বিএনএ,ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনের এমপি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের গত দশ বছরে আয় বেড়েছে ৫০ গুণ। এর আগেও ছিলেন সাধারণ ব্যবসায়ী। এমপি ও প্রতিমন্ত্রী হয়ে তার আয়-সম্পদ, ব্যাংক জমা, স্থাবর সম্পদ সহ অন্যান্য সম্পদও বেড়েছে, তাঁর সাথে আয় বেড়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে যুগ্ম সচিব হিসেবে কর্মরত স্ত্রী শেফালী বেগমেরও।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০১৪ সালে প্রথমবার এমপি হন শরীফ আহমেদ। সে সময় নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফ নামায় দেখানো হয়েছিল শরীফ আহমেদের সাধারণ ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে দেখানো হয়েছিল ১০ তোলা স্বর্ণ যার মূল্য ৮০ হাজার টাকা। টিভি ফ্রিজের মূল্য ধরা হয়েছিল ২৫ হাজার টাকা। খাট, সোফা, ডাইনিংয়ের মূল্য ধরা হয়েছিল ২৫ হাজার টাকা। এর বাইরে আর কিছু উল্লেখ ছিলো না হলফনামায়।
পাঁচ বছর এমপি থাকার পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে হলফনামা জমা দিয়েছিলেন তা ঘেঁটে দেখা গেছে, তার আয় ও সম্পদ বাড়তে শুরু করে। বাড়ি, এপার্টমেন্ট, দোকান ও অন্যান্য ভাড়া বাবদ বাৎসরিক আয় ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা। তার মৎস্য খামার থেকে বাৎসরিক আয় দেখানো হয় ১৫ লাখ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানত থেকে আয় ২ লাখ ৮৫ হাজার ৬৮০টাকা। এমপি হিসেবে বাৎসরিক সম্মানী ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। দশম সংসদের সময় স্ত্রীর কোনো আয় না দেখানো না হলেও একাদশের সময় দেখানো হয় স্ত্রীর আয় ৬ লাখ ৭২ হাজার ৩৬ টাকা। তার স্ত্রী শেফালী বেগম পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে যুগ্ম সচিব হিসেবে কর্মরত থাকলেও হলফনামায় স্ত্রীর পেশার কথা উল্লেখ করা হয়নি।
এমপি হওয়ার আগে শরীফের হাতে নগদ টাকা ৮ হাজার ৯৭১ টাকা ও ব্যাংকে জমানো টাকা দেখানো হয় ১ কোটি ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৯৫৬ টাকা। আগে গাড়ি না থাকলেও এমপি হওয়ার পর ৫৬ লাখ ৫৩ হাজার টাকা মূল্যের টয়োটা ল্যান্ড ক্রোজার গাড়ি কিনেন। দশম সংসদ নির্বাচনে হলফ নামায় স্ত্রীর নামে ১০ তোলা স্বর্ণ দেখানো হলেও একাদশের সময় তা দেখানো হয়নি। সে সময় নিজের নামে দশ তোলা স্বর্ণ দেখানো হয় যার মূল্য ৮০ হাজার টাকা। টিভি ফ্রিজের মূল্য ধরা হয়েছিল ২৫ হাজার টাকা। খাট সোফা ডাইনিংয়ের মূল্য ধরা হয়েছিল ২৫ হাজার টাকা।
শরীফ প্রথমবার এমপি হওয়ার সময় অকৃষি জমি, আবাসিক-বাণিজ্যক কোনো স্থাপনা না থাকলেও এমপি হওয়ার পর পৈত্রিক সূত্রে অকৃষি জমি পান ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। একই সঙ্গে ২৪ তলা ভিত্তির উপর পাঁচ তলা ডাবল ইউনিটের বাসাও পান। যদিও শরীফের বাবা ভাষা সৈনিক শামছুল হক প্রয়াত হন ২০০৫ সালে। এমপি অবস্থায় অবশ্য তিনি ঋণগ্রস্থ হন। করোনাকালীন ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেড থেকে ঋণ নেন ২০ লাখ ৯২ হাজার ৪০৩ টাকা।
একাদশ জাতীয় সংসদে দ্বিতীয়বার এমপি হওয়ার তিনি প্রথম সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ও পরে গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় দেখানো প্রতিমন্ত্রী শরীফের সম্পদের বিবরণী ঘেঁটে দেখা গেছে, বাড়ি ভাড়া বাবদ বাৎসরিক আয় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। মৎস্য খামারে বছরে তার আয় এক কোটি টাকা। মন্ত্রী হিসেবে সম্মানী ৮ লাখ ২৮ হাজার টাকা। স্ত্রীর বাৎসরিক আয়ও বেড়েছে। এবারের হলফ নামায় স্ত্রীর আয় দেখানো হয়েছে ৯ লাখ ৬০ হাজার ১৩০ টাকা। ব্যাংকে জমাকৃত টাকা থেকে বছরে মুনাফা বাবদ আয় ৮ লাখ ২০ হাজার ৬৩৬ টাকা।
প্রতিমন্ত্রী শরীফের নিজের হাতে নগদ টাকার পরিমাণও বেড়েছে। তার হাতে নগদ টাকা আছে ১১ লাখ ৩৫ হাজার ১২৮ টাকা। গত নির্বাচনের সময় হলফ নামায় স্ত্রীর নগদ কোনো টাকা না থাকলেও এবার স্ত্রীর নামে নগদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমানও বেড়েছে স্বামী-স্ত্রীর। শরীফের ব্যাংকে জমা আছে ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৭ হাজার ৮৩২ টাকা, স্ত্রীর নামে রয়েছে ৭৩ লাখ ১৪ হাজার ৫৫৪ টাকা। এবার তার গাড়িও বদলেছে। ৯২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা মূল্যের টয়োটা ল্যান্ড ক্রোজার গাড়িতে চড়েন এখন। স্ত্রীর নামে কোনো স্বর্ণ দেখানো না হলেও নিজের নামে স্বর্ণ দশ তোলা যার মূল্য ৮০ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। এছাড়া টিভি ফ্রিজের মূল্য ধরা হয়েছিল ২৫ হাজার টাকা। খাট সোফা ডাইনিংয়ের মূল্য ধরা হয়েছিল ২৫ হাজার টাকা।
গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী হয়ে এবার ৭৫ লাখ ২৫ হাজার টাকায় নারায়ণগঞ্জে ক্রয় করেছেন ৩০ শতাংশ জমি। হেবা মূলে ১১৮৩ দশমিক ৬৬ অযুতাংশ জমি পেয়েছেন পৈত্রিক ভাবে। ৬ তলা ভিত্তির উপর ৫ তলা ডাবল ইউনিটের বাসা পেয়েছেন পৈত্রিক সূত্রে। নতুন করে পৈত্রিক সূত্রে ২০টি পুকুর পেয়েছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বাকিতে মৎস্য খাদ্য কিনে তার দেনা দেখানো হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা।
তবে এসব বিষয়ে জানতে গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এর সাথে বারবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
জেলা জনউদ্যোগ এর আহবায়ক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম বলেন, অসামাঞ্জস্য হারে কারো আয় বৃদ্ধি পেলে রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নীতিবাচক ধারণা জন্মায়। এতে রাষ্ট্রের প্রতি মানুষের ভিন্ন একটা মনোভাব তৈরি হয়। আশা করি এসব বিষয়ে সরকার পদক্ষেপ নিলে একটি গোষ্ঠী নিজেদের পকেট ভারী করা আগে অন্তত তাদের মধ্যে ভয় কাজ করবে।
বিএনএ/ হামিমুর রহমান, ওজি