বিএনএ, ঢাকা: পরীক্ষার হলে বসে ফেসবুকে লাইভে এসে নানা রকম মন্তব্য করেছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন।
শনিবার (৯ এপ্রিল) দেশব্যাপী কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন বিষয়ে ছয় ও তিন মাসমেয়াদি কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিতে গিয়ে লাইভ করেন তিনি। ঝিনাইদহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষায় অংশ নেন মনির হোসেনসহ ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতা।
মনির হোসেন কালিগঞ্জের প্রিজম কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের হয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন বিষয়ে ছয় মাসমেয়াদি কোর্সের শিক্ষার্থী।
ফেসবুকে লাইভে এসে মনির বলেন, ‘আমরা ছাত্রলীগ, যেখানে যাব সেখানেই বুলেট। রোজা থেকে পরীক্ষা দিচ্ছি, গোল্ডেন এ প্লাস পাব। পরীক্ষার খাতায় গ্রুপের জায়গা লিখে দিয়েছি, ‘এমপি আনার গ্রুপ’ (ঝিনাইদহ ৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার)। স্যাররা এ প্লাস না দিলে বোর্ডমোড ভেঙে ফেলবানে।’
শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত চলে লিখিত পরীক্ষা। আর সাড়ে ১১ টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা।
দুপুর ১২টার দিকে নিজের ফেসবুক থেকে লাইভে আসেন ছাত্রলীগ নেতা মনির হোসেন। যে কক্ষ থেকে তিনি লাইভে আসেন, সেখানে ৫০ জন শিক্ষার্থী ছিলেন। ৯ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের ফেসবুক লাইভে মনির হোসেন বলেন, ‘আমাদের পরীক্ষা চলছে, সবাই লিখছে বাংলায়, আমি তো বাংলাই লিখি না, ইংলিশে লিখি। অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল পরীক্ষার হল ফেসবুকে লাইভ দেব। সেই ইচ্ছা আজ পূরণ হলো। ম্যাডামও দেখি আমাকে ভিডিও করছে। স্যাররা ঘুমাচ্ছে।
লাইভে ছাত্রলীগ নেতা মনির বলেন, আমাদের ভিডিও ভাইস চেয়ারম্যান দেখছে, ভাইস চেয়ারম্যান মন্তব্যে লিখেছে, গল্প না করে তোরা খাতায় লেখ। এমপি সাহেবও দেখছেন নাকি, তিনি আর ভাইস চেয়ারম্যান এক মোটরসাইকেলে আছেন।’
লাইভে মনির বলেন, পরীক্ষার হলে লাইভে আছি, আমার প্রাণের সংগঠন কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এ প্লাস তো পাবই, ম্যাডামরা সবই বলে দিচ্ছে।
এদিকে পরীক্ষার হল থেকে এভাবে ফেসবুক লাইভে আসায় এলাকায় সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ফেসবুক থেকে ভিডিওটি সরিয়ে নেন মনির হোসেন।
ভিডিওতে পরীক্ষার কক্ষে দুজন পায়চারি করতে দেখা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাঁদের একজন প্রিজন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শিক্ষক সমির দাস ও অপরজন তাঁর সহযোগী নওরিন আক্তার।
বিষয়টি নিয়ে প্রিজম কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরিচালক বসির আহম্মেদ চন্দন বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানের ১১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছে। যাঁদের মধ্যে ছাত্রলীগ নেতা সুমন একজন। এভাবে পরীক্ষার হল থেকে লাইভ করা ঠিক হয়নি।
লাইভের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা মনির হোসেনের দাবি, ‘আমি তো পরীক্ষা চলাকালে লাইভ করিনি, পরীক্ষা শেষ হলে ছোট একটা লাইভ করেছিলাম।’
ঝিনাইদহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একাডেমিক দায়িত্বে থাকা মাহবুব উল ইসলাম বলেন, দায়িত্বে ছিলেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকেরা। সেই সময়ে লাইভটি করা হয়। তবে এটা খুবই খারাপ কাজ হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিএনএ/ এ আর