বিএনএ,মিরসরাই: মিরসরাই উপজেলা চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন ও তার ছোট ভাই রুবেলসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে জবর দখল ও হত্যা চেষ্টাযর মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় প্রথম আসামি উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাই রুবেল ও দুই নাম্বার আসামি উপজেলা চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন।
বৃহস্পতিবার ( ৮ জুন) চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে মামলার তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মামলার এজাহারে জানা যায়, মিরসরাই সদর ইউনিয়নের ঘড়িয়াইশ এলাকার গাজি নুর আহম্মদের ছেলে কাজী মোঃ নুরুল মোস্তফার পৈতৃক সম্পত্তি ( বিএস দাগ ২১৩৪) রয়েছে মিঠাছড়া বাজারে। তার পাশেই জমি খরিদ করেছেন জোরারগঞ্জ থানার দুর্গাপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর এলাকার মৃত মজিবুল হকের ছেলে মিরসরাই উপজেলা চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন। জমি ক্রয়ের পর উপজেলা চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন আশপাশের গরীব অসহায় মানুষ ও সরকারী খাস জমি দখল করতে থাকেন। পরবর্তীতে নুরুল মোস্তফার পৈতৃক সম্পত্তিতে পুরাতন দোকান ঘরের পাশে খালি জায়গা দখলের ফন্দি করেন তিনি। এই সময় জায়গা দখলের মতলবে নুরুল মোস্তফার খালি জায়গায় গভীর নলকূপ জনগণকে না দিয়ে অবৈধভাবে বসানোর চেষ্টা করেন। এসময় চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন কে বাধা দিলে উভয়ের মধ্যে ঝগড়ার সৃষ্টি হয় ও নলকূপটি সরিয়ে নিজের জায়গায় বসাতে বাধ্য হন তিনি। এতে চেয়ারম্যান জসিম ক্ষিপ্ত হয়ে দেখে নেয়ার হুমকি দেন বলে নুরুল মোস্তফার অভিযোগ।
পরবর্তীতে গত ৬ জুন নুরুল মোস্তফা নিজের খালি জায়গায় নতুন দোকান ঘর নির্মাণ করতে গেলে চেয়ারম্যান জসিমের নির্দেশে তার ছোট ভাই নাজিম উদ্দিন রুবেলের নেতৃত্বে মেজবাহ উদ্দিন, মনিরুল ইসলাম ইয়াহিয়া, আলাউদ্দিন, সামছুদ্দিন ও সবুজ সহ ২০ থেকে ২৫ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল তার ওপর হামলা চালায়। এ সময় চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন এর ছোট ভাই নাজিম উদ্দিন রুবেল কোমর থেকে একটি চাইনিজ কুড়াল বের করে নুরুল মোস্তফার মাথায় এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। এসময় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। উন্নত চিকিৎসা চলাকালীন নুরুল মোস্তফা গত ৮ জুন হামলা ও জবর দখলের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন।
ভুক্তভোগী নুরুল মোস্তফা জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান জসিম তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার লালিত সন্ত্রাসি বাহিনীর মাধ্যমে বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারী মূল্যবান খাস জমি ও হতদরিদ্রের সম্পত্তি দখল করছেন। ভয়ে তার বিরুদ্ধে কোন আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। থানায় গেলে মামলা নেয় না প্রশাসন। ফলে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন তিনি।
নুরুল মোস্তফা জানান, তার পৈতৃক সম্পত্তিতে অবৈধভাবে গভীর নলকূপ বসিয়ে দখল করতে চেষ্টা করেছিল চেয়ারম্যান জসিম। বাধা দেয়ায় সেটি করতে পারেনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্য ছোট ভাই ও সন্ত্রাসী পাঠিয়ে হামলা করেছে। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে না আসলে আমাকে হত্যা করে ফেলতো।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন জানান, আমার ক্রয়কৃত জমিতে অবৈধভাবে দোকান নির্মাণ করছে জানতে পেরে আমি আমার ছোট ভাই রুবেলকে থানায় পাঠাই পুলিশের কাছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে নুরুল মোস্তফা পুলিশ দেখে পালানোর সময় পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে। এর বাইরে আমি কিছু জানিনা।
চেয়ারম্যান জসিমের ছোট ভাই নাজিম উদ্দিন রুবেল জানান, আমাদের ক্রয়কৃত সম্পত্তির সীমানা নিয়ে পাশ্ববর্তী জায়গার মালিক নুরুল মোস্তফার সাথে মতবিরোধ রয়েছে। সেটি নিরসনের জন্য নুরুল মোস্তফাকে বার বার বৈঠক বসাতে চেষ্টা করে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও ভুমি অফিসের মাধ্যমে জমি পরিমাপ করে সীমানা নির্ধারণ করার জন্য চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়েছি। স্থাপনা নির্মাণের জন্য আমাদের জায়গায় মালামাল রাখা হলে সেগুলো দিয়ে নুরুল মোস্তফা অমীমাংসিত স্থানে কাজ করা শুরু করেন। খবর পেয়ে পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পথে পুলিশ জ্বালানি নিতে আমাকে অগ্রসর হতে বলে ফিলিং স্টেশনে যায়। আমি ঘটনাস্থলে প্রবেশ করতেই নুরুল মোস্তফা বাধা দেয়। এসময় নুরুল মোস্তফা একটি লোহার রড নিয়ে এগিয়ে আসতে চাইলে স্থানীয় লোকজনের সাথে হাতাহাতি হয়। তখন নুরুল মোস্তফার মাথায় লোহার আঁচড় লাগে। এ ব্যাপারে মিরসরাই থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি এবং পরদিন সকল সাংবাদিকদের ডেকে সংবাদ সম্মেলন করেছি।
মিরসরাই থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি কবির হোসেন জানান, এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন আমাকে কোন প্রকার ফোন করেননি। এমনকি থানায়ও কেউ আসে নাই। পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।
বিএনএ/ আশরাফ