বিএনএ লাইফস্টাইল ডেস্ক: রক্তশূন্যতা আমাদের দেশে একটি অতি-পরিচিত নাম। রক্তশূন্যতা কোনো রোগ নয়। বরং রোগের লক্ষণ। তাই এতে অবহেলা করা যাবে না। পৃথিবীর শতকরা ৩০ ভাগ মানুষ রক্তশূন্যতায় ভোগে। ফলে এটি একটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমস্যা। রক্তশূন্যতা বলতে রক্তের হিমোগ্লোবিন নামক রঞ্জক পদার্থের স্বল্পতাকে বুঝি। বয়স ও লিঙ্গভেদে এই হিমোগ্লোবিন যখন কাঙ্ক্ষিত মাত্রার নিচে থাকে, তখন বলা হয় অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা।
নারীদের স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিনের মাত্রা পুরুষদের স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কম। পুরুষের রক্তের হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা প্রতি ডেসিলিটারে ১৩ দশমিক ৫ থেকে ১৭ দশমিক ৫ গ্রাম। নারীদের রক্তে তা ১২ থেকে ১৫ দশমিক ৫ গ্রাম। এর চেয়ে কম হলে রক্তশূন্যতা ধরা হয়। আমাদের দেশে সাধারণত পুরুষের চেয়ে নারীর রক্তশূন্যতা বেশি।
হিমোগ্লোবিন শরীরের গুরুদায়িত্ব পালন করে থাকে। এটি কোষে কোষে পৌঁছে দেয় অক্সিজেন। সুতরাং হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি হলে কোষে অক্সিজেনপ্রবাহ ব্যাহত হয়। ফলে শরীর দুর্বল ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
যেভাবে বুঝবেন
হিমোগ্লোবিন কমতে থাকলে ক্লান্তি, অবসাদ ও ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়। স্বল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠে শরীর। হৃৎপিণ্ডের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়, শরীর ফ্যাকাশে হয়ে যায়। এমনকি তীব্র রক্তশূন্যতা হৃৎপিণ্ড অকার্যকর করতে পারে। তখন পায়ে পানি জমে। শুয়ে থাকলে শ্বাসকষ্ট হয়। রক্তশূন্যতার কারণে ঠোঁটের কোণে ক্ষত হয়, জিহ্বায় ঘা হয়, চুলের ঝলমলে উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়; চুল ও নখ ফেটে যায়। এর ফলে দেখা দিতে পারে স্নায়বিক দুর্বলতা।
কোনো কোনো রক্তশূন্যতায় প্রান্তীয় ও কেন্দ্রীয় স্নায়ু আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষত ফলিক অ্যাসিড ও ভিটামিন বি-১২ ঘাটতির কারণ রক্তশূন্যতা। নারীদের মাসিক হয়ে পড়ে অনিয়মিত। মাটি, কয়লা ইত্যাদির মতো অখাদ্য-কুখাদ্য গ্রহণের তীব্র আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয় কোনো কোনো রোগীর। লোহিত কণিকা ভেঙে রক্তশূন্যতা হলে জন্ডিস দেখা দেয়।
কেন রক্তশূন্যতা হয়?
আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতা সবচেয়ে পরিচিত। এ ছাড়া লোহিত রক্ত কণিকা সময়ের আগেই ভেঙে গেলে রক্তশূন্যতা হয়। দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন কিডনি অকেজো, লিভার অকার্যকর, থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা, আর্থ্রাইটিস, যক্ষ্মাসহ নানাবিধ রোগে হতে পারে রক্তশূন্যতা।
হিমোগ্লোবিনের জিনগত রোগ যেমন থ্যালাসেমিয়াসহ আরো অসংখ্য রোগে সৃষ্টি হতে পারে রক্তশূন্যতা। তবে আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তশূন্যতা সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। এর পেছনে রয়েছে অপুষ্টি, পেপটিক আলসার, বেদনানাশক ওষুধ সেবনের ফলে পাকস্থলীর ক্ষত, কৃমির সংক্রমণ, পাইলস কিংবা রজঃস্রাবের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ইত্যাদি। ঘন ঘন গর্ভধারণ আর স্তন্যদান আরেকটি বড় কারণ।
প্রতিকার কী?
রক্তশূন্যতা হলে এর তীব্রতা আর নেপথ্যের কারণ শনাক্ত করতে হবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যেহেতু আয়রনের ঘাটতির কারণে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়, সে জন্য খাদ্যতালিকায় যোগ করতে হবে আয়রনসমৃদ্ধ খাবার। লাল মাংস, গিলা-কলিজা, ছোট মাছ, লালশাক, কচুশাকসহ সবজি-আনাজ আর ফলমূল বেশি খেতে হবে। ক্ষেত্রবিশেষে আয়রন ট্যাবলেট, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি-১২ খেতে হবে। তবে কোনো কোনো রক্তশূন্যতায় আয়রন গ্রহণ নিষিদ্ধ। প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন, ভালো থাকুন।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ