এনএসইউ প্রতিনিধি: মিয়ানমারের সামরিক শাসন রোহিঙ্গা সংকটের উপর কী প্রভাব ফেলবে তা বিশ্লেষণের জন্যে একটি ওয়েবিনারের আয়োজন করে সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ (সিপিএস)। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়ান ইন্সটিটিউট অফ পলিসি এন্ড গভর্নেন্স (এসআইপিজি) এর অধীনে অবস্থিত সিপিএস এর উদ্যোগে ৮ ফেব্রুয়ারি জুমে এ ওয়েবিনারে আয়োজন করা হয়।
এতে অংশ নেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াৎ হোসেন, সিনিয়র ফেলো, এসআইপিজি, রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল হক, প্রফেসারিয়াল ফেলো, এসআইপিজি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন, ও মালয়েশিয়া থেকে সুলতান জয়নাল আবেদিন ইউনিভার্সিটি এর ফ্যাকাল্টি ড. মাহবুবুল হক। চার দশকেরও বেশি সময় যাবৎ রাষ্ট্রহীন অবস্থায় বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বিষয়টি গভীরভাবে বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করে ২০১৬-২০১৭ সালে বিরাট সংখ্যক রোহিঙ্গার মাতৃভূমি মিয়ানমার ত্যাগের মাধ্যমে। গণহত্যা ও জাতিগোষ্ঠী নিধনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
ওয়েবিনারে বাংলাদেশে ও মালয়েশিয়ায় বসবাসরত রোহিঙ্গাসহ মিয়ানমারে বসবাসরত বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠির সামরিক শাসন বিষয়ে প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হয়। এছাড়া, ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এর প্রভাব, ও পশ্চিমা বিশ্বের দৃঢ় কোন ভুমিকা না নেয়ার বিষয়গুলোও উঠে আসে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন মিয়ানমারে গনতন্ত্রের অবস্থার কথা বলতে গিয়ে জানান, সেখানে গণতন্ত্রের জন্যে লড়াই আসলে গণতন্ত্রের জন্যে নয় কারন সাংবিধানিকভাবেই সামরিক শাসনকে অনুমোদন দেয়া আছে।
রোহিঙ্গা সংকটের উপর মিয়ানমারের সামরিক শাসনের প্রভাব বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে এসআইপিজির সিনিয়র ফেলো ড. সাখাওয়াত হোসেন উল্লেখ করেন, যে মিয়ানমারের সাথে অতীতে কখনো সে দেশের স্টেট কাউন্সিলরের সুসম্পর্ক ছিল না। এ মন্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করে রাষ্ট্রদুত শহীদুল হক জানান যে সে দেশের স্টেট কাউন্সেলর নিজে যেহেতু সামরিক বাহিনী পরিবারের সন্তান, তাই তার সাথে বরাবরই সামরিক বাহিনীর সুসম্পর্ক ছিল। তিনি আরো বলেন অং সান সু চী ও বর্তমান মিয়ানমারের সামরিক জান্তার মধ্যে রোহিঙ্গা বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গিকত আদতে তেমন কোন পার্থক্য নেই। বরং বর্তমান মিলিটারি ক্যু এর পেছনে কোন পরিকল্পিত ছক রয়েছে, যা এখনো প্রকাশ পায়নি।
আঞ্চলিক রাজনৈতিক জোট আসিয়ানের ভূমিকা সম্পর্কে মালয়েশিয়া থেকে অংশ নেয়া ড. মাহবুব মনে করেন, আসিয়ান তার নন-ইন্টারফেয়ারেন্স নীতির কারণে এ বিষযে নিশ্চুপ রয়েছে, যা দু:খজনক। মিয়ানামরের মিলিটারি ক্যু-এর পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশেও যে সরকারিভাবে খুব একটা প্রতিবাদ জানানো হয়েছে, তা নয়। বরং সেসব দেশের সাধারণ মানুষ বিচ্ছিন্নভাবে কিছু প্রতিবাদ জানিয়েছে। পাশাপাশি তিনি মিয়ানমার সম্পর্কে আমাদের সিমিত জ্ঞানের কথাও তুলে ধরেন, যা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের একটি অন্তরায় হিসেবে কাজ করে।
এনএসইউ এর প্রফেসারিয়াল ফেলো রাষ্ট্রদূত শহীদুল হক আইসিজে-তে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া জোরদার করার উপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন এভাবেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের জন্য আমাদের কৌশলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে এবং পরিস্থিতি বুঝে বাংলাদেশের কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
সিপিএস এর সমন্বয়কারী ড. ইশরাত জাকিয়া সুলতানার সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন এসআইপিজি ও সিপিএস এর পরিচালক অধ্যাপক শেখ তৌফিক এম হক। এনএসইউ এর কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউটের পরিচালক ড. বুলবুল সিদ্দিকীর স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হওয়া এ ওয়েবিনারে শিক্ষক, গবেষক ও রোহিঙ্গারা অংশ নেন।
উল্লেখ্য সিপিএস শান্তি প্রতিষ্ঠা বিষয়ক গবেষণা ও এ্যডভোকেসি কার্যক্রম নিয়ে ২০১৯ সাল থেকে কাজ করে আসছে ।
বিএনএ/ মহিউদ্দিন ইবনুল হোসাইন