বিএনএ, ডেস্ক : ‘নদীর এ কূল ভাঙে ও কূল গড়ে এই তো নদীর খেলা, সকাল বেলার আমীর রে ভাই, ফকির সন্ধ্যা বেলায়.. এ গানের মতোই জাতীয় পার্টিতে চলছে ভাঙ্গা -গড়ার খেলা। কখনও রওশন এরশাদ, কখনও জিএম কাদেরের জমে উঠে মজমা। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রয়াত এরশাদের জীবদ্দশায় জাতীয় পার্টিতে ভাঙ্গন ধরেছিল। সম্প্রতি ক্ষমতাসীন সরকারের সাথে দেন-দরবারের জেরে দলটির অবস্থা আরও নাজুক । চলছে দেবর-ভাবীর লড়াই। শেষতক রওশন এরশাদপন্থিরা কাউন্সিল করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেছেন।
এর মধ্য দিয়ে আবার ব্র্যাকেট বন্দি হলো আলোচিত-সমালোচিত সেনাশাসক এইচএম এরশাদের রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি।
গত ৯ মার্চ রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনে এ নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে ৩ বছরের জন্য এরশাদপত্নী বেগম রওশন এরশাদ চেয়ারম্যান এবং কাজী মামুনুর রশীদ মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। কাউন্সিলে রওশন এরশাদপন্থিরা দলকে নতুন করে সাজিয়ে শক্তিশালী অবস্থায় নিয়ে যেতে চান বলে জানান।
চেয়ারম্যান হিসেবে তার নাম ঘোষণা করা হলে উপস্থিত কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা দুহাত তুলে সমর্থন জানান। মহাসচিব হিসেবে ঘোষণা করা হয় কাজী মামুনুর রশীদের নাম। এরপর তিনি রওশনের পা ছুঁয়ে সালাম করেন। আংশিক কমিটিতে আরও দায়িত্ব পান নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, কো-চেয়ারম্যান সাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ, গোলাম সারোয়ার মিলন ও সুনীল শুভ রায়।
সম্মেলনে রওশন এরশাদ বলেন, এই সম্মেলন যদি না হতো, তাহলে জাতীয় পার্টি হারিয়ে যেতো। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আমরা হারিয়ে ফেলতাম। দেশের মানুষ জাতীয় পার্টি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতো। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই তার প্রতিফলন ঘটেছে। এই দশম সম্মেলনের মাধ্যমে এরশাদের নীতি-আদর্শ এবং উন্নয়ন-সমৃদ্ধি ও সংস্কারের রাজনীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। জনগণের মনে আবার আমরা বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি।
এর আগে ২৮শে জানুয়ারি রওশন এরশাদ নিজেকে চেয়ারম্যান ও কাজী মামুনুর রশীদকে মহাসচিব ঘোষণা দিয়ে পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে বহিষ্কার করেন। এরপর বহিষ্কৃত ও স্বেচ্ছায় দল থেকে সরে আসা নেতাকর্মীদের এক মঞ্চে আনেন রওশন।
এদিকে লাঙ্গলের আরেক অংশের কর্তৃত্ব জিএম কাদেরের হাতেই আছে। দলীয় কার্যালয়ও রয়েছে জিএম কাদেরপন্থিদের কবজায়।
রওশন এরশাদপন্থিদের পৃথক সম্মেলন নিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, জিএম কাদেরের নেতৃত্বে তাদের জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। তারা অন্য অংশের তৎপরতাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। কিন্তু জিএম কাদেরের নেতৃত্বে আমরাই মূল জাতীয় পার্টি।
দলের একটি অংশের হাল এরশাদের ছোটভাই জিএম কাদেরের হাতে। অপর অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এরশাদ-পত্নী রওশন এরশাদ। এরশাদের এই দুই শরীক ছাড়াও এক সময়কার রাজনৈতিক অনুসারী নাজিউর রহমান মঞ্জু এবং আনোয়ার হোসেন মঞ্জু অনেক আগেই দলের কিয়দাংশ ভেঙে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।
মুজিবুল হক চুন্নু আরও বলেন, আমরাই মূল জাতীয় পার্টি। যদিও জাতীয় পার্টির ভাঙনের ইতিহাস এটাই প্রথম নয়। এর আগেও ৬ বার ভেঙেছিল দলটি। দলটিতে এখন দুজন চেয়ারম্যান। গৃহদাহে জর্জরিত দলের ভবিষ্যৎ কোন্ পথে, তা নিয়ে চলছে নানা রাজনৈতিক হিসেব নিকেশ। তবে কো্ন্ অংশ মুল জাতীয় পার্টি সেটা অনেকাংশে নির্ভর করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ওপর।
বিএনএ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী, ওজি/এইচমুন্নী