বিএনএ, ঢাকা: প্রেমিকের বাসায় ‘বিষপান’ করে অসুস্থ হয়ে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে ছিলেন অঙ্কন বিশ্বাস নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক ছাত্রী। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (৮ মে) রাত সাড়ে ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তার মৃত্যু হয়। এর আগে গত ২৪ এপ্রিল রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে এ ছাত্রীকে মুমূর্ষু অবস্থায় রেখে পালিয়ে যান প্রেমিক একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শাকিল আহমেদ।
জানা যায়, অঙ্কন জবির ইংরেজি বিভাগের ২০১৬-১৭ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। স্নাতকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম অঙ্কন ভালো বিতার্কিক ছিলেন। বিতর্কের সুবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক সভাপতি ও আইন বিভাগের ২০১১-১২ বর্ষের শিক্ষার্থী শাকিলের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। কয়েক মাস ধরে এ সম্পর্কে বিপত্তি দেখা দেয়। শাকিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। অঙ্কনকে এড়িয়ে চলেন এবং অন্য ধর্মের হওয়ায় বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান।
এরপর ঘটনার দিন সকালে শাকিলের বাসায় যান অঙ্কন। সেখানে একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে শাকিল ও তার ছোট ভাই হিমেল অঙ্কনকে আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে যান। তখন শাকিল কখনও ভাই কখনও বন্ধুর পরিচয়ে ভর্তি করাতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখানে ভর্তি করাতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে হাসপাতাল থেকে অঙ্কনের বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু আব্দুল মুকিত চৌধুরী সানীকে ফোনে খবর দেওয়া হয়।
অঙ্কনের বন্ধু সানী বলেন, ২৪ এপ্রিল দুপুর দেড়টার দিকে আজগর আলী হাসপাতাল থেকে অঙ্কন অসুস্থ বলে একটা ফোন আসে। পরে সেখানে গিয়ে অঙ্কনকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেখতে পাই। ডাক্তাররা তার শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিলেন। এ সময় হাসপাতালে শাকিল ও তার ভাই হিমেলকে দেখতে পাই। শাকিল ভাই ও বন্ধুর পরিচয়ে ভর্তি করাতে চাইলে প্রথমে ভর্তি করায়নি কর্তৃপক্ষ। পরে স্বামী পরিচয়ে ভর্তি করান।
তিনি বলেন, শাকিল প্রথমে ঘটনা বলতে চাইছিলেন না। পরে বলেন, বাসা থেকে হয়ত কিছু খেয়ে তার বাসায় এসেছে অঙ্কন। সেখানে কথা বলার একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে যান। পরে সানী সেখান থেকে অঙ্কনের পরিবারকে জানান।
অঙ্কন আজগর আলী হাসপাতালে বিষক্রিয়ায় হার্ট অ্যাটাক ও পরে ব্রেন স্ট্রোক করেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
আজগর আলী হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, স্বামী পরিচয়ে অঙ্কনকে হাসপাতালে ভর্তি করান শাকিল। পরে অঙ্কনের বাবা তপন বিশ্বাস তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করেন।
অঙ্কনের মৃত্যুর পরে ভয়ে মুখ খুলছে না তার পরিবার। এদিকে শাকিল অঙ্কনকে হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে পলাতক রয়েছেন। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু সাঈদ আল মামুন বলেন, এ ঘটনায় একটা পুলিশ ফাইল হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে যদি কোনো অভিযোগ দেওয়া হয় তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।
বিএনএ নিউজ২৪