ঢাকা : ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত নতুন বাংলাদেশের উন্নয়নে বিদেশি বিনিয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত রেখে যে কোনো ধরনের বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগতম জানানো হবে।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪) সচিবালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অফিস কক্ষে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ দি অ্যাফেয়ার্স হেলেন লাফেভের সঙ্গে এক বৈঠকে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বৈঠকের শুরুতে, হেলেন লাফেভ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে নতুন দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অভিনন্দন জানান এবং ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন নিয়ে জানতে চান। এ বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, “ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা সরকারে এসেছি, তাই দৃষ্টিভঙ্গি অপরিবর্তিত; তবে কাজের পদ্ধতি পরিবর্তিত হয়েছে। আমরা দেশের মানুষের আকাক্সক্ষা পূরণে সচেষ্ট রয়েছি।”
চার্জ দি অ্যাফেয়ার্স উপদেষ্টার কাছে মন্ত্রণালয় দুটির কার্যক্রম নিয়ে জানতে চাইলে নাহিদ ইসলাম জানান, “মন্ত্রণালয়গুলোর প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পরিকল্পনা চলছে এবং প্রস্তাবনা তৈরি করা হচ্ছে।”
হেলেন লাফেভ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাইবার সিকিউরিটি আইন নিয়ে আলোচনা করার সময়, নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অতীতের সরকার সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ কয়েকটি আইন দ্বারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করেছে। আমরা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সাথে সাংঘর্ষিক কোনো আইন রাখতে চাই না।”
তিনি আরও জানান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পেলে যৌথভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
হেলেন লাফেভ সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে, উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, “ওয়েজ বোর্ড নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। বেতন কাঠামো কম হওয়ায় তরুণরা সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহ হারাচ্ছে। তাই আমরা ওয়েজ বোর্ড সংস্কারের চিন্তা করছি।”
তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের চলমান যৌথ প্রকল্প অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নতুন প্রকল্প গ্রহণের সম্ভাবনা নিয়ে ভাববেন বলে জানান।
মিডিয়া হাউজের অভ্যন্তরে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতে চাইলে, নাহিদ ইসলাম বলেন, “যদি সাংবাদিকরা সংস্কারের জন্য এগিয়ে আসে, তবে আমরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।”
পিআইবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগ এবং সিটিজেন জার্নালিস্টদের প্রশিক্ষণ নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার পরিকল্পনার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর জন ফে বাংলাদেশের বাজারে মেটা, গুগল, মাইক্রোসফট, ওরাকলের বিনিয়োগ নিয়ে জানতে চাইলে, উপদেষ্টা বলেন, “জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে যে কোনো বিনিয়োগকে স্বাগতম জানাই। পাশাপাশি, এসব কোম্পানির ডেটা সেন্টার ভারত পরিবর্তে বাংলাদেশে স্থাপনের অনুরোধ করেছি।”
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক খাতে সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান। তিনি দুর্নীতি, অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের কঠোর অবস্থানের কথাও উল্লেখ করেন।
বৈঠকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ড. মো. মুশফিকুর রহমান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন, দূতাবাসের পলিটিক্যাল-ইকোনমিক কাউন্সেলর এরিখ জিলান, মার্কিন দূতাবাসের অর্থনৈতিক কর্মকর্তা জেমস গার্ডিনার, কমার্শিয়াল কাউন্সেলর জন ফে, পাবলিক অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক কর্মকর্তা স্টিফেন ইবেলি এবং প্রটোকল সুপারভাইজার নিশাত তাসনিম উপস্থিত ছিলেন।
বিএনএ, এসজিএন