বিএনএ ডেস্ক : পবিত্র শবে বরাত, সাপ্তাহিক ছুটি মিলে টানা পাঁচ দিনের লম্বা বিরতিতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও পার্শ্ববর্তী পর্যটন স্পট ভরে গেছে পর্যটকে। এক কথায় ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ পর্যটক এখন কক্সবাজারে। বিপুলসংখ্যক পর্যটকের উপস্থিতিতে পুরো কক্সবাজার এখন পর্যটকের দখলে। এভাবে রোজার আগে হয়তো আর ছুটি মিলবেনা তাই এত লোকের সমাগম লক্ষ্য করা যায়।
গেল ৭ মার্চ মঙ্গলবার ছিল পবিত্র শবেবরাত। শিক্ষাপ্রতিষ্টান বন্ধ টানা তিন দিন। এর মধ্যে যোগ হয়েছে শুক্র-শনিবারের ছুটি। তবে মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার অফিস আদালত খোলা থাকলেও ছিল ঢিলেঢালা ভাব। তাই ব্যবসায়ী চাকুরীজীবী, শিক্ষক সবাই ছুটে এসেছেন কক্সবাজারে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে কেউ কেউ বৃহস্পতিবার ঐচ্ছিক ছুটি নিয়েছেন। কারণ ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের ছুটিতে অনেকে ছুটে আসেন কক্সবাজার। এবার স্বাধীনতা দিবস পড়ে গেছে রমজানে তাই সিয়াম সাধনার এ সময় মানুষ খুববেশী ভ্রমণ করেন না । হয়তো সে কারণে এ সুযোগকে কাজে লাগাতে ভ্রমণ ইচ্ছুকরা। তাদের অনেকেই আগাম বুকিং নিয়েছেন হোটেল, মোটেল ও কটেজগুলোয়। ব্যয়বহুল জেনেও অনেকে আগাম টিকিট কেটেছেন। সেন্ট মার্টিনেও এবার আগাম কিছু বুকিং পেয়েছেন সেখানকার হোটেল ব্যবসায়ীরা।
গতকাল বিকালে কক্সবাজার কলাতলী শহরের সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন ঢাকা থেকে আগত শতাধিক পর্যটক। সকাল থেকে হোটেল-মোটেলে চেষ্টা করেও তারা রুম পাননি।
নুরআলী ও আবদুল মান্নান নামের দুই পর্যটক বলেন, ‘আমরা ঢাকার সাভারের প্রায় ৪০ জনের একটি গ্রুপ বাস ভাড়া নিয়ে কক্সবাজার এসেছি। আসার সময়ও রাস্তায় দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়েছি। আবার এখানে এসে দেখি কোনো হোটেলে রুম নেই।’
বরিশাল থেকে আসা কলিম সরওয়ার রানা বলেন, ‘সকালে বাস থেকে কক্সবাজার কলাতলী ডলফিন মোড়ে নেমেছি। এরপর কলাতলী নামক একটি রেস্তোরাঁয় সকালের নাশতা করতে গিয়ে দেখি সেখানেও পা রাখার জায়গা নেই। পরে পাশের একটি রেস্তোরাঁয় ব্রেকফাস্ট করেছি। এরপর রুম খুঁজতে যে হোটেলেই যাই সবার একটি কথা—রুম খালি নেই। শেষমেষ টমটম চালকের সহায়তায় কলাতলীর ভেতরে আমরা রিসোর্টে পেয়ে গেলাম রুম। তবে ভাড়া একটু বেশী। তবুও রুম পেয়ে আমরা খুশী।
তিনি আরও বলেন, সেন্ট মার্টিনেও পর্যটকদের ভিড় রয়েছে বলে জানা যায়। পরের দিন যাব সেন্টমার্টিন। সেখানে রুমের ক্রাইসিস। তারপর কর্ণফুলী জাহাজের পরিচালক আমাদের যাতায়াতের টিকেটের ব্যবস্থা করে দিলেন, আর সেন্টমার্টিনে একটি রিসোর্ট বুকিং করে দিলেন। তিনি হোটেল ও জাহাজে আমাদের ২০ শতাংশ হারে ডিসকাউন্ট ও দিলেন। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, কয়েকদিন ধরেই দ্বীপে পর্যটক বেড়েছে।
এ দিকে সাতক্ষীরা থেকে এসেছেন শিক্ষা সফরে অধ্যাপক আতিকুর রহমানের নেতৃত্বে ৩৫ জনের একটি দল। রুম না পেয়ে ঘুরতে ঘুরতে গেলেন অভিজাত হোটেল সী প্যালেসে। হোটেল সী প্যালেসের ম্যনেজার আশরাফ জামান বলেন আমার হোটেলে ৫০টি রুম আছে। সব এক সপ্তাহ আগেই বুকিং হয়ে গেছে। অনেক পর্যটক রুমের জন্য আসছেন। অনেককে না করতে হয়েছে। ম্যানেজার তাদের কে পাশের হোটেল ইউনি রিসোর্টে রুমের ব্যবস্থা করে দেন।
কক্সবাজার কলাতলী হোটেল মোটেল জোনের সভাপতি মুকিম খাঁন বলেন,শেষ মৌসুমে প্রচুর পর্যটক পেয়ে তারা খুবই আনন্দিত। পর্যটকদের কোথাও কোন অসুবিধা হলে হেল্পডেক্সে এসে জানানোর সাথে সাথে প্রশাসন ও হোটেল কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সবসময় প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন,ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারীও রয়েছে সব পর্যটন স্পটে। সাপ্তাহিক ছুটি সহ অঘোষিত ৫ দিনের ছুটি ঘিরে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন প্রায় ৩ লাখের ও অধিক পর্যটক । শহরের ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টে কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই।
এ সম্পর্কে ট্যুর অপারেটর সমিতির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘ছুটিতে কক্সবাজারের ৫৫০টি হোটেলের সব বুকিং হয়ে গেছে। অনেক পর্যটক অনলাইনে রুম চাইলেও তাদের দিতে পারছি না। গতকাল কক্সবাজারের লাবণী, সী-গাল, সুগন্ধা, কলাতলী পয়েন্ট থেকে দেড় কিলোমিটার সৈকতজুড়ে পর্যটকের আনাগোনা লক্ষ করা যায়। পর্যটকরা দল বেঁধে সাগরের নীল জলরাশি উপভোগ করছেন। অনেকে আবার সৈকতের বালিয়াড়িতে ঘুরছেন ।
সুগন্ধা পয়েন্টে পর্যটকদের দায়িত্বে নিয়োজিত সেফগার্ড কর্মী সাদেক হোসাইন বলেন, ‘কাল থেকে সমুদ্র সৈকতে পর্যটকের চাপ বেশি, যা সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এত মানুষ সমুদ্র সৈকতে নেমে যায় আমাদের পক্ষে দায়িত্ব পালন কষ্ট হয়ে পড়ে।’
কক্সবাজারে বর্তমানে তিন লাখের বেশি পর্যটক রয়েছে। কমপক্ষে চার হাজার পর্যটক গতকাল সেন্ট মার্টিন গেছেন। পর্যটকদের নিরাপত্তায় সৈকতসহ পর্যটন স্পটগুলোয় তাদের সদস্যরা তত্পর রয়েছে বলে উল্লেখ করেন ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজারের সুপার মো. জিল্লুর রহমান।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘আমরা ২৪ ঘণ্টা মাঠে আছি। যেখানে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে সেখানে অভিযান চলমান রয়েছে। সব মিলিয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তায় সর্বদা প্রস্তুত কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।’
বসন্তের শেষ মৌসুমে পর্যটকরা কক্সবাজারে ছুটে আসছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ও হয়রানি রোধে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে মাঠে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানান কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মুহম্মদ শাহিন ইমরান।
সকালে পাথুরে বীচ ইনানী, পাটোয়ারটেক, হিমছড়ি, দরিয়ানগর গিয়ে দেখি শুধু মানুষ আর মানুষ। সেখানে কথা হয় এক বিদেশি রমনী পর্যটকের সাথে। তার নাম চিত্রানু। বাড়ি ব্রুনাই । দীর্ঘদিন তিনি ঢাকায় একটি চায়না কোম্পানীতে চাকুরী করছেন। একজন বাঙ্গালী যুবক তার গাইড হিসাবে সঙ্গে আছেন। তিনি একটু একটু বাংলা ও জানে। কক্সবাজার এসেছেন প্রথম। পাথুরে বীচ ইনানীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে তিনি অভিভূত। উঠেছেন সেনাবাহিনীর রেষ্টহাউসে।
তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, যতদিন বাংলাদেশে আছি সময় এবং ছুটি পেলে কক্সবাজারে চলে আসবেন।নিরাপত্তা নিয়ে তিনি খুবই সন্তুষ্ট।
ঢাকা থেকে আসা লেখক গবেষক বুদ্ধিজীবী সুনীল কুমার রায় বলেন, পৃথিবীর দীর্ঘতম কক্সবাজার সৈকত বেলা ভূমি সৃষ্টিকর্তার অকৃপণ হাতের নান্দনিক সৃষ্টি। এটি পৃথিবীর অন্য কোন দেশে হলে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পদচারণায় মূখর থাকতো সারা বছর। এ খাতই হতো দেশের মূল অর্থনীতির কেন্দ্র বিন্দু।
বিএনএ/ এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন, ওজি