।। শামীমা চৌধুরী শাম্মী।।
বিএনএ, ঢাকা : ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের কার্যক্রম ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এবার দেশের ৪৮১টি উপজেলায় ভোট হবে চারটি ধাপে। এর মধ্যে দুই ধাপের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলায় ভোট হবে ৮ মে এবং দ্বিতীয় ধাপে ১৬১টি উপজেলায় ভোট হবে ২১ মে। বাকি দুই ধাপের তফসিল এখনো ঘোষণা করা হয়নি।
প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শুরু হয়েছে। ঈদের পরপরই ১৫ এপ্রিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হবে।
এবার উপজেলা নির্বাচনের বিধিমালায় বেশ কিছু সংশোধনী এনেছে নির্বাচন কমিশন । উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ও নির্বাচন আচরণ বিধিমালায় আনা এসব সংশোধনী এবারের নির্বাচনে কার্যকর হবে।
এত দিন ধরে নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হতো রিটার্নিং কর্মকর্তা বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে। প্রার্থীরা তাঁদের কর্মী–সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতেন। এবার আর সে সুযোগ নেই। প্রথমবারের মত অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে অনলাইনে নির্ধারিত পদ্ধতিতে।
উপজেলা নির্বাচনের বিধিমালায় যেসব সংশোধনী আনা হয়েছে, তার মধ্যে এবার মনোনয়নপত্রে লিঙ্গ হিসেবে ‘হিজড়া’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ হিজড়ারা চাইলে হিজড়া পরিচয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। অন্য নির্বাচনে এই বিধান আগেই করা হয়েছিল। তবে উপজেলায় তা সংযুক্ত করা হয়েছে।
২০০৮ সাল থেকে নির্বাচনী প্রচারে রঙিন পোস্টার করা বন্ধ ছিল। এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সাদা–কালো বা রঙিন পোস্টার, ব্যানার করার বিধান আনা হয়েছে। প্রতীক বরাদ্দের আগে এত দিন প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিক প্রচারের সুযোগ পেতেন না। এবার সীমিত পরিসরে প্রচারের সুযোগ রাখা হয়েছে। প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রার্থীরা সর্বোচ্চ পাঁচজন কর্মী–সমর্থক নিয়ে জনসংযোগ করতে পারবেন। প্রতীক বরাদ্দের আগে ডিজিটাল মাধ্যমেও প্রচার চালাতে পারবেন প্রার্থীরা।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে এত দিন ২৫০ জন ভোটারের সমর্থনসূচক সই মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হতো। এবার সে বিধান বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে ভোটারদের সমর্থনসূচক সইয়ের তালিকা আর দিতে হবে না।
এত দিন চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীদের জামানত হিসেবে ১০ হাজার টাকা জমা দিতে হতো। এবার দিতে হবে ১ লাখ টাকা। ভাইস চেয়ারম্যান পদে দিতে হবে ৭৫ হাজার টাকা। প্রার্থীরা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জামানতের যে টাকা জমা দেন, ভোট শেষে তা ফেরত পান। তবে এই টাকা ফেরত পেতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ভোট পেতে হয়। নাহলে জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়। এবার জামানত রক্ষায় আগের চেয়ে বেশি ভোট পেতে হবে। এত দিন প্রদত্ত ভোটের এক–অষ্টমাংশ বা প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশ ভোট পেলে জামানত রক্ষা হতো। এবার প্রার্থীদের পেতে হবে প্রদত্ত ভোটের ১৫ শতাংশ।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো পদে একাধিক প্রার্থী সমান ভোট পেলে আবার ভোট করার বিধান ছিল। এখানে এবার সংশোধনী আনা হয়েছে। একাধিক প্রার্থী সমান ভোট পেলে ফলাফল নির্ধারণ করা হবে লটারিতে।
বৈধভাবে বা অবৈধভাবে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করে নির্বাচন কর্মকর্তাকে অস্ত্র প্রদর্শন বা শারীরিক বল প্রয়োগের মাধ্যমে স্বাভাবিক নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে কোনো ব্যক্তি যদি বাধা সৃষ্টি করেন, তাহলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ভোট গ্রহণ বন্ধ করতে পারবেন। যদি কেউ ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয় বা মনোনয়নপত্র দাখিলে বিরত রাখতে চেষ্টা করে, এমনকি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে বাধ্য করার চেষ্টা চালায়—তখন সেই ব্যক্তি দুই বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করে এসব ক্ষমতা যুক্ত করা হয়। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বিধিমালাতেও এ দুটি বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
নির্বাচনে উপজেলায় একটির বেশি কেন্দ্রীয় ক্যাম্প বা কার্যালয় স্থাপন করা যাবে না। ইউনিয়ন বা পৌরসভার ওয়ার্ড পর্যায়ে নির্বাচনী ক্যাম্প বা অফিসের আয়তন ৬০০ বর্গফুট এবং কেন্দ্রীয় ক্যাম্প বা অফিসের আয়তন ১২০০ বর্গফুটের বেশি হতে পারবে না। নির্বাচনী প্রচারণায় একটির বেশি মাইক বা জনসভায় চারটির বেশি মাইক ব্যবহার করা যাবে না। শব্দদূষণ প্রতিরোধে শব্দবর্ধনকারী যন্ত্রের শব্দের মান মাত্রা ৬০ ডেসিবেলের বেশি হতে পারবে না। প্রচারের পোস্টার বা ব্যানারে পলিথিন ব্যবহার করা যাবে না।
বিএনএ নিউজ/ এইচ.এম।