।। বাবর মুনাফ ।।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘বুলডোজার’ মিছিল কর্মসূচির মাধ্যমে গুড়িয়ে দেওয়া ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটি ৪দিন পর আবার আলোচনায় এসেছে। এর আগে গত তিনদিন ধরে আলোচনা ছিল, বঙ্গবন্ধুর বাড়ির আন্ডারগ্রাউন্ডে আয়না ঘর। সেই আয়না ঘর ছিল পানিতে পরিপূর্ণ। রোববার ফায়ার সার্ভিস কর্মিরা এসে সেই কথিত আয়না ঘরের পানি সেচ করেছে টানা ৪ ঘন্টা। কিন্তু তারা সেখানে কিছুই পায়নি। কিন্তু তার একদিন পর সোমবার সকালে আবার আলোচনায় ৩২ নম্বরের বাড়িটি। তবে এবারের আলোচনায় রয়েছে ভিন্নতা।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ধানমন্ডির শেখ মুজিবুর রহমানের ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে ‘কিছু হাড়গোড়’ পাওয়ার কথা জানিয়েছে। ফলে সারাদেশে এই নিয়ে নতুন করে হৈ-চৈ পড়ে গেছে। প্রশ্ন উঠেছে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের উদ্ধার করা হাড়গোড় গুলো কার? এই নিয়ে চলছে নানা আলোচনা- সমালোচনা। মেলছে গুজবের ডালপালা।
কথিত ‘বুলডোজার’ মিছিল কর্মসূচির মাধ্যমে গুড়িয়ে দেওয়া বাড়িটির ধংসস্তুপে হাড়গোড় দেখা গেছে এমন সংবাদ পেয়ে সোমবার সকাল ৮টার দিকে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থলে আসে। ধানমন্ডি থানা পুলিশের উপস্থিতিতে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট আলামত সংগ্রহের কাজ শুরু করে। আলামত সংগ্রহ শেষে সোয়া ১০টার দিকে সিআইডির টিম ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছে।
![YouTube player](https://i.ytimg.com/vi/ct4o-78Y1_E/maxresdefault.jpg)
ধানমন্ডি থানার ওসি আলী আহমেদ মাসুদ বলেন, “৩২ নম্বরে কিছু হাড়গোড় পাওয়া গেছে। তবে সেগুলো মানুষের না কি অন্য কোনো প্রাণীর, সেটি নিশ্চিত হতে সময় লাগবে।
শেখ হাসিনার পতন ও দেশত্যাগের ছয় মাস পূর্তির দিন গত বুধবার ‘বুলডোজার মিছিল’ কর্মসূচি থেকে ৩২ নম্বরের বাড়িটি ভাঙা শুরু হয়। বৃহস্পতিবার দিনভর সেখানে লুটপাটের পর বিকালে গরু জবাই করে বিরিয়ানি রান্না সেরে রাতে হয় জেয়াফতের আয়োজন।
ওইদিন থেকে ভবন দুটির ভাঙা স্তূপ থেকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে রড বের করে কেটে নিয়ে যেতে দেখা যায়। কেউ কেউ ভবনের দাঁড়িয়ে থাকা অংশেই রডের খোঁজে হাতুড়ি চালিয়েছেন, আবার কেউ ফাঁকা অংশের মাটি খুড়ে বের করে নিয়েছেন বৈদ্যুতিক তার।
প্রসঙ্গত, গত ৫ ফেব্রুয়ারি ভারতের আশ্রয়ে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনলাইনে বক্তব্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে ৩২ নম্বরের শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি গুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। বাড়ির পাশেই নির্মাণাধীন ভবনে উপস্থিত হয় বিক্ষুব্ধরা। সেই ভবনের কয়েকতলা বেজমেন্ট দেখতে পায় তারা। তার মধ্যে দুই তলা পর্যন্ত নামতে পারলেও পরবর্তী ফ্লোরে পানি দেখা যায়। অনুমান করা হয়, নিচে আরও কয়েকটি তলা রয়েছে। তার পর কয়েকদিন ধরে ওই বাড়ির বেজমেন্টের জায়গা নিয়ে চলছিল নানা আলোচনা।
সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ৩২ নম্বরের বেজমেন্টে রোববার সকাল থেকে পানি সেচ করার কাজ করছিল ফায়ার সার্ভিস। সেচের কাজ শেষ করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন দুপুর সোয়া ১টার দিকে। এরপর সোমবার সেখানে আলামত সংগ্রহে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট পৌঁছায় এবং বেশ কিছু হাড়গোড় উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ঐতিহাসিক বাড়ি যেন ছোটগল্প নিয়ে লেখা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই চরণের মতোই অবস্থা। ‘অন্তরে অতৃপ্তি রবে, সাঙ্গ করি মনে হবে, শেষ হইয়াও হইল না শেষ’।
বিএনএ নিউজ টুয়েন্টিফোর/ শাম্মী/এইচমুন্নী