অনেক দিন কারাগারে বন্দি থাকার পরে মুক্তির আদেশ পেয়ে, জেলগেট থেকে আবার ফিরে আসা যে কত কষ্টকর এবং কত বড় ব্যথা, তা ভুক্তভোগী ছাড়া বোঝা কষ্টকর।
আজ প্রকাশিত হলো পর্ব : ৩৩৯
কোরবানকে একদিন জেলগেটে নিয়ে গেল মুক্তির কথা বলে। আমাদের কাছ থেকে যথারীতি বিদায় নিয়ে মালপত্র সাথে নিয়ে জেলগেটে হাজির হওয়ার পরে একটায় মুক্তির আদেশ এবং সাথে সাথে আর একটা কাগজ বের করলেন একজন আইবি কর্মচারী, তাকে বলা হল, যদি বন্ড দেন, তবে এখনি বাইরে যেতে পারবেন। আর বন্ড না দিলে আবার জেলের মধ্যে ফিরে যেতে হবে। কোরবান ভীষণ একগুঁয়ে। সে ক্ষেপে গিয়ে অনেক কথা শুনিয়ে আবার জেলের মধ্যে ফিরে আসল এবং আমাদের সকল কথা বলল।
অনেক দিন কারাগারে বন্দি থাকার পরে মুক্তির আদেশ পেয়ে, জেলগেট থেকে আবার ফিরে আসা যে কত কষ্টকর এবং কত বড় ব্যথা, তা ভুক্তভোগী ছাড়া বোঝা কষ্টকর। পরের দিন জেল কর্তৃপক্ষকে ডেকে বলে দেওয়া হল আর কোনোদিন যেন এ কাজ না করা হয়। যদি কোনো বন্ড বা মামলা থাকে পূর্বেই জানিয়ে দিতে হবে। মালপত্র নিয়ে জেলগেটে গেলে এবং আবার ফিরে আসতে হলে ভীষণ গোলমাল হবে। রাজনৈতিক বন্দিরা দরখাস্ত করে নাই যে তারা বন্ড দিবে।
কয়েকদিন পরে এক আইবি কর্মচারী আমার সাথে দেখা করতে আসেন। তিনি নিজকে খুব বুদ্ধিমান মনে করেন বলে মনে হল। আমাকে বন্ড দেওয়ার কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন না বা লজ্জা করছিলেন। আমি তাঁকে বলেছিলাম, “দয়া করে ঘোরাঘুরি করবেন না। আমার সাথে দেখা করার ইচ্ছা থাকলে আসতে পারেন, তবে লিখে নিয়ে যান- আপনার উপরওয়ালাদের জানিয়ে দিবেন, বন্ড আমার দেওয়ার কথাই ওঠে না। সরকারকেই বন্ড দিতে বললেন, ভবিষ্যতে আর এই রকম অন্যায় কাজ যেন না করে! আর বিনা বিচারে কাউকেও বন্দি করে না রাখে।” ভদ্রলোক হাসতে লাগলেন এবং বললেন, “ আপনাকে তো আমি বন্ড দিতে বলি নাই।” আমিও হেসে ফেললাম।
পরিকল্পনা : ইয়াসীন হীরা
গ্রন্থনা : সৈয়দ গোলাম নবী
সম্পাদনায় : মনির ফয়সাল
সূত্র: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী, প্রকাশনা- দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, পৃষ্টা নম্বর:২৮০-২৮১।
আগের পর্ব পড়ুন : বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পর্ব : ৩৩৮