোল একটি জনপ্রিয় পর্যটন এলাকাও। সেখানে খুব সুন্দর কয়েকটি স্থাপনার মধ্যে সুলতান সুলেমান এবং রোকসোলানার নামের মসজিদটি অন্যতম।
Bnanews24 অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন
সুলতান সুলেমান এবং রোকসোলানা কে ছিলেন? যাদের নামে ওই মসজিদ নির্মিত হয়েছিল
সুলতান সুলায়মান ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের সবেচেয়ে শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান সুলতান। যিনি দ্য ম্যাগ্নিফিসেন্ট” নামে পশ্চিমা বিশ্বে, কানুনি সুলতান নামে তুরস্কে, সুলাইমান আল মুহতাশাম নামে আরব বিশ্বে পরিচিত ছিলেন।
তিনি উসমানীয় সাম্রাজ্যের দশম এবং সবচেয়ে দীর্ঘকালব্যাপী শাসনরত প্রভাবশালী সুলতান, যিনি ১৫২০ সাল থেকে ১৫৬৬ সালে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত উসমানীয় সাম্রাজ্য শাসন করেন।
সুলতান সুলাইমান ষোড়শ শতাব্দীর ইউরোপে একজন বিশিষ্ট সাম্রাজ্যাধিপতি হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন, যার শাসনামলে উসমানীয় খেলাফতের সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তির বিপুল বিস্তার ঘটে। সুলতান সুলাইমানের সেনাবাহিনী পূর্ণ রোমান সাম্রাজ্য এবং সুবিশাল হাঙ্গেরির পতন ঘটায়। সুলতান সুলাইমান পারস্যের সাফাভি রাজবংশের সাফাভিদ শাহ প্রথম তাহমাসবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন এবং মধ্য প্রাচ্যের বেশির ভাগ অঞ্চল দখল করে নেন। তিনি উত্তর আফ্রিকার আলজেরিয়াসহ বড় বড় অঞ্চলগুলো দখল করেছিলেন।
সুলতান সুলাইমান যে শুধু একজন মহান রাজা ছিলেন তা নয়, তিনি একজন মহান কবিও ছিলেন। “মুহিব্বি” (অর্থ:প্রেমিক) নামক ছদ্ম উপনামে তিনি তুর্কি ও ফারসি ভাষায় বহু কালজয়ী কবিতা লিখেছেন।
বলা হয় যে, সুলতান সুলাইমান উসমানীয় সাম্রাজ্যের দু’শ বছরের নিয়ম ভঙ্গ করে তার হারেমের একজন দাসী রোকসোলানার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রকৃতপক্ষে তিনি রসুল(সা.) এর হাদিস মোতাবেক অধীনস্থ দাসীটিকে জ্ঞান ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেন এবং হাদিসের আদেশ মোতাবেক আযাদ করে দেন, এবং পরবর্তীতে তাকে একজন মুক্ত নারী হিসেবে বিবাহ করেন। ঐ দাসীর নাম পরবর্তীকালে হুররাম রাখা হয়। তিনি সুলতান সুলাইমানের একাধিক পুত্র সন্তান ও একজন কন্যাসন্তানের মাতা। রোকসোলানার গর্ভে শাহজাদা সেলিম জন্ম নেন, যেই শাহজাদা সুলতান সুলাইমানের মৃত্যুর পর দ্বিতীয় সেলিম হিসেবে উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান হন।
ইউক্রেনীয়দের মাঝে রোক্সেলানা অন্যতম প্রচলিত নাম
হুররেম সুলতান যিনি রোকসোলানার হিসেবেও পরিচিত ছিলেন,তিনি উসমানীয় সম্রাট প্রথম সুলাইমানের দাসী বা উপপত্নী এবং পরবর্তীকালে তার বৈধ স্ত্রী ও সম্রাটের সন্তান শাহজাদা মুহাম্মদ, মিরহিমাহ সুলতান, শাহজাদা আবদুল্লাহ, সুলতান দ্বিতীয় সেলিম, শাহজাদা বায়েজিদ এবং শাহজাদা জাহাঙ্গীরের মাতা।
তিনি ছিলেন উসমানীয় ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাধর নারীদের মধ্যে একজন এবং নারীদের সালতানাত নামে পরিচিত শাসনকালের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব। তার স্বামী প্রথম সুলায়মানের শাসনকালে তিনি সুলতানের প্রধান স্ত্রী বা হাসেকি সুলতান ছিলেন। তিনি তার স্বামীর মাধ্যমে ক্ষমতা অর্জন করেন এবং উসমানীয় সাম্রাজ্যের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতেন।
কিছু ঐতিহাসিকের মতে জন্মসূত্রে রোকসোলানার আসল নাম ছিল আলেকজান্দ্রা রুসলানা লিসোভস্কা বা আনাস্তাযজা লিসোভস্কা এবং শৈশবে তার ডাকনাম ছিল নাস্তিয়া ।
হুররেম সম্ভবত কোন ইউক্রেনীয় ধর্মযাজক পিতার ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন। তিনি তৎকালীন পোল্যান্ড রাজ্যের রুহাটাইন নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন যা বর্তমানে পশ্চিম ইউক্রেনভুক্ত ।১৫২০ এর দশকে ক্রিমিয়ার(২০১৪ সালে রাশিয়া কর্তৃক দখলকৃত) তাতাররায় অভিযানের সময় তাকে বন্দী করা হয় এবং প্রথমে সুলতানের একজন দাসী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
ইউক্রেনে অসমর্থিত সূত্র মতে, ১০লাখের বেশি মুসলমান বসবাস করেন। তার মধ্যে সম্প্রতি রাশিয়া অধিকৃত ক্রিমিয়ায় রয়েছে ৭ লাখের বেশি মুসলমান যাদের অধিকাংশই সুন্নী মতাদর্শী। ডোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক প্রদেশেও মুসলমানরা বসবাস করেন। মুসলমানরা ইউক্রেনীয় জনসংখ্যার মাত্র ০.৯% কিন্তু ক্রিমিয়ায় ১২% এর মতো।
সূত্র : উইকিপিডিয়া।
বিএনএনিউজ২৪,জিএন