বিএনএ ডেস্ক: কোরবানির পর মাংস বিতরণের পর নিজেদের অংশের কিছু মাংস অবশিষ্ট থেকেই যায়। তখন সংরক্ষণ নিয়ে দেখা দেয় নানান সমস্যা। ফ্রিজে রাখা মাংস থেকে রক্ত বের হয়ে পুরো বাসার পরিবেশ খারাপ হয়ে যায়। অনেক সময় হালকা জ্বাল দিয়ে রাখলেও নষ্ট হতে পারে। তবে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অবশ্যই গুণগত মান ঠিক থাকছে কিনা তা খেয়াল রাখা জরুরি।
সংরক্ষণের কিছু উপায়…
জ্বাল দিয়ে সংরক্ষণ: যখন ফ্রিজ ছিল না, তখন বড় বড় পাতিলে জ্বাল দিয়ে রাখা হতো কুরবানির মাংস। লবণ ও হলুদ দিয়ে জ্বাল দেয়া সেই মাংস দেড় থেকে দুইমাস ভালো থাকে। তবে প্রতিদিন নিয়ম করে এক থেকে দুইবার জ্বালাতে হবে সেই মাংস।
ফ্রিজে সংরক্ষণ: প্রযুক্তির কল্যাণে এখন ঘরে ঘরে ফ্রিজার বা রেফ্রিজারেটর আছে। তাই মাংস সংরক্ষণের ঝক্কি অনেকটাই কমেছে। তবে প্রশ্ন উঠতে পারে ফ্রিজে কতদিন ভালো থাকে মাংস?
মার্কিন খাদ্য এবং ওষুধ প্রশাসন বলছে, কাঁচা মাংস ফ্রিজারে ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত ভালো থাকে। এই সময়ের মধ্যে মাংসের পুষ্টিগুণ খুব একটা হেরফের হয় না। তবে এর চেয়ে বেশি সময় মাংস সংরক্ষণ করলে পুষ্টিগুণ আর স্বাদ-দুইই কমে যেতে পারে।
তবে ফ্রিজারে মাংস সংরক্ষণের সময় সংরক্ষণের পদ্ধতি এবং ফ্রিজারের তাপমাত্রার বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত। সংরক্ষণের আগে মাংস ধুয়ে পানি ঝড়িয়ে জিপলক বায়ুরোধক ব্যাগে ভরে রাখা উচিত।
ফ্রিজের তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি ফারেনহাইট বা মাইনাস ১৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে রাখা উচিত বলে জানিয়েছে এফডিএ। এই তাপমাত্রায় মাংসের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, ইস্টসহ জীবাণুগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।
রান্না করে সংরক্ষণ: ব্যস্ত জীবনে অনেকেই একবারে রান্না করে ফ্রিজে মাংস রেখে দিতে চান। রান্না করা মাংস ফ্রিজে রাখতে হলে পৃথক পৃথক পাত্রে রাখতে হবে। যখন প্রয়োজন হবে তখন একটি পাত্র বের করলেই চলবে।
শুটকি করে সংরক্ষণ: মাছের মতো মাংসও শুঁটকি করে সংরক্ষণ করা যায়। গ্রামাঞ্চলে মাংস ধুয়ে হলুদ মেখে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। রান্না করা মাংস ফ্রিজে দুই-তিন দিনের বেশি রেখে খেয়ে ফেলাই উত্তম।
মাংসের আচার: বিভিন্ন ধরণের আচারের মত মাংসও আচারের মত সংরক্ষণ করা যায়। হাড়-চর্বি ছাড়া মাংস ছোট ছোট করে কেটে আচার বানিয়ে ফ্রিজের বাইরেও সংরক্ষণ করা যায় বছর খানেক।
লেবু ও লবণ দিয়ে সংরক্ষণ: প্রথমে মাংসগুলো মাঝারি আকারে কেটে হালকাভাবে ছেঁচে নিতে হবে। পরে লবণ ও লেবুর রসে ঘণ্টাখানেক ডুবিয়ে রাখতে হবে তাহলে মাংসের ভেতরে সেটা পৌঁছায়। এভাবে মাংস কয়েকদিন পর্যন্ত ভালো রাখা যায়।
মাংস ভেজে সংরক্ষণ: মাংস কেটে পরিষ্কার করে আদা বাটা, রসুন বাটা পেঁয়াজ বাটা দিয়ে মাংসটি কিছুক্ষণ ম্যারিনেট করে রাখতে হবে। এরপর গরম ডুবো তেলে মসলাসহ মাংসগুলো ভেজে নিয়ে তেল ছেঁকে তারপর মাংস সংরক্ষণ করা যায়।
ডুবো তেলে মাংস সেদ্ধ করলে তা অনেকদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এরপর একদিন পরপর মাংসগুলো উচ্চতাপে গরম করতে হবে। এভাবে মাংস ১৫-২০ দিন পর্যন্ত ভালো থাকবে।
ফ্রিজে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয়
প্রথমে, আমরা যে ভুল করে ফেলি সেটা হলো, আমরা মাংস পলিব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে গোল গোল করে প্যাকেট করে ফ্রিজে রাখি। এতে করে জায়গা যেমন বেশি লাগে তেমনি ঠিক বোঝাও যায় না কোথায় কী আছে।
এ ক্ষেত্রে মাংসগুলো পলিথিন ব্যাগে ঢুকিয়ে একদম চাপ দিয়ে সমান করে ফেলতে হবে। যেন একটা বইয়ের মতো আকৃতি হয়। এরপর একটার ওপরে আরেকটা প্যাকেট রেখে সংরক্ষণ করলে জায়গা যেমন বাঁচবে, তেমনি কোথায় কী আছে তা বুঝতে আর সমস্যা হবে না।
মাংস ফ্রিজে রাখার পরে অনেক সময় সেখান থেকে রক্ত বের হয়ে ফ্রিজে জমতে দেখা যায়। এজন্য ডাবল পলিব্যাগ ব্যবহার করে মাংস সংরক্ষণ করুন। নাহলে পুরু পলিব্যাগ ব্যবহার করা যেতে পারে।
অনেক সময় মাংস রেখে দেবার পর সেটা ফ্রিজ থেকে বের করতে অসুবিধা হয়। সে ক্ষেত্রে চেষ্টা করবেন মাংস রাখার দুএক দিন পরেই সেগুলো কিছুটা নেড়েচেড়ে দিতে। তাহলে পরবর্তীতে মাংস আর ফ্রিজের গায়ে লেগে থাকবে না।
যদি ড্রয়ার সিস্টেমের ফ্রিজার হয় আপনার তাহলে একটা ড্রয়ারে ২টি পলিব্যাগ রাখার মতো জায়গা করবেন। এতে জায়গা নষ্ট হবে কম।
মাংসে বিভিন্ন ধরনের হাড় যেমন, গরু কিংবা খাসির পায়া, গরুর মাথার মাংস ইত্যাদি বেশিদিন ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখা ঠিক নয়। ফ্রিজে দীর্ঘদিন এই সকল মাংস রাখলে মাংসের গুণগত মান ঠিক থাকে না। সেইসঙ্গে এসব মাংসের স্বাদ কমে যায়।
বিএনএ/ এ আর