29 C
আবহাওয়া
৬:৪২ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ১৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১১৯ (বরিশাল-১)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১১৯ (বরিশাল-১)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে বরিশাল-১ আসনের হালচাল।

বরিশাল-১ আসন 

বরিশাল-১ সংসদীয় আসনটি গৌরনদী এবং আগৈলঝাড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১১৯ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯৩ হাজার ৫৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১৭ হাজার ২১ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৫ হাজার ৬ শত ৯৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির কাজী গোলাম মাহবুব। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৬ হাজার ৮ শত ৫৫ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন : বিএনপির জহিরউদ্দিন স্বপনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির জহিরউদ্দিন স্বপনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৫০ হাজার ৪ শত ২৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১৬ হাজার ১ শত ৭৫ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫২ হাজার ৪ শত ১৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির কাজী গোলাম মাহবুব। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫০ হাজার ১ শত ২৫ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির জহিরউদ্দিন স্বপন বিজয়ী হন

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯৬ হাজার ৪ শত ৭৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫০ হাজার ৩ শত ৪৭ জন। নির্বাচনে বিএনপির জহিরউদ্দিন স্বপন বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮১ হাজার ৭ শত ৯১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৭ হাজার ৭ শত ৬০ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫ শত ৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৭৩ হাজার ৩ শত ৬১ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৯৮ হাজার ২ শত ৪৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭০ হাজার ৯ শত ৬৯ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫৮ হাজার ৩৪ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ১১ হাজার ৫ শত ৭ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৪ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির জহির উদ্দিন স্বপন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাসেল সরদার এবং গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির বাদশা মিয়া প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৫ হাজার ৫ শত ২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাসেল সরকার। হাতপাখা প্রতীকে তিনি পান মাত্র ১ হাজার ৪ শত ১৫ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়। বিএনপি শুধু বিজয়ী হয় ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদ নির্বাচনে।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর বরিশাল-১ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, বরিশাল-১ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬০.৬২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৭.৬০ %, বিএনপি ৪০.০৪%, জাতীয় পার্টি ০.৯৯% , জামায়াতে ইসলামী ৮.৯১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.৪৬% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৭.২৩%। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৫.১২%, বিএনপি ৪৩.১৫%, জাতীয় পাটি ৫.২১%, জামায়াতে ইসলামী ৪.৬৪%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৮৮% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৬.৫২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৫.০৭%, ৪দলীয় জোট ৫৪.৪০%,জাতীয় পার্টি ০.৩১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.২২% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৭.১৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫১.১১%, ৪দলীয় জোট ৪১.২৪%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৬৫% ভোট পায়।

বরিশাল-১ আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। তিনি আওয়ামী লীগের একক ও শক্তিশালী প্রার্থী।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন সংস্কারপন্থি খ্যাত বিএনপি সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান কেন্দ্রীয় বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন ঢাকা দক্ষিণ শাখার সদস্য অ্যাডভোকেট সেকেন্দার আলী সেরনিয়াবাত এবং কেন্দ্রীয় সদস্য এস এম রহমান পারভেজ।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মনোনয়ন চাইবেন আগৈলঝাড়া জেলা শাখার সভাপতি মুহাম্মাদ রাসেল সরদার।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, বরিশাল-১ আসনটি আওয়ামী লীগের দূর্গ। ১৯৭৩ সালে এ আসন (তৎকালীন বাকেরগঞ্জ-১৩) দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রী হন। পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে অন্য যারা নিহত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ছিলেন অন্যতম। তার বড় ছেলে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ্। ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-১ আসন থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর সপ্তম, দশম ও সর্বশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন হাসনাত আব্দুল্লাহ। এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছেন তিনি। তাছাড়া দলে নেই কোন কোন্দল। সেইদিক থেকে এই আসনে অনেকটা নির্ভার আওয়ামী লীগ।

অন্যদিকে ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পর থেকে বিএনপিতে বিভক্তি দেখা দেয়। পরাজিত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহানকে আহ্বায়ক করে গৌরনদী উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠন করাকে কেন্দ্র করেই বিভক্তির শুরু হয়। যা জটিল আকার ধারণ করে গৌরনদী পৌর ও আগৈলঝাড়া উপজেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে।

পদ বঞ্চিতরা পাল্টা কমিটি গঠন এবং গৌরনদী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহান ও দলের পৌর শাখার আহ্বায়ক মনিরুজ্জামানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। এ বিরোধের মধ্যেই আবুল হোসেন মিয়াকে আহ্বায়ক করে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে গৌরনদী উপজেলা বিএনপির কমিটি করা হয়। ওই কমিটি গঠনের কিছুদিন পর মনিরুজ্জামান মনিরকে সভাপতি ও শাহ আলম ফকিরকে সাধারণ সম্পাদক করে পৌর বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়। গত ১০ বছরেও বিএনপিতে বিরোধের অবসান হয়নি। বরং নির্বাচনকে সামনে রেখে অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর বিভক্তি আরও প্রকট হয়েছে। যা নির্বাচনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১১৯তম বরিশাল- ১ সংসদীয় আসনটিতে আওয়ামী লীগ আবারও বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিএনএ/ শিরীন সুলতানা, ওজি,ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ