বিএনএ, ডেস্ক: তারাবীহর (আরবি তারাবিহ একবচন তারবীহাতুন) আভিধানিক অর্থ বসা বিশ্রাম করা বা আরাম করা। তারাবীহ হলো রাতের একটি বিশেষ সুন্নত নামাজ যেটি মুসলিমগণ রমজান মাসব্যপী প্রতি রাতে এশার ফরজ নামাজের পর দীর্ঘ তিলাওয়াত সহকারে পড়ে থাকেন।
তারাবীহ সালাত জোড়া জোড়া রাকাত করে যেকোনো জোড় সংখ্যক রাকআত পড়া হয়। তারাবীহ সালাতের পর বিতর সালাত পড়া হয়। তারাবীহর নামাজের রাকআত নির্দিষ্ট করা হয়নি। হানাফি, শাফিয়ি ও হাম্বলি ফিকহের অনুসারীগণ ২০ রাকাত, মালিকি ফিকহের অনুসারীগণ ৩৬ রাকাত এবং আহলে হাদীসরা ৮ রাকাত তারাবীহ পড়েন। আবার অনেক হানাফিরাও ৮ রাকাত তারাবীহ পড়ে থাকেন।
তারাবিহ নামাজ প্রথম চাঁদ দেখা সন্ধ্যা (রমজানের শুরু) থেকে শুরু হয়ে দ্বিতীয় চাঁদ দেখা সন্ধ্যা (রমজানের শেষ দিন) পর্যন্ত চলে। এই নামাজটি ইসলামি বর্ষপঞ্জির রমজান মাসে ইমামের পেছনে জামাতের সঙ্গে পড়া হয় এশার নামাজের পর।
‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমজান মাসে তারাবিহ নামাজ পড়বে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে ।’ (- মুহাম্মাদ (সা.), বুখারি, হাদিস: ৩৬)
কোরআন নাজিলের মাস রমজান। তারাবিহর নামাজের প্রধান উদ্দেশ্য কোরআন তেলাওয়াত করা ও শোনা। এ নামাজেই মাসব্যাপী পূর্ণ কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করা হয়। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে তারাবীহর নামাজের দুটি পদ্ধতি প্রচলিত। একটি খতম তারাবীহ আর অন্যটি সূরা তারাবীহ। খতম তারাবীহর ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ কুরআন পাঠ করা হয়।
খতম তারাবীহর জন্য কুরআনের হাফেজগণ ইমামতি করেন। সূরা তারাবীহর জন্য যেকোন সূরা বা আয়াত পাঠের মাধ্যমে সূরা তারাবীহ আদায় করা হয়।
তারাবির নামাজ সুন্নাত মনে করে গুরুত্বহীন ভাবা উচিত নয়। যদিও এটা ফরজ বা ওয়াজিব নয়, তারপরও সুন্নাতে মুআক্কাদাহ হিসেবে এর গুরুত্ব মোটেও কম নয়। বিজ্ঞ আলেমরা সুন্নাতে মুআক্কাদাহকে ওয়াজিবের কাছাকাছি গুরুত্বপূর্ণ অভিহিত করেছেন। অর্থাৎ তারাবির নামাজ বর্জন করলে অবশ্যই গুনাহ হবে।
হযরত উরওয়াহ ইবনে যুবায়ের (রা.) হযরত আয়েশা (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন।
হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে রাতের বেলায় মসজিদে নববীতে নামাজ (তারাবি) আদায় করলেন। উপস্থিত লোকজনও তাঁর সঙ্গে নামাজ আদায় করলেন। একইভাবে তাঁরা দ্বিতীয় দিনেও নামাজ আদায় করলেন এবং লোকসংখ্যা অনেক বেশি হলো। অতঃপর তৃতীয় এবং চতুর্থ দিনেও মানুষ একত্রিত হলো কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) হুজরা থেকে বেরিয়ে তাদের নিকট এলেন না। অতঃপর সকাল হলে তিনি এলেন এবং বললেন, তোমাদের অপেক্ষা করার বিষয়টি আমি লক্ষ্য করেছি। কিন্তু শুধু এ ভয়ে আমি তোমাদের কাছে আসা থেকে বিরত থেকেছি যে, আমার আশঙ্কা হচ্ছিল, না জানি তোমাদের ওপর উহা ফরজ করে দেওয়া হয়।
হাদিসের তথ্যমতে, রাসুলুল্লাহ (সা.) তিনদিন মসজিদে নববীতে জামাতের সঙ্গে তারাবির নামাজ আদায় করেছেন। অতঃপর রাসুলের যুগে এবং হযরত আবু বকর (রা.)- এর খিলাফতকালে এবং হযরত ওমর (রা.)- এর খিলাফলের প্রথম দিকে মুসলমানরা একাকী অথবা খণ্ড খণ্ড ছোট জামাতে তারাবির নামাজ আদায় করতেন। অবশেষে হযরত ওমর (রা.) হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রা.)-কে ইমাম নির্ধারণ করে সম্মিলিতভাবে জামাতের সঙ্গে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ আদায়ের স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। (সহিহ আল-বোখারি, হাদিস : ২০১০)। অতএব মাহে রমজানের বিশেষ ফজিলতপূর্ণ আমল তারাবির নামাজকে অবহেলা করে মহান আল্লাহর দেওয়া গুনাহ মাফের বিশেষ সুযোগ হাতছাড়া করা হবে চরম নির্বুদ্ধিতা।
বিএনএনিউজ/ রেহানা/ বিএম/এইচমুন্নী