বিএনএ ডেস্ক : বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে রাজশাহী- ৬ আসনের হালচাল।
রাজশাহী-৬ আসন
রাজশাহী-৬ সংসদীয় আসনটি চারঘাট এবং বাঘা উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৫৭ নাম্বার আসন। এ আসনটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে পরিচিতি হয়েছে। ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটির পরিচয় ছিল রাজশাহী ১৬ নামে। ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-১৪ নামে নামকরণ হয়। ২০০৮ সালে সংসদীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণের পর থেকে জাতীয় সংসদের ৫৭ নম্বর আসনটি নামকরণ করা হয় রাজশাহী-৬ নামে।
উইকিপিডিয়া ও নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য নেই। ফলে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম জাতীয় সংসদের ৫৭ নম্বর আসনটির বিষয়ে ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে অষ্টম জাতীয় সংসদের ধারাবাহিক আসন ভিত্তিক বিচার বিশ্লেষণ করতে পারেনি।
নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শাহরিয়ার আলম বিজয়ী হন
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৭ হাজার ৬শত ৯৮ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৩০ হাজার ৬ শত ৯০ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শাহরিয়ার আলম বিজয়ী হন। তিনি পান ১ লাখ ২৭ হাজার ৫ শত ৬৩ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আজিজুর রহমান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯৯ হাজার ১ শত ১২ ভোট।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শাহরিয়ার আলম নির্বাচিত
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭৩ হাজার ৮ শত ৫ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শাহরিয়ার আলম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭০ হাজার ১শত ১০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হক রায়হান। প্রজাপতি প্রতীকে তিনি পান ২১ হাজার ৪ শত ৬৩ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।
একাদশ সংসদ নির্বাচন:নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের শাহরিয়ার আলম
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৪ হাজার ২শত ৯৮ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ১৮ হাজার ৬ শত ৪০ জন। নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৪ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের শাহরিয়ার আলম, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির আবু সাঈদ চাঁদ, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন, হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আব্দুস সালাম সুরুজ প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শাহরিয়ার আলম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ২ হাজার ১ শত ৪ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আব্দুস সালাম সুরুজ। হাতপাখা প্রতীকে তিনি পান ৭ হাজার ৮ শত ৭১ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
রাজশাহী-৬ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন শাহরিয়ার আলম। তিনি ২০১৪ সালের ১৪ই জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। শাহরিয়ার আলম আওয়ামী লীগ থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও মনোনয়ন চাইবেন।
শাহরিয়ার আলম ছাড়াও আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দিন লাভলু ও সাবেক এমপি রায়হানুল হক রায়হান।
এই তিনজনের মধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে শাহরিয়ার আলমের অবস্থান বেশ শক্ত। তবে তাকে নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। স্থানীয় নেতাদের একটি বড় অংশ তার বিপক্ষে অবস্থান করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকায় এলাকায় তিনি প্রয়োজনীয় সময় দিতে পারেন না। সেকারণে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার দুরত্ব রয়েছে, এছাড়া তিনি একটি নিদিষ্ট বলয়ে আটকে আছেন এমন অভিযোগও রয়েছে।
বিএনপি থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবেন পাঁচজন। এরা হচ্ছেন রাজশাহী জেলা বিএনপির আহবায়ক ও চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাইদ চাঁদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দেবাশীষ রায় মধু, ৮০ দশকের ছাত্র নেতা ও জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি নুরুজ্জামান খান মানিক ও জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন উজ্জল।
জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন একাদশ জাতীয় সংসদের প্রার্থী ইকবাল হোসেন ও শামসুদ্দিন রিন্টু । ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আব্দুস সালাম সুরুজ।
তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, পদ্মা পাড়ের বাঘা ও চারঘাট উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৬ সংসদীয় আসনটিতে নবম থেকে একাদশ টানা বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ । দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চায় বিএনপি। আওয়ামী লীগ চায় আসনটির অবস্থান ধরে রাখতে। দুই রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত। তবে আওয়ামী লীগে অন্তকোন্দল রয়েছে। ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর শক্ত ঘাঁটি এটি। দলটির বড় একটি ভোটব্যাংক আছে। বাঘা উপজেলা এবং চারঘাট উপজেলায় জনপ্রতিনিধিদের বেশিরভাগ জামায়াত-বিএনপির সক্রিয় নেতা। তারা আওয়ামী লীগকে হঠাতে এখন থেকেই মাঠে নেমেছে। জাতীয় পার্টির তেমন কোন তৎপরতা নেই। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৫৭ নম্বর রাজশাহী-৬ আসনটিতে বিএনপি আওয়ামী লীগের মধ্যে হাড্ডাহাড়ি লড়াই হবে।
বিএনএ/ শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ