বিএনএ,ঢাকা: মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে র্যাবের দায়ের করা মামলায় মঙ্গলবার(১০আগস্ট) তাকে আরও দুদিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত।
রিমান্ড আবেদন করে সিআইডি তাকে আদালতে হাজির করলে মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) দুপুরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক দেবব্রত বিশ্বাস তার রিমান্ড মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।তিন দিন পর র্যাব, পুলিশ ও ডিবির পর ৪র্থ সংস্থা হিসেবে পরীমনির মামলার তদন্ত ভার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি। শনিবার রিমান্ড চলাকালীন সময়ে সিআইডি তাকে হেফাজতে নেয় । বর্তমানে সিআইডি’র হেফাজতে আছেন পরীমনি।
আদালত থেকে বের হওয়ার সময় চিৎকার করে বলেন,”আমাকে মিথ্যা মামলায় ইচ্ছা করে ফাঁসানো হয়েছে”।যথাযথ অনুসন্ধান ও তদন্ত না করায় তার এই দুরবস্থার জন্য দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোকেও দায়ী করেন তিনি।
এরআগে আদালতে কাঁদেন পরীমনি।
পরীর সাথে কথা বলতে পারেন নি বৃদ্ধ নানা শামসুল হক
পরীমনি এতিম। মা–বাবা,ভাই বোন নেই। কেবল একজন বৃদ্ধ নানা রয়েছেন। তিনি বড় হয়েছেন পিরোজপুরে নানার বাড়িতে। তাঁকে দেখার জন্য মঙ্গলবার দুপুরে সিএমএম আদালতের হাজতখানার সামনে আসেন নানা শামসুল হক। তখন পরীমনি ছিলেন হাজতখানার ভেতরে। বয়সে প্রবীণ শামসুল হক এ সময় সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর নাতি ষড়যন্ত্রের শিকার।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা শেষ হলে শামসুল হককে নিয়ে যাওয়া হয় সিএমএম আদালত ভবনের সাত তলায়। সেখানে একটি আদালতকক্ষে বসেছিলেন তিনি। যখন পরীমনির রিমান্ড শুনানি হয়, তখন সেই কক্ষে তিনি ছিলেন না। রিমান্ড শুনানি শেষে পরীমনিকে যখন নিচে নামানো হচ্ছিল, তখন সেখানে আসেন নানা শামসুল হক। তবে মানুষের ভিড়ে পরীমনিকে তিনি আর দেখতে পারেননি। এরপর পরীমনিকে না দেখেই তিনি আদালত চত্বর ত্যাগ করেন।
পরীমনির আইনজীবীরা আদালতে যা বললেন
আদালতে পরীমনির আইনজীবীরা বলেছেন, ‘১২২ ঘণ্টা পরও একই পোশাকে পরীমনিকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।’ এর জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেছেন, ‘পরীমনি ইচ্ছা করেই কাপড় চেঞ্জ করেনি। এটা তার রাজনীতি।’চিত্রনায়িকা পরীমনিকে গত ৫ আগস্ট জিন্স প্যান্ট ও শার্ট পরিহিত অবস্থায় আদালতে হাজির করা হয়েছিল। মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) একই পোশাকে তাকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাসের আদালতে নেওয়া হয়। তাকে একই পোশাকে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী।রিমান্ড শুনানিতে পরীমনির আইনজীবী মজিবুর রহমান বলেন, ‘পরীমনি চলচ্চিত্র নায়িকা। ফোর্বস ম্যাগাজিনের ১০০ জনের তালিকায় তার নাম আছে। সি ইজ সামথিং। বাংলাদেশ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্যও থামথিং। তার প্রতি আমাদেরও সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে। পরীমনির আলাদা লাইফস্টাইল আছে। অথচ দেখেন, ১২২ ঘণ্টা পরও একই পোশাকে পরীমনিকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।’
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতকে যা বললেন
পরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতকে বলেন, ‘যতটুকু জেনেছি, পরীমনি কাপড় চেঞ্জ করেছিল। আজ আবার আগের দিনের পোশাক পরেই এসেছে।’রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘পরীমনিকে আগে চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। পূর্ণাঙ্গভাবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। তার বাসায় কীভাবে মাদক এলো, বাসায় এসে কারা মাদক গ্রহণ করতো, এর উৎস কোথায়—এসব জানতে রিমান্ডের প্রয়োজন। এসব উদঘাটন না করতে পারলে সমাজ থেকে মাদক নির্মূল হবে না। এর পেছনে অনেক রুই-কাতলা আছে। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।’
সিআইডির সংবাদ সম্মেলন
এদিকে সিআইডি প্রধান ব্যারিস্টার মাহাবুবুর রহমান বলেছেন, পরীমণিসহ আটটি মামলার আসামিদের কাছ থেকে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থেই এসব তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব নয়। মঙ্গলবার স্বীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো জানান, আসামিদের কাছ থেকে জব্দ করা ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের ফরেনসিক করা হচ্ছে। আসামিদের সম্পদের খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।
পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক সিআইডি প্রধান আরও বলেন,’ আমরা এ পর্যন্ত ছয়টা গড়ি সিজ করেছি, বিআটিএ এর কাছে জানতে চেয়েছি এগুলো কার নামে আছে। এ গাড়ি গুলো কিভাবে এসেছে। প্রপারলি ভ্যারিফাই করবো। জিজ্ঞাসাবাদের শেষ পর্যায়ে। আমাদের আরও কিছু ডাউট আছে।’
সিটি ব্যাংকের সাধারণ ডায়েরি(জিডি)
সিটি ব্যাংকের কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে পরীমনির সাথে জড়িয়ে মিথ্যা-বানোয়াট তথ্য প্রচার করে একটি চক্র ব্যাংকটি থেকে চাঁদাবাজির পাঁয়তারা করছে জানিয়ে সাধারণ ডায়েরি করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ব্যাংকের হেড অব কোর্ট অপারেশন গাজী এম শওকত গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। ব্যাংকের জিডিতে উল্লেখ করা হয়, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন অভিনেত্রীর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে দি সিটি ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জড়িত বলে মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে।
এসব অপপ্রচারকে পুঁজি করে স্বার্থান্বেষী, প্রতারক ও চাঁদাবাজরা বিভিন্নভাবে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নাজেহাল করার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও, এসব নিউজের কারণে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, মানসিক উদ্বিগ্নতায় ভুগছে বলে উল্লেখ করেন।
বিএনএ, আর আর খান