১৯৫৪ সালের মে মাসে পাকিস্তান-আমেরিকা মিলিটারি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং পরে পাকিস্তান সিয়াটো২৯ ও সেন্টো৩০ বা বাগদান চুক্তিতে যোগদান করে পুরাপুরি আমেরিকার হাতের মুঠোর মধ্যে চলে যায়।
আজ প্রকাশিত হলো পর্ব : ৩৩৭
মোহাম্মদ আলী (বগুড়া) প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে পাকিস্তানকে একটা ব্লকের দিকে নিয়ে গেলেন। দুনিয়া তখন দু’ইটা ব্লকে ভাগ হয়ে পড়েছে। একটা রাশিয়ান ব্লক বা সমাজতান্ত্রিক ব্লক, আর একটা হল আমেরিকান ব্লক যাকে ডেমোক্রেটিক ব্লক বা ধনতন্ত্রবাদী ব্লক বলা যেতে পারে-যদিও মরহুম লিয়াকত আলীর সময় থেকেই পাকিস্তান আমেরিকার দিকে ঝুঁকে পড়েছিল। ১৯৫৪ সালের মে মাসে পাকিস্তান-আমেরিকা মিলিটারি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং পরে পাকিস্তান সিয়াটো২৯ ও সেন্টো৩০ বা বাগদান চুক্তিতে যোগদান করে পুরাপুরি আমেরিকার হাতের মুঠোর মধ্যে চলে যায়। এই দুইটা চুক্তিই রাশিয়া ও চীনের বিরোধী বলে তারা ধরে নিল। চুক্তির মধ্যে যা আছে তা পরিষ্কারভাবে কমিউনিস্টবিরোধী চুক্তি বলা যেতে পারে।
নয়া রাষ্ট্র পাকিস্তানের উচিত ছিল নিরপেক্ষ ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা। আমাদের পক্ষে কারও সাথে শত্রুতা করা উচিত না। সকল রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুভাবে বাস করা আমাদের কর্তব্য। কোনো যুদ্ধ জোটে যোগদান করার কথা আমাদের চিন্তা করাও পাপ। কারণ, আমাদের বিশ্বশান্তি রক্ষার জন্য সাহায্য করা দরকার, দেশের জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যও তা জরুরি।
আমাকে গ্রেফতারের পূর্বেই পাক-আমেরিকান মিলিটারি প্যাক্টের বিরুদ্ধে এক যুক্ত বিবৃতি দেই। আওয়ামী লীগের বৈদেশিক নীতি ছিল স্বাধীন, নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি। আমাদের বিবৃতি খবরের কাগজে বের হবার পরে আমেরিকানরা আমাদের উপরে চটে গেল। হক সাহেবের সাথে এক আমেরিকান সাংবাদিক দেখা করেন এবং তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে এক রিপোর্ট আমেরিকান কাগজে ছাপিয়ে দেন। সেই রিপোর্টটাও মোহাম্মদ আলী তাঁর বিবৃতির মধ্যে উল্লেখ করেন। বিদেশী একজন সাংবাদিকের রিপোর্টের এত দাম মোহাম্মদ আলীর দেওয়ার কারণ, সেই সাংবাদিক ও তিনি দুজনেই আমেরিকান।
পরিকল্পনা : ইয়াসীন হীরা
গ্রন্থনা : সৈয়দ গোলাম নবী
সম্পাদনায় : মনির ফয়সাল
সূত্র: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী, প্রকাশনা- দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, পৃষ্টা নম্বর:২৭৯-২৮০।
আগের পর্ব পড়ুন : বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পর্ব : ৩৩৬