26 C
আবহাওয়া
৪:৪৪ পূর্বাহ্ণ - অক্টোবর ৭, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ছাত্র-জনতার স্বপ্নের যাত্রা শুরু

ছাত্র-জনতার স্বপ্নের যাত্রা শুরু

yunus

ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ১৭ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদের ১৪ জন বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বঙ্গভবনে শপথ নিয়েছেন। বাকি তিন উপদেষ্টা পরে শপথ নেবেন।

ড. ইউনূস ক’দিন আগেও হাসিনা সরকারের তোপের মুখে ছিলেন। তিনিই নতুন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হলেন। তাঁর শপথের আগে দেশ সরকারহীন হয়ে পড়ে। অবশেষে ৭৯ ঘণ্টা পর তার অবসান হলো। ড. ইউনূস চিরচেনা গ্রামীণ চেকের ফতুয়া পরে শপথ নেন। তিনি বলেছেন, মানুষকে রক্ষাই হবে সরকারের প্রধান কাজ।

বিতর্কিত মামলায় আগের দিন পর্যন্ত দণ্ড মাথায় থাকলেও গতকাল দুপুরে ঢাকায় ফিরে বিমানবন্দরে উষ্ণ অভ্যর্থনা পান ড. ইউনূস। তাঁকে স্বাগত জানান তিন বাহিনীর প্রধানগণসহ শীর্ষ সামরিক ও বেসামরিক আমলারা। রাতে বঙ্গভবনের দরবার হলে তাঁকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। এর পরপরই উপদেষ্টা পরিষদের ১৩ সদস্য শপথ গ্রহণ করেন। এর আগে মুক্তিযুদ্ধের এবং ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের সম্মানে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শপথ অনুষ্ঠানে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা থাকলেও ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের কাউকে দেখা যায়নি। বঙ্গভবনের ফটক থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের সাবেক মিত্র দল বিকল্পধারার নেতা মাহী বি. চৌধুরীকে। অনুষ্ঠানে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক নেতাসহ নানা শ্রেণি-পেশার ৪০০ আমন্ত্রিত অতিথি। শপথ পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। গা-ঢাকা দিয়েছেন তাঁর সরকারের মন্ত্রী এবং সদ্য বিলুপ্ত দ্বাদশ সংসদের বেশির ভাগ এমপি। শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতনে সোমবার দুপুর ২টা ৩৫ মিনিট থেকে দেশ ছিল সরকারশূন্য। সে সময় থেকে শুরু হয় নানামুখী অরাজকতা।

উপদেষ্টারা শপথ নিলেও তাদের কে কোন মন্ত্রণালয় পাচ্ছেন, তা গতকাল রাত পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, মানবাধিকারকর্মী আদিলুর রহমান খান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত তৌহিদ হোসেন, পরিবেশ আইনবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বেসরকারি সংস্থা উবিনীগের (উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণা) নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক নায়েবে আমির আ ফ ম খালিদ হাসান, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরজাহান বেগম, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

সাবেক রাষ্ট্রদূত ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুপ্রদীপ চাকমা, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় এবং ফারুক-ই-আজমকে উপদেষ্টা হিসেবে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিলেও তারা ঢাকায় উপস্থিত না থাকায় শপথ নেননি। গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তালিকা থেকে তারা এসেছেন বলে জানা গেছে।

উপদেষ্টা সবাই অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। কোন মাপকাঠিতে তাদের মনোনীত করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সর্বাত্মক অংশ নিলেও দল দুটির পছন্দ আমলে নেওয়া হয়নি বলে সূত্র জানিয়েছে।

নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি আশা প্রকাশ করেন, দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারের প্রত্যাবর্তন হবে।

উপদেষ্টা বাছাই প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, গণঅভ্যুত্থানের নায়ক ছাত্ররা। তারাই মূল অংশীজন। রাজনৈতিক দলগুলো হচ্ছে সহায়ক অংশীজন। ছাত্ররা উপদেষ্টা হিসেবে যাদের পছন্দ করেছে, সেই পছন্দকে সম্মান করি।

শপথ গ্রহণের জন্য গতকাল সন্ধ্যার পর একটি বিএমডব্লিউ গাড়ি প্রধান উপদেষ্টাকে আনতে সচিবালয় থেকে বেরিয়ে যায়। এর পর অন্য উপদেষ্টাদের বাসভবনে যায় গাড়ি। এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সচিবালয়ের পরিবহন পুল থেকে পাঠানো ২১টি গাড়ি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সামনের পার্কিং জোনে রাখা হয়। এসব গাড়িতে চড়েই তারা শপথের জন্য বঙ্গভবনে যান।

সরকারের মেয়াদ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি

বিগত তিন দশকের বেশি সময় ধরে দেশের রাজনীতিতে নির্বাচন ও সরকার পরিবর্তন নিয়ে নানা সংকটকাল পার হচ্ছে। এ সংকটের স্থায়ী সমাধান নতুন সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ও বৈধতার প্রশ্নে পরবর্তী সময়ে আপিল বিভাগের কাছে ব্যাখ্যা চাইবেন রাষ্ট্রপতি। কারণ, সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ বাতিল এবং আগামী নির্বাচনের অব্যাহতিকালে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের প্রয়োজন হলে রাষ্ট্রপতিকে বিলুপ্ত সংসদের সদস্যদের মধ্য থেকে নিয়োগ দিতে হবে।

এ বিষয়ে আলোচনা করতে গতকাল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন কথা বলেন ল রিপোর্টার্স ফোরামের সাবেক সভাপতি এবং আইন ও সংবিধান বিশ্লেষক সালেহ উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি বিলুপ্ত সংসদের এমপিদের খুঁজে পাননি। অধিকাংশ এমপি পালিয়েছেন। ফলে দেশ সরকারবিহীন হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক যোগাযোগ, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্র পরিচালনার প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি অন্তর্নিহিত ক্ষমতা প্রয়োগ করে সরকার গঠন করেছেন। এর কাঠামো ও পরিধি নতুন সরকারই নির্ধারণ করবে।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের যুগপৎ আন্দোলনে ত্রয়োদশ সংশোধনীতে সংবিধানে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান যুক্ত হয়। আদালতের রায়ের আলোকে ২০১০ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাতিল হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। সেই সংশোধনী বাতিল না হলেও ড. ইউনূসের সরকারের আদল অনেকটাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো। আওয়ামী লীগ অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকাকে জাদুঘরে পাঠানোর কথা বলেছিল।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ সংবিধানে ৯০ দিন নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। তবে ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন সেনা সমর্থিত ওয়ান-ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর ক্ষমতায় ছিল। সেবারও ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা হতে অনুরোধ করা হয়েছিল। তবে তখন তিনি স্বল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব নিতে রাজি হননি।

ইউনূস সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে– সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান শপথের প্রাক্কালে বলেন, বিব্রতকর কঠিন প্রশ্ন করবেন না। আপনাদের মতো কাজ করতে করতে এ জায়গায় এসেছি। অন্তর্বর্তী সরকারের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, মানবাধিকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, বৈষম্য দূর করাই মূল উদ্দেশ্য।
দ্রুত নির্বাচন চান কিনা– প্রশ্ন এড়িয়ে জামায়াতের আমির বলেন, মাত্র সরকার হলো। এক-দুই করে এগোতে চাই।

যমুনায় ড. ইউনূস

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উঠেছেন। সরকারি আবাসন পরিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, যমুনা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন এবং কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার হবে। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর বিক্ষুব্ধ জনগণ গণভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রবেশ করে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। ফলে এ দুই জায়গায় আপাতত অফিস বা বাস করার মতো অবস্থা নেই।

এদিকে, ড. ইউনূস আজ শুক্রবার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ