বিএনএ ক্রীড়া ডেস্ক: ইতিহাসের সবচেয়ে ‘চ্যালেঞ্জিং’ অলিম্পিকের পর্দা নামল। জাপানের টোকিওর ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে জমকালো আয়োজনে হয় সমাপনী অনুষ্ঠান। টোকিওর স্থানীয় সময় রোববার রাত আটটায় শুরু হয় সমাপনি অনুষ্ঠান। বসে ১১ হাজারেরও বেশি অ্যাথলেটের মিলন মেলা।
৬৮ হাজার আসনের দর্শক শূন্য অলিম্পিক স্টেডিয়ামে গেমসের সমাপ্তি ঘোষণার সময় করোনা মহামারি চলাকালে এই আয়োজনকে ‘অভূতপূর্ব’ বলে উল্লেখ করা হয়।টোকিও অলিম্পিকের সমাপ্তি ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) প্রধান থমাস বাখ।
সে সময় স্টেডিয়ামে মাস্ক পরে নিজ দেশের পতাকা হাতে মার্চপাস্টে অংশ নেন অ্যাথলেটরা। এরপর প্যারিসের মেয়র অ্যানে হিদালগোর কাছে ২০২৪ অলিম্পিকের পতাকা হস্তান্তরের দৃশ্য সরাসরি প্রদর্শন করা হয়।
যে মশালটি গত ২৩শে জুলাই জ্বালানো হয়েছিল, সেই মশালটি ১৬দিন জ্বালানোর পর অবশেষে নিভিয়ে দেয়া হল।তিন বছর পর সেই মশালটিই আবার জ্বলে উঠবে, ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে ম্যারাথনের বিজয়ীদের হাতে পদক তুলে দেয়ার পর মহাশূন্যে বিউগল বাজানোর দৃশ্য দেখানো হয়। এরপর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ভিডিও বার্তাও উপস্থাপন করা হয়। প্যারিসে বিমানে তিন রঙের ধোঁয়া উড়িয়ে আঁকা ফ্রান্সের পতাকা বানানোর দৃশ্যও সরাসরি উপস্থাপন করা হয় জায়ান্ট পর্দায়।
সমাপণী অনুষ্ঠান শেষ হতেই সাদা এবং সোনালী রঙয়ের আতশবাজিতে ভরে ওঠে টোকিও অলিম্পিক স্টেডিয়ামের চারপাশ।দর্শকহীন স্টেডিয়ামে খেলা আয়োজন করার কারণেই এই রঙকে বেছে নেয়া হয় আতশবাজির জন্য।
তবে আলাদা বৈশিষ্ট্যের এই গেমসটির সমাপনি অনুষ্ঠানে স্টেডিয়ামটি ছিল অনেকটাই ফাঁকা।সেখানে শুধুমাত্র অ্যাথলেট, কর্মকর্তা ও গণমাধ্যম কর্মী। অলিম্পিক ভিলেজে কঠিন জৈব সুরক্ষা বলয়ে অবস্থান করেছেন অ্যাথলেটরা।সামাজিক দূরত্ব রক্ষার পাশাপাশি শুধুমাত্র খাওয়া, ঘুমানো, অনুশীলন ও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সময় মাস্ক পরিধান থেকে নিষ্ক্রিতি পেয়েছে অ্যাথলেটরা। বাকী সময় তাদেরকে মাস্ক পরেই থাকতে হয়েছে।
কোভিড পরিস্থিতির কারণে গেম শেষ হবার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে অ্যাথলিটদের ভেন্যু ছাড়ার নির্দেশনা থাকায় তুলনামূলকভাবে কম সংখ্যক অ্যাথলেট অংশ নিতে পেরেছে সমাপনি অনুষ্ঠানে।
স্টেডিয়ামের মাঝখানে করা বৃত্তে প্রতিটি দেশের পতাকাবাহকদের প্রবেশ দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। যেসব দেশের প্রতিনিধিরা ছিলেন না, সেসব দেশের পতাকা বহন করেছেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
রোববার সমাপনি দিনের সেরা ইভেন্ট ছিল পুরুষদের ম্যারাথন। সেখানে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেন কেনিয়ার এলিউড কিপচোজে। রিও অলিম্পিকের কাছাকাছি সময় নিয়ে টোকিওর স্বর্ণ নিজের করে নেন এই দৌঁড়বিদ। পদক তালিকায় চীনকে পেছনে ফেলে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ শেষ দিনে ভলিবল, ট্র্যাক সাইক্লিং ও বাস্কেটবল ইভেন্টের স্বর্ণ পদক জয় করে যুক্তরাষ্ট্র।
এবারের আসরে ৩৯টি স্বর্ণ, ৪১ রৌপ্য, ৩৩ ব্রোঞ্জসহ মোট ১১৩টি পদক নিয়ে শীর্ষে থেকে আসর শেষ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ৩৮ স্বর্ণ, ৩২ রৌপ্য, ১৮ ব্রোঞ্জসহ মোট ৮৮টি পদক নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চীন। ২৭টি স্বর্ণপদক নিয়ে স্বাগতিক জাপানের অবস্থান তিন নম্বরে।২২টি পদক নিয়ে তালিকার চতুর্থ স্থান লাভ করে যুক্তরাজ্য। ডোপিংয়ের কারণে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া রাশিয়ার পদক সংখ্যা ২০টি। তারা জায়গা পেয়েছে তালিকার পঞ্চম স্থানে।
সর্বাধিক টীকা নেয়া অলিম্পিকের অ্যাথলেট ও কর্মকর্তাদের মধ্যেও ৪৩০টি করোনা পজিটিভের কেস ধরা পড়েছিল। এদের মধ্যে অলিম্পিক ভিলেজে ৩২টি ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে, উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানের তুলনায় সমাপনী অনুষ্ঠানকে আরও বেশি জমকালো করার পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল।তবে, সেটিকে কিছুটা বাধাগ্রস্ত করেছে বৃষ্টি।
টোকিও অলিম্পিকের সমাপনি অনুষ্ঠানে জাপানের সংস্কৃতি, লোকাচার, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উত্থানকে নানাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সেইসঙ্গে দেখানো হয়েছে মারাত্মক সব ভূমিকম্প, সুনামি এবং ২০১১ সালে ঘটে যাওয়া পারমানবিক বিপর্যয় থেকে দেশটি কিভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
বিএনএনিউজ/আরকেসি