বিএনএ : ২০২৪ সালে আগস্ট মাসের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ফেনীর সব উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। এতে প্রাণহানি হয়েছিল ২৯ জনের। পানিবন্দী ছিলেন ১০ লাখের বেশি মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয় সড়ক যোগাযোগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যানবাহন, ঘরবাড়ি ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ প্রায় সব খাত। সেই বন্যায় প্রায় ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ২০ লাখ ৫০০ টাকার ক্ষতি হয়েছিল।
তার ক্ষত না শুকাতেই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ এবং মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে অতিভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে আবারও ফেনীতে ভয়াবহ বন্যা দেখে দিয়েছে।
টানা রেকর্ড বৃষ্টিতে ফেনীর মুহুরী নদীর পানি বৃদ্ধি ও বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে জেলার ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার অনেক এলাকা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী ফেনী জেলার অন্তত ১৭টি স্থানের শহর ও নদীর তীর রক্ষা বাঁধ কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মুহুরী, কহুয়া, সিলোনিয়া নদীর পানি বাড়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থান ধসে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এই আকস্মিক বন্যায় ফেনীর দুই উপজেলার ৩৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। শুধু গ্রাম নয় – কোমর সমান পানিতে তলিয়েছে ফেনীর শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কসহ বিভিন্ন এলাকা। পানি ঢুকে পড়ায় বন্ধ রাখা হয়েছে শহরের একাডেমী এলাকার হোটেল, রেস্তোরা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। একটানা ভারী বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত নগরীর বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবন-জীবীকা।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহরিয়া ইসলাম জানান, সাতটি স্থানে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ৩২টি মাধ্যমিক স্কুল এবং ৬৭টি প্রাথমিক স্কুল সাহায্য কেন্দ্র হিসেবে খোলা রাখা হয়েছে। যেখানে বুধবার দুপুর পর্যন্ত চারশ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ঝুঁকি এড়াতে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ সাময়িক বন্ধ রেখেছে জেলা প্রশাসন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মাইনী নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে মেরুংয়ের নিচু এলাকা। মেরুংয়ে হেডকোয়ার্টার এলাকায় সড়কে পানি ঢুকে খাগড়াছড়ি-লংগদু সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধ্বসের শঙ্কা তৈরী হয়েছে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে।
এদিকে পদ্মা সেতুর তিন কিলোমিটার ভাটিতে শরীয়তপুরের মাঝিরঘাট এলাকায় পদ্মা নদীর ভাটিতে হঠাৎ ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নদীর তীর রক্ষা বাঁধ। এতে বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্তত ২০টি স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, বাঁধটির ওই অংশের প্রায় ১৫০ মিটার পুরোপুরি ধ্বসে গেছে। শরিয়তপুর পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসান জানান, “পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোতের কারণেই ভাঙনটা হয়েছে। মাটির ফাউন্ডেশন খারাপ হওয়ায় ভেঙে গেছে। তবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, “এর সাথে পদ্মা সেতু রক্ষা বাঁধের কোনো সম্পর্ক নেই।”
আবহাওয়া অফিস বলছে, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং এর কাছাকাছি এলাকায় একটি লঘুচাপ অবস্থান করছে। এছাড়া বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় থাকায় সারাদেশেই কম-বেশি বৃষ্টি হচ্ছে।
“টানা বৃষ্টিতে দেশের বেশিরভাগ নদনদীর পানি কিছুটা বাড়লেও এখনই স্থায়ী বন্যার শঙ্কা নেই” বলেই জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
বিএনএনিউজ/ সৈয়দ সাকিব/এইচ.এম।