25 C
আবহাওয়া
৬:০৯ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ইসরায়েলি বাহিনীর বীভৎস নির্যাতনের চিত্র প্রকাশ

ইসরায়েলি বাহিনীর বীভৎস নির্যাতনের চিত্র প্রকাশ

গাজা

বিশ্বডেস্ক:  প্রত্যেক মানুষ তার স্বাধীন সত্ত্বা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং স্বাধীনভাবে বাঁচতে চায়। এটা তার জন্মগত অধিকার। এই অধিকার যখন অন্যের দ্বারা লুণ্ঠিত হয় তখনই সে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। স্বাধীনতা ও বিজয় যে কোনো জাতির পরম আকাঙ্ক্ষিত বিষয়। ১৯৭১ মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য চক্রান্ত করে। দেশ স্বাধীন হবার দুদিন আগে তারা এ দেশীয় শিক্ষক, বিজ্ঞানী, সুশীল ব্যক্তি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, প্রকৌশলী, শিল্পীসহ বহু মানুষকে হত্যা করে। কুখ্যাত মার্কিন সামরিক কারাগার, গুয়ানতানামো বে এবং ইরাকের আবু গারিব বন্দীদের সাথে যে রুপ আচরণ করা হয়েছিল ইসরাইলও যে পথে হাটছে।

সম্প্রতি দখলদার ইসরায়েলীরা  ফিলিস্তিনিদের ওপর একই কায়দায় হামলা ও নির্যাতন চালাচ্ছে। নির্বাচারে হত্যা করা হচ্ছে নারী ও শিশুদের। তাদের ছোবল থেকে বাদ যাচ্ছে না কেউই।গাজাকে শুধু অবরোধ করে থেমে নেই, হাসপাতালে,আশ্রয় কেন্দ্রে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আহত রোগীর ওপর হামলা চালিয়ে হত্যা করার ঘটনাও তারা করছে। বিশ্ব বিবেক তাদের কাছে উপেক্ষিত।

ফিলিস্তিনিদের গ্রেপ্তারের পর নগ্ন করে পাশবিক নির্যাতন চালানোর একটি ভিডিও ও কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে।

প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, বন্দীদের কেবল আন্ডারওয়্যার পরিয়ে, চোখে পট্টি বেঁধে একটি সামরিক যানে করে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে এসব নীরিহ লোকদের কবে বন্দী করা হয়েছে বা কেন বন্দী করা হয়েছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কিন্তু বেশ কয়েকজন ব্যক্তির পরিবার ও সহকর্মীরা তাদের স্বজনদের বন্দী হওয়ার দিন-তারিখও জানিয়েছেন। নির্যাতনের প্রকাশিত ছবি দেখে তারা এ সব লোকদের পরিচিতি লাভ বা চিহিৃত করেন।

তুরস্কের জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম ডেইলি সাবাহ গাজার হত্যাকাণ্ড নিয়ে শনিবার(৯ডিসেম্বর ২০২৩) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত চিত্রগুলির তারা বিশ্লেষণ করে তুলে ধরেছে। সিরিজ আকারে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় একদল পুরুষকে প্রায় বিবস্ত্র অবস্থায় গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যা করেছে।

ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, পুরুষদের তাদের অন্তর্বাস(আন্ডারওয়্যার ) খুলতে বাধ্য করা হয়েছিল, চোখ বাঁধা অবস্থায় হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রাখা হয়। পরে সারিবদ্ধভাবে সামরিক গাড়ি দিয়ে চাপা দেওয়া হয়। এই ঘটনা ধামা চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। যা ইতোমধ্যেই একটি গভীর উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে বিশ্ব বিবেকের কাছে।ছবিতে দেখা যায়, পিঁছমোড়া দিয়ে পেছনে দুহাত বেঁধে লাইন ধরে বসিয়ে একে একে সামরিক যানে তোলা হয় তাদের। এ সময় আটক ব্যক্তিদের পায়ের জুতা সেন্ডেল গায়ের কাপড় আশপাশে মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। তাতে স্পষ্ট যে, আটক ব্যক্তিরা সাধারণ এবং বেসামরিক। ঘর থেকে তাদের তুলে এনে নির্যাতন করা হচ্ছে।

ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ওই ব্যক্তিরা বেশিরভাগই কারাগারে বন্দি ছিলেন। যা পরবর্তীতে নিহতের পরিবারের সদস্যরা নিশ্চিত করে। এই তালিকায় বেসামরিক ব্যক্তিরা রয়েছেন। যাদের কোনো গোষ্ঠীর সঙ্গে আপাতত সম্পর্ক নেই- বলে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে উঠে আসে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডকে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে গুরুতর নির্যাতনের বর্ণনা ইউরো-মেডিটারেনিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটর অ্যালার্মের বিশ্লেষনে উঠে এসেছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী ডাক্তার, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক এবং বাস্তুচ্যুত বয়স্ক ব্যক্তিদেরসহ বিভিন্ন ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে সমগ্র ফিলিস্তিনে নির্বিচারে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে, ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এখনও কোনো জবাব দেয়নি।

অন্যদিকে, পরিস্থিতিকে জটিলতা উল্লেখ করে ইসরায়েলি গণমাধ্যম বন্দীদের হামাসের আত্মসমর্পণকারী হিসেবে দাবি করেছে।

এর আগে সংবাদ সম্মেলনে, ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র রিয়ার অ্যাড. ড্যানিয়েল হাগারিকে গণমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিও এবং ছবি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তখন তিনি হামাস সদস্যদের আপাত গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রক্রিয়ায়, এলাকায় অবশিষ্ট ব্যক্তিদের পরিকল্পিতভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, গ্রুপটির সাথে যুক্ত শক্তিশালী ঘাঁটিগুলি ভেঙে ফেলার চলমান প্রচেষ্টার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।’

গাজা যুদ্ধে আল-আরব আল-জাদিদের সাংবাদিক দিয়া আল-কাহলোট, তার ভাই, আত্মীয় এবং অন্যান্য বেসামরিক নাগরিকদের সাথে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ ঘটনায় ওই গণমাধ্যমের সম্পাদক হুসাম কানাফানি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আল-কাহলোট এবং তার পরিবার এখনও নিখোঁজ।’

সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে, বন্দীদের এক আত্মীয় হানি আল-মাদৌন, ইসরায়েলি বাহিনী তাদের আশ্রয়ে থাকা বাড়ি থেকে পুরুষদের ডেকে নিয়ে হত্যার লোম হর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। নির্যাতনের একটি ছবিতে তার চাচাতো ভাই আবৌদকে শনাক্ত করেছেন। অন্য একটি ভিডিওতে তার ভাই মাহমুদকে দেখেছেন। তিনি বলেন, ‘মাহমুদ একজন দোকানদার এবং আবৌদ কোনো সরকারি কাজে জড়িত নন, কেবল তার বাবা দিনমজুর বাবাকে সহায়তা করেন।’

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় ১৭ হাজার ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক শিশু ও নারী। মাঝে বিশ্ব মোড়লদের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলেও আবারও হামলা চালাচ্ছে দখলদার বাহিনী।

বিএনএনিউজ২৪, এমএইচ,এসজিএন

Loading


শিরোনাম বিএনএ