25 C
আবহাওয়া
১:৫২ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » গীতিকার, সাংবাদিক কে জি মোস্তফা আর নেই

গীতিকার, সাংবাদিক কে জি মোস্তফা আর নেই


বিএনএ, ঢাকা: প্রখ্যাত গীতিকার ও সাংবাদিক কে জি মুস্তাফা  আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

রোববার (৮ মে) রাত ৮টার দিকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি ও হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, রাত আটটায় তার হার্ট অ্যাটাক হয়। তাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সোমবার (৯ মে) বাদ জোহর জাতীয় প্রেস ক্লাবে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

কে জি মোস্তফার জন্ম ১৯৩৭ সালের ১ জুলাই, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষানবিশ হিসেবে তার হাতেখড়ি দৈনিক ইত্তেহাদে, ১৯৫৮ সালে। ওই বছরই ‘দৈনিক মজলুম’-এ সহ-সম্পাদক পদে নিয়োগ পান। পত্রিকাটি বিলুপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি বহাল ছিলেন।

দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৬৮ সালে ফের সাংবাদিকতা শুরু করে সাপ্তাহিক জনতায়। ১৯৭০ সালে সাবেক মন্ত্রী ও বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা কফিলউদ্দীন চৌধুরীর প্রেস সেক্রেটারি নিযুক্ত হন। সে সময় তিনি সরকারি চাকরি হিসেবে প্রথম শ্রেণির রেডিও সার্ভিসের জন্যও মনোনীত হন। তবে মুক্তিযুদ্ধের কারণে সে চাকরিতে যোগ দেননি তিনি।

স্বাধীনতার পর কে জি মোস্তফা প্রথমে ‘দৈনিক গণকণ্ঠ’ ও পরে ‘দৈনিক স্বদেশ’ পত্রিকায় প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ‘দৈনিক জনপদে’ কাজ করেন কূটনৈতিক প্রতিবেদক হিসেবে। ওই সময় ‘নূপুর’ নামে একটি বিনোদন মাসিকও সম্পাদনা করতেন। ১৯৭৬ সালে বিলুপ্ত সংবাদপত্রের একজন সাংবাদিক হিসেবে কে জি মোস্তফা বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারভুক্ত হন এবং চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতরে সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন। পদোন্নতি পেয়ে প্রথমে সম্পাদক, পরে সিনিয়র সম্পাদক পদে উন্নীত হন। অবসর নেন ১৯৯৬ সালে।

চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর থেকে প্রকাশিত কিশোর পত্রিকা ‘নবারুণ’, সাহিত্য মাসিক ‘পূর্বাচল’, ‘সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সংবাদ’ এবং সবশেষ ‘সচিত্র বাংলাদেশ’ পত্রিকার সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন কে জি মোস্তফা। ওই সময় কিছুদিনের জন্য বাংলাদেশ স্কাউটসের মুখপত্র ‘অগ্রদূত’-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ছিলেন। সর্বশেষ তিনি দৈনিক মুক্তকণ্ঠের সম্পাদক ছিলেন।

কে জি মোস্তফার লেখালেখি শুরু ছাত্রজীবনেই। ওই সময় থেকেই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকীতে তার লেখা কবিতা প্রকাশিত হয়ে আসছে। এক পর্যায়ে গান লিখতে শুরু করেন এবং তার লেখা বেশ কিছু গান অসামান্য জনপ্রিয়তা পায়। তার লেখা গানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে তালাত মাহমুদের কণ্ঠে ‘তোমারে লেগেছে এতো যে ভালো চাঁদ বুঝি তা জানে’ এবং মাহমুদুন্নবীর কণ্ঠে ‘আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন’। প্রথম গানটি এহতেশাম পরিচালিত ‘রাজধানীর বুকে’ এবং দ্বিতীয় গানটি অশোক ঘোষ পরিচালিত ‘নাচের পুতুল’ সিনেমায় ব্যবহার করা হয়েছে। দু’টি গানেরই সুর করেছেন রবিন ঘোষ।

এক সময় নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালনার দিকেও ঝুঁকেছিলেন কে জি মোস্তফা। ‘মায়ার সংসার’, ‘অধিকার’ ও ‘গলি থেকে রাজপথ’ ছবিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন।

কে জি মোস্তফার লেখা কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে— কাছে থাকো ছুঁয়ে থাকো, উড়ন্ত রুমাল, চক্ষুহীন প্রজাপতি, সাতনরী প্রাণ, এক মুঠো ভালোবাসা, প্রেম শোনে না মানা। তার লেকা গল্পের বই কোথায় চলেছি আমি (সরস আত্মকাহিনী)। এছাড়া শিশু তুমি যিশু, কন্যা তুমি অনন্যা, মজার ছড়া শিশুর পড়া নামে তার তিনটি ছড়ার বইও রয়েছে।

কুমিল্লা অলক্ত সাহিত্যসংসদ, জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ললিতকলা বিভাগের ‘সফেন’, ‘সৃজনী’ সংগীত গোষ্ঠী, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ, বাংলাদেশ স্কাউটস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘ডাকসু’সহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে সম্মাননা, সংবর্ধনা ও  একুশে পদক পেয়েছেন তিনি।

বিএনএ/এমএফ

Loading


শিরোনাম বিএনএ